রিমোট চাকরি মানে শুধু ঘুম থেকে উঠে কোনোমতে ল্যাপটপের সামনে গিয়ে আট ঘণ্টা বসে থাকা না। এই ধরনের চাকরিতে নিজের উদ্দীপনা বজায় রাখতে এবং কাজের মান ধরে রাখতে দরকার প্রচুর শৃঙ্খলা, মনোযোগ ও নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখার ক্ষমতা। কাজের প্রতি আগ্রহের পাশাপাশি এই ক্ষেত্রে থাকতে হয় দেশবিদেশের ক্লায়েন্টদের সাথে অনলাইনে যোগাযোগ রক্ষা করার দক্ষতা।
রিমোট চাকরির যেভাবে দ্রুত উত্থান হচ্ছে তাতে খুব শীঘ্রই আপনিও এরকম একটি সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন। তাই রিমোট ইন্টারভিউয়ে সাধারণত কী কী প্রশ্ন করা হয়ে থাকে আগে থেকেই তার জেনে প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। সেই প্রস্তুতির সুবিধার্থেই আজকের লিস্টে থাকছে ১০টি কমন রিমোট ইন্টারভিউ প্রশ্ন এবং তাদের যথাযথ উত্তর দেওয়ার উপায়।
১। আপনি কি এর আগে কখনো বাসা থেকে কাজ করেছেন?
রিমোট কাজকে আপনি কতোটা গুরুত্ব দেবেন তা বোঝার জন্যই সাধারণত এই প্রশ্ন করা হয়। যার বাসা থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার এ ধরনের পজিশনে ভালো পারফর্ম করার সম্ভাবনা বেশি।
আপনার যদি রিমোট কাজের অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে সেই কাজের সাফল্য সম্পর্কে ইন্টারভিউয়ারকে বিস্তারিত বলুন। আর যদি না থেকে থাকে তাতেও ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ইন্টারভিউয়ারকে জানিয়ে দিন যে আপনার রিমোট কাজের অভিজ্ঞতা নেই, কিন্তু আপনি পরিশ্রমী এবং গুছিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন। তাই বাসা থেকে কাজ করতে আপনার অসুবিধা হবে না। চাইলে শিক্ষাজীবনের থিসিস বা প্রজেক্টের উদাহরণও দিতে পারেন যার জন্য আপনার বাসা থেকে কাজ করতে হয়েছে।
২। যোগাযোগ ও collaboration এর জন্য এর আগে কী কী টুল ব্যবহার করেছেন?
কার্যকরভাবে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারা রিমোট কাজের জন্য খুব জরুরি একটা স্কিল। টিমের অন্যদের সাথে কোল্যাবোরেট করতে এবং ক্লায়েন্টদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রফেশনালিজম ধরে রাখতে আপনাকে বিভিন্ন টুল ব্যবহার করতে হবে।
Zoom, Microsoft Team, Google Meet, Trello এবং Asana এর মতো টুলগুলো আমরা সবাই কমবেশি ব্যবহার করেছি। তাই এগুলো আপনি কী কাজে ব্যবহার করেছেন এবং টিমের সাথে যোগাযোগ করতে তা কীভাবে আপনাকে সাহায্য করেছে তা উল্লেখ করুন এই প্রশ্নের উত্তরে।
৩। টিমের সাথে ঠিকমতো যোগাযোগ রাখবেন কীভাবে?
যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাসা থেকে কাজ করাটা অনেক সময়ই বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কখনো ইমেইলে বিষয়টা পরিষ্কারভাবে বোঝানো যায় না, আবার কখনো ইন্সট্যান্ট ম্যাসেজিং-এ বড় কোনো ফাইল পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ে।
কার্যকরী যোগাযোগ বজায় রাখতে আপনি প্রত্যেক প্রজেক্টের শুরুতে কী কী ধাপ অনুসরণ করেন তা বিস্তারিতভাবে উত্তর দিন। আপনি কি Trello তে কাজের তালিকাসহ টাস্ক তৈরি করে তা টিমের সবার সাথে শেয়ার করে দেন? অথবা Google Docs এর ডকুমেন্ট শেয়ার করার মাধ্যমে টিমের সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেন?
৪। বাসা থেকে কাজ করার সময় নিজেকে অনুপ্রাণিত রাখেন কীভাবে?
সবার বাসায়ই এমন অনেক কিছু থাকে যা কাজ থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারে। তা হতে পারে পরিবারের কোনো সদস্য, অথবা হতে পারে আপনার মোবাইল ফোন। কাজ ঠিকমতো হচ্ছে কিনা সেদিকে নজর রাখার মতো কেউ নেই বলে অনেক সময় কাজ থেকে সহজেই মনোযোগ সরে যায়। তবে বেশির ভাগ কোম্পানিই রিমোট চাকরিজীবীদের কাজ ট্র্যাক করতে মনিটরিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে থাকে।
কাজের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখতে আপনি কী কী পন্থা অবলম্বন করেন তা জানিয়ে দিন এই প্রশ্নের উত্তরে। সেটা হতে পারে পমোডোরো মেথডের মতো কোনো সময় পরিমাপের পদ্ধতি ব্যবহার করা। অথবা হতে পারে মোবাইল ফোন নাগালের বাইরে রেখে কাজ করতে বসা। মোট কথা, আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে আপনি বাসায় থেকেও কাজের সময় শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সক্ষম।
৫। বাসা থেকে কাজ করার সময়ে প্রজেক্টের সাফল্য নিশ্চিত করবেন কীভাবে?
প্রজেক্ট সময়মতো ও সঠিকভাবে শেষ করা যে কোনো ধরনের চাকরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সেটা বাসা থেকেই হোক বা অফিস থেকে।
আপনি যে বাসায় থাকা অবস্থায়ও প্রজেক্ট সম্পন্ন করতে সক্ষম তা বোঝাতে এই প্রশ্নের উত্তরে বলুন যে আপনি প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে প্রতিটি কাজ পুরোপুরিভাবে বুঝে নেবেন এবং প্রজেক্টের প্রতিটি ধাপের জন্য ডেডলাইন তৈরি করে সে অনুযায়ী কাজ করবেন।
৬। আপনি পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে কতটা পারদর্শী?
পরিবর্তন দেখে ঘাবড়ে না যাওয়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা যা সবারই কাজে লাগে। তবে বাসা থেকে কাজ করার ক্ষেত্রে এর প্রাধান্য একটু বেশি। কারণ অনেক সময়ই টিমের সদস্যরা ভিন্ন ভিন্ন শিডিউলে কাজ করে। সময়ের পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিয়ে কাজ করার দক্ষতা অবশ্যই থাকতে হবে।
আপনি এর আগে যদি এমন কোনো পরিস্থিতিতে পড়ে থাকেন যেখানে নিজের দৈনন্দিন কাজের বাইরেও আপনাকে বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে, এই প্রশ্নের উত্তরে সেই ঘটনার বিবৃতি ইন্টারভিউয়ারের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
৭। কর্মক্ষেত্রে সমস্যা বা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করেন কীভাবে?
বাসা থেকে কাজ করতে গেলে নানারকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে এবং বেশির ভাগ সময় সেটা নিজের উদ্যোগেই সমাধান করতে হবে। ইন্টারভিউয়ের সময় চাকরিদাতা অবশ্যই জানতে চাইবেন আপনি সেই সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারদর্শী কিনা।
এ ধরনের আচরণগত প্রশ্নের উত্তরে কোনো বাস্তব উদাহরণ ব্যবহার করাই সবচেয়ে ভালো। চাকরি অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময়ে আমরা সবাই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি। তেমনি কোনো বড় সমস্যা আপনি কীভাবে সমাধান করেছেন সেই উদাহরণ ব্যবহার করে এই প্রশ্নের উত্তর দিন।
৮। আপনি বাসা থেকে কাজ করতে চান কেন?
এই প্রশ্ন করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আপনি কাজের সময় ফাঁকি দিতে চান নাকি বাসার পরিবেশে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তা জানা। অনেকের ক্ষেত্রে বাসা থেকে কাজ করার প্রধান কারণ হতে পারে পরিবারের দেখাশোনা করতে পারা, যাতে কাজের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা থাকে।
তাই এই প্রশ্নের উত্তরে নিজের প্রফেশনাল মনোভাবকে উপস্থাপন করুন। ব্যক্তিগত সুবিধার কথা না বলে বরং আপনি বাসায় কোনোরকম কোলাহল ছাড়া মনোযোগের সাথে কাজ করতে পারেন এবং নিজের ব্যক্তিগত জায়গায় কাজ করতে স্বাছন্দ্য বোধ করেন তা বলুন। এবং একই সাথে এটাও উল্লেখ করুন যে রিমোট কাজ করার পারদর্শীতা আপনাকে নিজের এলাকার বাইরেও যে কোনো জায়গার ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করার সুযোগ দেবে।
৯। অফিস আওয়ার শেষে কাজ থেকে নিজেকে আলাদা রাখেন কীভাবে?
বাসার পরিবেশে প্রতিদিন কাজ করলে কাজ থেকে নিজেকে আলাদা করে পরিবারকে সময় দেওয়াটা অনেকের জন্যই কঠিন হয়ে পড়ে। যা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। ফলাফল হিসেবে অনেক সময় কাজের প্রতি অনাগ্রহও দেখা দেয়।
একজন চাকরিজীবী হিসেবে এই প্রশ্নের উত্তর হওয়া উচিত একদম সোজা। শুধু অফিসের জন্য নির্ধারিত সময়ে কাজ করা এবং একটি ডেস্ক বা বাসার আলাদা একটি ঘর শুধু কাজের জন্যই ব্যবহার করার মাধ্যমে বার্নআউট থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
১০। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর সাধারণত কী করেন?
আপাতদৃষ্টিতে প্রশ্নটা একটু অদ্ভুত মনে হলেও চাকরিদাতা জানতে চাইতে পারেন যে যাতায়াতের প্রয়োজন না থাকায় বাড়তি সময়টাকে আপনি কীভাবে ব্যবহার করছেন।
কাজ শুরুর আগের সময়টুকু আপনি কীভাবে পাড় করেন তা নিয়ে কথা বলুন। ঘুম থেকে উঠে ব্যায়াম করেন বা বাইরে হাঁটতে যান? নাকি বই অথবা খবর পড়ে সময় কাটান? এ ধরনের উদাহরণ আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ইন্টারভিউয়ারকে সঠিক ধারণা দেবে এবং আপনি যে নিজের জন্য সময় দেওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন তা বুঝতে সাহায্য করবে।
এসব প্রশ্নের পাশাপাশি আপনি যে ইন্ডাস্ট্রি বা পজিশনের জন্য আবেদন করেছেন সে সম্পর্কিত প্রশ্নোত্তরের প্রস্তুতি নিতেও ভুলবেন না। কারণ একটি রিমোট চাকরির জন্য বাসা থেকে কাজ করতে পারার দক্ষতা যেমন জরুরি, সেই চাকরির জন্য দরকারি যোগ্যতা থাকাও আবশ্যক।