ইন্টারভিউয়ে ভালো পারফর্ম করা ও আত্মবিশ্বাসের সাথে ইন্টারভিউ দেওয়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখে প্রস্তুতি। ইন্টারভিউয়ে কী ধরনের প্রশ্ন করা হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা নিয়ে সে হিসেবে প্রস্তুতি নিলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সেই প্রস্তুতিতে সাহায্য করার উদ্দেশ্য নিয়েই এই ‘গাইড’টি লেখা।
প্রশ্ন ১ঃ আপনার ভুলের কারণে যদি কোনো প্রজেক্টের কাজ পিছিয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে আপনি কী করবেন?
একটি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট সময়মত শেষ করতে প্রত্যেকটা কাজই গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো একটি কাজও যদি ঠিক সময়ে শেষ না হয়, তার দায়িত্ব ইঞ্জিনিয়ারকেই নিতে হয়।
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় পূর্ববর্তী যে প্রজেক্টগুলো আপনি সময় ও বাজেট অনুযায়ী শেষ করেছেন সেই উদাহরণগুলো দিয়ে শুরু করুন। উল্লেখ করুন যে এই অভিজ্ঞতাগুলোতেও আপনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু সমস্যার মুখে তার সমাধান বের করতে পারা প্রজেক্ট প্ল্যানিং-এরই একটি অংশ।
এই প্রশ্নের উত্তরের মধ্য দিয়ে ইন্টারভিউয়ারকে বুঝিয়ে দিন যে কাজ সম্পন্ন হতে দেরি হওয়ার মতো সমস্যাগুলোর জন্য আপনি সবসময় প্রস্তুত থাকেন এবং যে কোনো পরিস্থিতি পরিকল্পিতভাবে সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন।
প্রশ্ন ২ঃ ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে আপনার সবচেয়ে পছন্দের ও সবচেয়ে অপছন্দের জিনিসগুলো কী?
আগের প্রশ্নের চেয়ে এই প্রশ্নটি আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার দিকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয় এবং এই প্রশ্নের উত্তরে একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনি কোন ধরনের কাজ করতে ভালোবাসেন তা নিয়ে কথা বলার সুযোগ আরও বেশি।
এই প্রশ্নের উত্তর ইন্ডাস্ট্রি ভেদে যেমন আলাদা, তেমনি একেকজন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও হবে একেক রকম। আপনার নিয়মিত কাজগুলোর মধ্যে কোন কাজটি করতে সবচেয়ে ভালো লাগে? আপনি কি প্রডাক্টগুলো টেস্ট করতে বেশি পছন্দ করেন, নাকি ক্লায়েন্ট বা ম্যানেজারের কাছে প্রজেক্টের পরিকল্পনা উপস্থাপন করাই আপনার সবচেয়ে পছন্দের কাজ? উত্তর যেটাই হোক, নিজের প্রফেশনের প্রতি আপনার আগ্রহ ও ডেডিকেশনকে তুলে ধরার এটাই সুযোগ!
আর অপছন্দের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে যতটা সম্ভব যথাযথ উত্তর দেওয়াই ভালো। সবার প্রফেশনেই এমন দু-একটা কাজ থাকে, যা তার করতে খুব একটা ভালো লাগে না। তার মানে এটা নয় যে আপনি এই ক্যারিয়ারের জন্য উপযুক্ত না। তবে সমস্যার কথা বলার পর, কীভাবে আপনি তা সমাধান করার চেষ্টা করছেন, সেটা ইন্টারভিউয়ারকে জানিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
উদাহরণস্বরূপ, হয়তো টেকনিক্যাল ডকুমেন্ট লিখতে আপনার তেমন একটা ভালো লাগে না। কিন্তু প্রজেক্টের প্রয়োজনে প্রায়ই আপনার বিভিন্ন ডকুমেন্ট লিখতে হয়। অপরদিকে, প্রজেক্টের পরিকল্পনা করতে এবং ডায়াগ্রাম, গ্রাফ ইত্যাদি তৈরি করতে আপনি ভালোবাসেন, যা ডকুমেন্টেশনের প্রক্রিয়াটাকে তুলনামূলকভাবে আনন্দময় করে তোলে।
প্রশ্ন ৩ঃ গত ৬ মাসে আপনি নতুন কী কী স্কিল শিখেছেন?
এই প্রশ্নটা শুধু ইঞ্জিনিয়ারিং নয়, বরং যে কোনো চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্যই বেশ স্বাভাবিক। কারণ যে ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করেন না কেন, প্রতিনিয়তই তাতে নতুন নতুন টেকনোলজির প্রচলন হচ্ছে এবং প্রতিদিনই কোনো না কোনো নতুন তথ্য মানুষের সামনে আসছে।
একজন ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি পাওয়ার পরেও শেখার আগ্রহ থাকা এবং নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর পেছনে সময় ব্যয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশ্নটি একই সাথে আপনার স্কিল এবং নতুন কিছু শেখার আগ্রহকে ইন্টারভিউয়ারের সামনে উপস্থাপন করার সুযোগ করে দেবে।
আপনার অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত স্কিলগুলো ইন্টারভিউয়ারকে জানিয়ে দিন, তা হতে পারে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ আপনার দক্ষতা বাড়ানোর মতো কিছু অথবা হতে পারে নতুন কোনো টেকনিক্যাল স্কিল শেখা। স্কিল যেটাই হোক না কেন, আপনি যে নিজের দক্ষতার বিকাশে আগ্রহী তা বোঝাতে পারাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন ৪ঃ নিজের কোন অর্জনটি নিয়ে আপনি সবচেয়ে গর্বিত?
এটি আরেকটি সাধারণ প্রশ্ন, যা সব ইন্ডাস্ট্রির ইন্টারভিউয়েই করা হয়, কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি ভেদে উত্তর হয় একেবারে আলাদা। আপনার প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা, এর আগে কী ধরনের কাজ করতেন – এ সব কিছুর ওপর নির্ভর করছে যে আপনার উত্তর কী হবে।
ইন্টারভিউয়ের আগে কিছুটা সময় নিয়ে আপনার ক্যারিয়ার বা শিক্ষা জীবনের ইতিবাচক ঘটনাগুলোর কথা ভাবুন। এর মধ্যে কোন অর্জনটি নিয়ে আপনি সবচেয়ে বেশি গর্ব বোধ করেন? এবং কেন? সাফল্যের বর্ণনা দেওয়ার মাধ্যমে চেষ্টা করুন, আপনার যোগ্যতা গুলোর দিকে আলোকপাত করতে।
প্রশ্ন ৫ঃ আপনার ধারণা মতে, এই কোম্পানির কী ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়?
একটি প্রজেক্ট পরিচালনায় ইঞ্জিনিয়ারদেরকে নিয়মিত অনেক ধরনের কাজ করতে হয়। রিসার্চ করা, ডেভেলপ করা, ডিজাইনিং এবং কন্সট্রাকশনসহ আরও অনেক কিছু তাঁদের কাজের অংশ। এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে অবশ্যই ভেবে দেখুন আপনি নিজের স্কিল ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে কী কী সমস্যা সমাধান করতে পারবেন, আপনার কাজ থেকে কোম্পানি কীভাবে লাভবান হবে?
তবে এই প্রশ্নের উত্তর ঠিকভাবে দিতে নিজের পাশাপাশি, কোম্পানি সম্পর্কে জানাও জরুরি। আপনি যে কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, তার প্রজেক্ট ও ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে আগে থেকে পড়াশোনা করা ইন্টারভিউ প্রস্তুতির একটা বড় অংশ।
কোম্পানির ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলো ঘাটার পাশাপাশি সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে তাদের নিয়ে বের হওয়া প্রেস রিলিজগুলোও খুঁজে বের করুন। কোম্পানির কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানলে আপনার স্কিল ব্যবহার করে, কোম্পানির কোন সমস্যাগুলো সমাধানে সাহায্য করতে পারবেন, সে সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন।
প্রশ্ন ৬ঃ আপনি কী কী সফটওয়্যার ব্যবহারে পারদর্শী?
ইঞ্জিনিয়ারদেরকে সাধারণত বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে কাজ করতে হয়। তাই যে কোনো কোম্পানিই আশা করে চাকরি প্রার্থীর মাইক্রোসফট অফিস ও SolidWorks এর মতো সফটওয়্যারগুলোর ব্যাপারে আইডিয়া থাকবে। আপনি এ পর্যন্ত কী কী সফটওয়্যার ব্যবহার করেছেন বা করতে পারেন তার একটি তালিকা বলে ফেলুন এই প্রশ্নের উত্তরে।
প্রশ্ন ৭ঃ এই চাকরি থেকে আপনি কী রকম স্যালারি আশা করছেন?
এই প্রশ্নের উত্তর আপনি কীভাবে দেবেন তা আপনার অভিজ্ঞতা ও কাজের ধরনের ওপর নির্ভর করছে। এটা যদি আপনার প্রথম চাকরি হয়, তাহলে এই ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার পজিশনের জন্য কী রকম বেতন দেওয়া হয় তা নিয়ে রিসার্চ করতে ভুলবেন না। ইঞ্জিনিয়ারিং একটি বৈচিত্র্যময় পেশা এবং একজন নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারের বেতন একজন হার্ডওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বেতন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তাই ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে ধারণা থাকা এই প্রশ্নের উত্তরে খুব জরুরি।
প্রশ্ন ৮ঃ আপনি কি এর আগে এমন কোনো ক্লায়েন্ট, এমপ্লয়ার বা এমপ্লয়ির সাথে কাজ করেছেন যার সাথে কাজ করাটা একটু কঠিন? এ ধরনের পরিস্থিতিতে আপনি কী করেন?
ইঞ্জিনিয়ারিং পেশা আপনাকে অনেক ধরনের উত্তেজনাময় প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ করে দেবে। মেকানিক্যাল পার্টস পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে প্রডাক্টের সাপ্লাইয়ারদের সাথে কথাবার্তা বলা পর্যন্ত, অনেক ক্ষেত্রেই আপনাকে নানান রকম মানুষের সাথে কথা বলতে হবে, কাজ করতে হবে। ক্লায়েন্ট বা কলিগের সাথে দ্বিমত হওয়া কোনো অস্বাভাবিক বিষয় না, কর্মক্ষেত্রে প্রায় সবাইকেই এরকম পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
এই প্রশ্নের উত্তরটা একটু বিস্তারিতভাবে দেওয়াই ভালো। দ্বিমতটা কী ছিল এবং আপনি কীভাবে সেই সমস্যার সমাধান করেছেন তা যতটা সম্ভব যথাযথভাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করুন। কঠিন পরিস্থিতিতেও আপনি চাকরিজীবী হিসেবে নিজের দায়িত্বকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন – ও এর ওপর আলোকপাত করার চেষ্টা করুন। এতে করে ইন্টারভিউয়ার বুঝতে পারবেন যে একটা টিমের অংশ হিসেবে আপনি কতোটা কার্যকরী।
প্রশ্ন ৯ঃ আপনার কাজের যদি কোনো নেতিবাচক ফিডব্যাক দেওয়া হয়, সেক্ষেত্রে আপনি কী করেন?
কর্মক্ষেত্রে সবাইকেই কোনো না কোনো সময় নেতিবাচক ফিডব্যাকের মুখোমুখি হতে হয়। সেই সময়ে এই ফিডব্যাককে খারাপভাবে না নিয়ে বরং নিজের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বাড়ানোর সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত। কেননা, ভুলের মাধ্যমেই সবাই নতুন জিনিস শেখে।
তাই এই প্রশ্নের উত্তরে ইন্টারভিউয়ারকে জানানোর চেষ্টা করুন যে নেতিবাচক কোনো ফিডব্যাক পেলে তা ব্যক্তিগতভাবে না নিয়ে বরং পরবর্তীতে আপনি নিজের কাজকে সে অনুযায়ী আরও মানসম্পন্ন করে তোলেন, ফিডব্যাক থেকে শেখার চেষ্টা করেন।
এর আগে কি এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে যেখানে আপনি কোনো প্রজেক্ট তাড়াহুড়ো করে সম্পন্ন করতে গিয়ে ভুল করে ফেলেছেন এবং আপনার ম্যানেজার সেই ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন? অথবা হয়তো শিক্ষা জীবনে কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে নেতিবাচক ফিডব্যাক পেয়েছেন?
সেই সময়ে আপনি কীভাবে নিজের ভুল বুঝতে পেরে তা সমাধান করেছেন এবং পরবর্তীতে একই ভুল করা থেকে বিরত থেকেছেন, সে বিষয়ে ইন্টারভিউয়ারকে বিস্তারিত জানান। এতে করে ব্যক্তি এবং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনার বিকাশ সম্পর্কে ইন্টারভিউয়ার জানতে পারবেন।
প্রশ্ন ১০ঃ আজ থেকে পাঁচ বছর পর নিজেকে কোন জায়গায় দেখতে চান?
খুবই কমন একটা প্রশ্ন যা প্রায়ই ইন্টারভিউয়ের শেষের দিকে জিজ্ঞেস করা হয়। এবং এটি হতে পারে ইন্টারভিউয়ারের মনে ছাপ ফেলার শেষ সুযোগ।
আপনার আকাঙ্ক্ষা ও ক্যারিয়ার গোল সম্পর্কে ইন্টারভিউয়ারকে বলুন। আপনি কোন সেক্টরে স্পেশালাইজেশন করতে চান তা জানান। হয়তো আপনি একজন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু আপনার ইচ্ছা স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে কাজ করা, যেখানে আপনি রোগ-ব্যধির ডায়াগনোসিস, চিকিৎসা ও ম্যানেজমেন্টে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারবেন। অথবা হয়তো আপনি একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং এই সেক্টরেই আরও উন্নতি করে বড় বড় প্রজেক্ট ও প্ল্যান্টগুলোতে কাজ করতে চান।
আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা যাই হোক না কেন, ইঞ্জিনিয়ারিং প্রফেশন আপনাকে অনেক সুযোগ দেবে। আর একই সাথে থাকবে অনেক দায়িত্বও। তবে নিজের কাজকে ভালবাসলে এই কঠোর পরিশ্রমও আনন্দদায়ক মনে হবে, সাথে ভালো ফলাফলও পেয়ে যাবেন।
উপরের এই ১০ টি প্রশ্ন ইঞ্জিনিয়ারিং পজিশনে চাকরির ইন্টারভিউয়ে প্রায়ই জিজ্ঞেস করা হয়। তাই ইঞ্জিনিয়ারিং যদি হয় আপনার প্যাশন, ইন্টারভিউ শুরুর আগেই প্রশ্নগুলোর উত্তর কীভাবে দেবেন তা গুছিয়ে নিন! কারণ যে কোনো কাজে সফল হতে প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই।