আপনি কি বেশ কিছুদিন ধরে চাকরির জন্য বিভিন্ন কোম্পানিতে আবেদন পাঠিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু কোনো কোম্পানি থেকেই ডাক পাচ্ছেন না? হতাশায় পড়ে কি এবার আবেদন করা বন্ধ করার কথা ভাবছেন? নাকি আবারও একইভাবে একগাদা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির জন্য অ্যাপলিকেশন তৈরি করছেন? ভাবছেন, লেগে থাকলে একসময় তো সুযোগ পেয়েই যাবেন?
কিন্তু না, শুধুমাত্র ধৈর্য্য ধরে একের পর এক চাকরির আবেদন পাঠাতে থাকলেই সুযোগ আপনার হাতে এসে ধরা দেবে না। একটু সময় নিয়ে যাচাই বাছাই করে কেনো আপনার চাকরি হচ্ছে না তা বুঝতে হবে। যত তাড়াতাড়ি আপনি আসল সমস্যাটা ধরতে পারবেন এবং তার সমাধান করতে পারবেন, আপনার ক্যারিয়ারের ভবিষ্যতের জন্য ততই ভালো।
তাহলে চলুন জেনে নেই কী কী সমস্যার কারণে আপনার আবেদন বার বার বাতিল হয়ে যেতে পারে এবং এই পরিস্থিতিতে আপনার কী করণীয়।
ইন্টারভিউয়ে ডাক পাচ্ছেন না
১। আপনার সিভি আবেদনকৃত চাকরির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না
অনেকগুলো অ্যাপলিকেশন থেকে যদি মাত্র কয়েকটা কোম্পানি আপনাকে ইন্টারভিউ দিতে ডেকে থাকে, তার সম্ভাব্য একটা কারণ হতে পারে আপনি একই সিভি এবং কভার লেটার সবাইকে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু চাকরির প্রয়োজন অনুযায়ী নিজের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাকে সিভিতে ভিন্ন ভিন্ন ভাবে উপস্থাপন করা খুবই জরুরি।
চাকরিদাতারা চাকরির বিবরণীর সাথে মিলে যায় এমন ব্যক্তিদেরই খোঁজেন। এবং একই পদের জন্য যেহেতু হাজার হাজার সিভি জমা হয়, চাকরিটির সাথে আপনার যোগ্যতার সামঞ্জস্যতা আপনি যতো পরিষ্কারভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন ততো ভালো। প্রথম নজরেই আপনার সিভিকে উপযুক্ত মনে না হলে দ্বিতীয়বার তা খতিয়ে দেখার মতো সময় চাকরিদাতাদের হাতে থাকে না।
ক্যারিয়ারের শুরুতে আমরা অনেকেই বেশ কিছু চাকরির জন্য আবেদন করে থাকি। প্রতিটি চাকরিতে সিভি জমা দেওয়ার আগে সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির বিবরণীর সাথে সিভিকে মিলিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা আপনার ইন্টারভিউয়ের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেবে। কিন্তু প্রত্যেক আবেদনের সময় যদি সম্ভব নাও হয়, অন্তত প্রতি ধরনের আবেদনের জন্য আলাদা আলাদা সিভি তৈরি করুন। অর্থাৎ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার পদের জন্য একটি সিভি, আবার প্রজেক্ট ম্যানেজার পদের জন্য ভিন্ন সিভি হওয়া উচিত।
২। আপনার সিভির ফরম্যাট ঠিক নেই
সিভি এবং কভার লেটার ঠিকঠাক করার পরেও কি আপনাকে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হচ্ছে না? এর কারণ হতে পারে আপনার সিভির ফরম্যাট। অনলাইন অ্যাপলিকেশনের ক্ষেত্রে সাধারণত চাকরিদাতাদের হাতে পৌঁছানোর আগে সিভিগুলো কোনো অ্যাপ্লিকেন্ট ট্র্যাকিং সিস্টেমের মাধ্যমে ফিল্টার করা হয়। সিভির ফরম্যাট যদি এই এটিএস-এর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে খুব সম্ভব আপনার সিভি চাকরিদাতা কখনো খুলেই দেখেন নি।
এটিএস আপনার সিভি ঠিকভাবে পড়তে পারছে তা নিশ্চিত করতে আপনার করণীয় হলোঃ
• তথ্যের সাথে সম্পর্কিত কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন। চাকরিদাতারা প্রায়ই চাকরির বিবরণীতে দেওয়া শব্দগুলো ব্যবহার করে সিভি সার্চ বা ফিল্টার করেন। তাই সিভি লেখার সময় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে সেই একই রকম ভাষা ব্যবহার করে আপনার দক্ষতা উল্লেখ করুন।
• বিভিন্ন অংশের শিরোনাম হিসেবে প্রচলিত শব্দ যেমন “Experience” বা “Education” ইত্যাদি ব্যবহার করুন।
৩। আপনি ভুল চাকরিতে আবেদন করছেন
আপনি যে চাকরির জন্য আবেদন করছেন তা করার মতো দক্ষতা কি আপনার সত্যিই আছে? চাকরির বিজ্ঞপ্তি আবারও ভালোভাবে পড়ুন এবং ভেবে দেখুন এই কাজের জন্য আপনি যোগ্য কিনা।
নিজের যোগ্যতা যাচাই করতে গিয়ে একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। আপনার যোগ্যতা যেমন কম হতে পারে, তেমনি বেশিও হতে পারে। কাজ করার অভিজ্ঞতা এবং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি অ্যাকাডেমিক যোগ্যতা নিয়ে যদি আপনি এন্ট্রি-লেভেল চাকরিতে আবেদন করেন, সেক্ষেত্রেও আপনার ইন্টারভিউয়ে ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে। চাকরিদাতারা যেমন অযোগ্য ব্যক্তিকে চাকরি দিতে চান না, তেমনি অতি-যোগ্য ব্যক্তিকেও দিতে চান না।
৪। আপনি যথেষ্ট চাকরিতে আবেদন করছেন না
এমন অনেক ব্যক্তিই আছেন যারা চাকরির সন্ধান করতে গিয়ে শুধুমাত্র তাঁদের ‘আদর্শ’ কোম্পানি বা পদের জন্যই আবেদন করেন। হ্যাঁ, আপনি যে কোম্পানিতে কাজ করবেন তা আপনার পছন্দসই হওয়া উচিত এবং কোথায় কাজ করতে চান না তা বেছে নেওয়ার অধিকার অবশ্যই আপনার আছে। কিন্তু ক্যারিয়ারের শুরুতেই চাকরি খুঁজতে গিয়ে খুব বেশি খুঁতখুঁতে হওয়া সুবিধাজনক নয়। আপনি যদি যথেষ্ট জায়গায় আবেদন না করে হঠাৎ দু’-একটা পদে আবেদন করেন, তাতে আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
৫। চাকরির সন্ধানের ব্যাপারে আপনি কারও সাথে কথা বলছেন না
আপনি সম্ভবত ইতিমধ্যেই জানেন যে চাকরির খোঁজে নেটওয়ার্কিং-এর ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যে কোম্পানিতে চাকরির আবেদন করছেন সেখানে যদি পরিচিত কেউ থাকে তাহলে তার রেফারেন্সসহ অ্যাপ্লিকেশন পাঠানো অথবা অন্য কোনোভাবে তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যগুলোর সদ্ব্যবহার করা আপনার ইন্টারভিউয়ের সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়াতে পারে।
এ ধরনের সুবিধা পাওয়ার জন্য যতো বেশি সম্ভব মানুষকে আপনার সন্ধানের ব্যাপারে জানানো জরুরি। চাকরিজীবনের বাইরের কোনো ইভেন্টে অথবা ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই ব্যাপারে আলোচনা করুন। কারণ যে কোনো সময়ে আপনার পরিচিত বা তাঁদের পরিচিত কারও থেকে সাহায্য পাওয়ার সুযোগ চলে আসতে পারে।
প্রথম রাউন্ড বা ভার্চুয়াল ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, কিন্তু পরবর্তী পর্যায়ে যেতে পারছেন না
৬। আপনি ভার্চুয়াল ইন্টারভিউয়ের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত না
ভার্চুয়াল ইন্টারভিউ সাধারণত অনেকটা অনানুষ্ঠানিক ধরনের হয়ে থাকে। কিন্তু যতোই সাদামাটা হোক, ইন্টারভিউ ইন্টারভিউই। তাই আর সব ইন্টারভিউয়ের মতো এর জন্যও প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।
যে কোম্পানিতে আবেদন করছেন তার সম্পর্কে বিস্তারিত জানা, নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে দু’-তিন লাইনে কীভাবে উপস্থাপন করবেন তা প্রস্তুত করে রাখা থেকে শুরু করে আপনি বেতন হিসেবে কতো টাকা আশা করছেন তা ভেবে রাখা পর্যন্ত সব দিক থেকেই প্রস্তুত থাকা দরকার। অনেক সময় এই প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সময়ও পাবেন না। তাই সবসময়ই এ ধরনের কথোপকথনের জন্য যতোটা সম্ভব প্রস্তুত থাকুন।
৭। আপনি যে কোম্পানিতে আবেদন করছেন তার ব্যাপারে আপনি যথেষ্ট জানেন না
অনেকেই ইন্টারভিউ দেওয়ার আগে কোম্পানির ব্যাপারে রিসার্চ করার কথা ভুলে যান। ঠিকমতো কাজ করতে পারলেই তো হলো, কোম্পানির সিইও-এর নাম জানা না জানায় কী আসে যায়!
যে কোনো কোম্পানি আপনাকে চাকরির অফার দেওয়ার আগে আপনার আগ্রহ যাচাই করে দেখে। আর আপনি যে এই কোম্পানিতে কাজ করতে আগ্রহী তা বোঝানোর অন্যতম উপায় হচ্ছে তাদের সম্পর্কে জানা।
কোম্পানির কী কী প্রোডাক্ট বা সার্ভিস আছে তা জানার চেষ্টা করুন এবং ইতিপূর্বে আপনি সেই প্রোডাক্টগুলো বা একইরকম অন্য কিছু ব্যবহার করেছেন কিনা তা নিয়ে উদাহরণ প্রস্তুত করুন। কোম্পানির কালচার কেমন এবং সেখানে আপনার পরিচিত কেউ বা কোনো লিংকডইন কানেকশন আছেন কিনা তার খোঁজ করুন। আরও বেশি জানতে চাইলে কোম্পানিতে চাকরিরত কারও সাথে কথা বলে সেখানে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পর্কেও জেনে নিতে পারেন
৮। আপনি ইন্টারভিউয়ের প্রচলিত প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত করেন নি
চাকরি খোঁজা এবং ইন্টারভিউ নিয়ে দুশ্চিন্তা করা যে কারও মস্তিষ্কের বড় অংশ দখল করে নিতে পারে। কিন্তু এই দুশ্চিন্তার সাগরে ডুবে যাবেন না, কারণ ইন্টারভিউয়ের জন্য আপনাকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
আপনার বিষয়ের ইন্টারভিউয়ে সাধারণত কোন প্রশ্নগুলো করা হয় তা নিয়ে পড়াশোনা করুন এবং তার উত্তর প্রস্তুত করুন। শুধু মনে মনে প্রস্তুত করে রাখা সবসময় যথেষ্ট নয়, উত্তরগুলো মুখে বলেও অভ্যাস করা জরুরি। এমন কাউকে যদি যোগাড় করতে পারেন যে আপনার একটি প্র্যাকটিস ইন্টারভিউ নেবে এবং আপনাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে পারবে তাহলে আরও ভালো হয়।
তবে প্রস্তুতি নেওয়া মানে এই না যে আপনি উত্তরগুলো মুখস্থ করবেন। তাতে বরং আপনার কথাবার্তা কৃত্রিম শোনাবে। এবং অনেক ক্ষেত্রে ভিন্ন চাকরি বা কোম্পানির জন্য আপনাকে উত্তর পরিবর্তনও করতে হতে পারে। তাই প্রতিবার ইন্টারভিউ দিতে যাওয়ার আগে প্রশ্নোত্তরগুলো অনুশীলন করা উচিত।
৯। ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য স্কিলের দিকে আপনি জোর দেন নি
ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতি মানে শুধু প্রশ্নোত্তর প্রস্তুত করা না, আরও অনেক কিছু দরকার এতে। আগ্রহের সাথে অন্যদের কথা শোনা, ইতিবাচক আচরণ ধরে রাখা, নিজেকে আত্মবিশ্বাসের সাথে উপস্থাপন করতে পারা এবং ইন্টারভিউয়ারের সাথে সহজাতভাবে কথা বলা – এ সব কিছুও একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এইসব দক্ষতা অর্জন কঠিন কিছু নয়, বরং এই আচরণগুলো যে করা উচিত ইন্টারভিউয়ের সময় তা মাথায় রাখাই আপনাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে।
১০। টেকনিক্যাল দক্ষতার পরীক্ষায় আপনি উত্তীর্ণ হচ্ছেন না
আনুষ্ঠানিক টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ হোক বা সাধারণ ইন্টারভিউয়ের ফাঁকে জিজ্ঞেস করে দু’-একটি টেকনিক্যাল প্রশ্ন, চাকরি দেওয়ার আগে যে কোনো ইন্টারভিউয়ারই চাইবেন আপনার দক্ষতা যাচাই করে নিতে।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল পরীক্ষায় অপারদর্শিতা দেখানো মানেই চাকরির সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যাওয়া। কিন্তু ভালো ব্যাপার হচ্ছে এই সমস্যার সমাধান করাও সহজ। একটু পড়াশোনা করা এবং স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করার মাধ্যমে পরবর্তী ইন্টারভিউয়ের টেকনিক্যাল অংশে উত্তীর্ণ হয়ে যেতে পারবেন।
এইসব সমস্যা সমাধানের পরেও যদি আপনি প্রথম ইন্টারভিউ থেকে বাদ পড়তে থাকেন তাহলে সম্ভাবনা হচ্ছে আপনি ভুল চাকরিতে অ্যাপ্লাই করছেন। সেক্ষেত্রে আপনার স্কিল ও অভিজ্ঞতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ চাকরি খুঁজে তাতে অ্যাপ্লাই করুন।
একাধিক ইন্টারভিউ দিচ্ছেন, কিন্তু চাকরি পাচ্ছেন না
১১। আপনার দক্ষতা আছে, কিন্তু সঠিক অনুপ্রেরণা নেই
আপনার উপযুক্ত দক্ষতা আছে, আপনি সঠিক চাকরিতেই অ্যাপ্লাই করছেন, প্রথম দিকের ইন্টারভিউগুলোতেও উত্তীর্ণ হয়ে যাচ্ছেন – তবুও আপনার চাকরি হচ্ছে না। কেনো? এর কারণ হতে পারে আপনার সঠিক অনুপ্রেরণা না থাকা। অর্থাৎ আপনি কেনো এই চাকরি করতে চান তা ইন্টারভিউয়ারকে বোঝাতে পারছেন না।
যে কোনো ইন্টারভিউয়ে আপনার ক্যারিয়ারের পরবর্তী ধাপ হিসেবে এই চাকরিটা কেনো সঠিক তা বোঝাতে পারা জরুরী। আপনার চাকরিজীবনের ইতিহাসে এই পদের ভূমিকা কী হবে? আপনার কাছে এই চাকরিটি গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝাতে চাইলে নিজের পরিচয় বা ‘কেনো এখানে আবেদন করলেন?’ এসব প্রশ্নের উত্তরে ক্যারিয়ারে এই পদক্ষেপটি নেওয়ার কারণ ও ভূমিকা অবশ্যই উপস্থাপন করুন।
১২। আপনি অতি উৎসাহিত
চাকরির সুযোগ নিয়ে উৎসাহিত হওয়া স্বাভাবিক, কিন্তু অতি উৎসাহিত হওয়া স্বাভাবিক না। ইন্টারভিউয়াররা অনেক সময়ই এরকম আচরণ পছন্দ করেন না।
তাই কোম্পানি সম্পর্কে অনেক কিছু জানা এবং সেই জ্ঞান উপস্থাপন করার মাধ্যমে আগ্রহ প্রকাশ করুন, ইন্টারভিউয়ের জন্য এক ঘণ্টা আগে পৌঁছে গিয়ে বাইরে বসে থেকে সবাইকে অপ্রস্তুত অনুভব করানোর মাধ্যমে নয়। ইন্টারভিউয়ারদেরকে ইমেইলে ধন্যবার জানিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করুন, তাঁদেরকে বার বার ফোন করে আপডেট জানতে চেয়ে নয়। ইন্টারভিউয়ারদের লিংকডইন প্রোফাইন ঘেঁটে এবং কানেকশন রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করুন, তাঁদেরকে ফেসবুক বা অন্য যোগাযোগ মাধ্যমে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠিয়ে নয়।
১৩। আপনি লক্ষণীয় কিছু করেন নি
চাকরি পেতে হলে ইন্টারভিউয়ারদের কাছে স্মরণীয় হতে হবে। হায়ারিং কমিটি যখন কাকে নিয়োগ দেওয়া হবে তা নিয়ে আলোচনায় বসবেন, আপনার ইন্টারভিউ বা আপনার ব্যাপারে কারও বিশেষ কিছু মনে না থাকা ভালো লক্ষণ নয়।
চাকরির কোনো একটা বিষয় নিয়ে বিশেষ উৎসাহ দেখাতে পারলে তা সাধারণত ইন্টারভিউয়ারদের মনে থাকে। এছাড়া চাকরির সাথে সম্পর্কিত নয়, কিন্তু আগ্রহোদ্দীপক – এমন কোনো শখ থাকলে সুযোগ বুঝে তা নিয়েও কথা বলতে পারেন।
মোট কথা, কোন জিনিসটা আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তা আগে থেকে ভেবে রাখুন এবং ইন্টারভিউয়ে তা নিয়ে আগ্রহের সাথে কথা বলার চেষ্টা করুন। যেমন ইন্টারভিউয়ার যদি এমন কোনো প্রশ্ন করেন যে আপনার জীবনের কোন সাফল্যটা নিয়ে আপনি সবচেয়ে বেশি গর্ব বোধ করেন? অবশ্যই শুরুতে ক্যারিয়ারের সাথে সম্পর্কিত কোনো সাফল্যের কথা বলুন। তবে তারপরে স্কুলের খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় লংজাম্পে প্রথম হওয়ার কথা জুরে দিতে ভুলবেন না!
১৪। আপনি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি নেতিবাচক কথা বলেছেন
হায়ারিং ম্যানেজাররা সাধারণত ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে পারেন এমন প্রার্থীদের বেশি গুরুত্ব দেন। ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় খুব একটা নেতিবাচক কথা না বলাই ভালো।
শেষের দিকের ইন্টারভিউয়ে অনেক সময়ই প্রার্থীদের জিজ্ঞেস করা হয় যে কোম্পানি বা প্রোডাক্টের ব্যাপারে তার কোনো পরামর্শ আছে কিনা। এই ধরনের প্রশ্নের উত্তরে খুবই সাবধানে শব্দ নির্বাচন করুন। নেতিবাচক কথা বলা এবং অনেকগুলো ভুল ধরিয়ে দেওয়া এখানে খুব সহজ। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে আপনি কোম্পানিকে বা কোম্পানির কাউকে অপমান করছেন কিনা তা অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে। সমস্যার দিকে বেশি জোর না দিয়ে সমাধান নিয়ে বেশি কথা বলার চেষ্টা করুন।
এই নিয়মটা আগে যে কোম্পানিতে চাকরি করতে তাদের ব্যাপারে কথা বলার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আগের চাকরিতে আপনার যতো অসুবিধাই হয়ে থাকুক, কোম্পানি, বস বা সহকর্মীদের ব্যাপারে নেতিবাচক কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। অন্য কাউকে দোষারোপ করা কোনো সময়েই ভালো দেখায় না।
১৫। রেফারেন্স ও আপনার কথায় মিল নেই
ভুলক্রমে আপনাকে রেফার করা ব্যক্তির সাথে আপনার ইন্টারভিউয়ে দেওয়া তথ্য না মিললে তা কোম্পানির কাছে একটি বড় সমস্যা। এর কারণে আপনার চাকরির সুযোগ সহজেই হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। এরকম পরিস্থিতিতে না পড়তে চাইলে আগে থেকেই তাদের জানিয়ে দিন যে রেফারেন্সের ব্যাপারে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হতে পারে। কোন পদের জন্য আবেদন করছেন এবং কেনো এই চাকরির জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করেন তাও জানিয়ে রাখা ভালো। সম্ভব হলে এই চাকরিতে পাঠানো সিভি ও কভার লেটারের একটি কপি যিনি রেফারেন্স দিয়েছেন তাঁকেও পাঠিয়ে দিন। মোট কথা, তার এবং আপনার দেওয়া তথ্যে যেন কোনো অমিল না থাকে।
কখনো কখনো এরকম সময় আসে যে আমরা আমাদের সাধ্যমতো সবকিছু করা সত্ত্বেও আশানুরূপ ফলাফল পাই না। শুধু নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করাই আপনার হাতে আছে, চাকরি পাওয়া বা না পাওয়া আপনার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তাই যে বিষয়গুলো আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে তার দিকে মনোযোগ দিন এবং সামনে এগিয়ে যান। চাকরির সন্ধান অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, কিন্তু দিনশেষে যখন মনের মতো চাকরি পেয়ে যাবেন তখন এই সব কষ্টই ফলপ্রসূ হবে।