‘ট্রান্সফারেবল স্কিল’ কী এবং কেনো প্রয়োজন?

October 12, 2021 |
Views: 534

পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা যাই থাকুক, যে কোনো চাকরির জন্য নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করতে ‘ট্রান্সফারেবল স্কিল’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবং সবচেয়ে ভালো ব্যাপার হচ্ছে, সবারই এমন কোনো না কোনো দক্ষতা থাকে যা যে কোনো চাকরি ক্ষেত্রে কাজে লাগানো যাবে।

আপনার কোন দক্ষতাগুলোকে ট্রান্সফারেবল স্কিল বলা যায় এবং কীভাবে সেগুলো কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগাবেন জানতে চান? সেই বিষয়ক তথ্য নিয়েই সাজানো আজকের আর্টিকেল!

ট্রান্সফারেবল স্কিল কী?

ট্রান্সফারেবল স্কিল বলতে মূলত এমন কিছু গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতাকে বোঝায় যেগুলো প্রায় সব পেশা ও ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজে লাগে। এ ধরনের দক্ষতা সাধারণত সময় ও অভিজ্ঞতার সাথে ধীরে ধীরে জমা হয়। সেই অভিজ্ঞতাটা আসতে পারে পূর্ববর্তী চাকরি থেকে, চ্যারিটি বা ভলান্টিয়ারিং সংক্রান্ত কাজ থেকে, কোনো কোর্স বা শখের কোনো কাজ থেকে, এমনকি নিজের ঘরের কাজ থেকেও।

ট্রান্সফারেবল স্কিল প্রয়োজন কেনো?

যে চাকরির আবেদন করছেন তার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত না হলেও, এই ধরনের দক্ষতাগুলো চাকরিদাতার কাছে সাধারণত খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে থাকে।

এসব স্কিল থেকে যেমন বোঝা যায় আপনি টিমের সাথে মানিয়ে নিতে পারবেন কিনা, তেমনি আগের অভিজ্ঞতাগুলো থেকে আপনি কতোটুকু শিক্ষা নিয়েছেন তাও পরিষ্কার হয়ে ওঠে। তাই অভিজ্ঞতার অভাবে যদি পছন্দের পেশায় চাকরি পেতে অসুবিধা হয়, অন্যান্য অভিজ্ঞতা থেকে অর্জিত ট্রান্সফারেবল স্কিল সেই ক্ষেত্রে আপনাকে অনেকটা সাহায্য করতে পারে।

বিশেষ করে এন্ট্রি-লেভেল চাকরি অথবা ক্যারিয়ার পরিবর্তন করার সময় এ ধরনের দক্ষতা থাকা আপনাকে বিশেষ সুবিধা দেবে।

ট্রান্সফারেবল স্কিলের কিছু উদাহরণ

ট্রান্সফারেবল স্কিল আসলে অনেক ধরনের এবং অনেক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে। তার সবগুলো নিয়ে আলোচনা করা একটি আর্টিকেলে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তাই এখানে এমন কিছু ট্রান্সফারেবল স্কিলের উল্লেখ করছি যা তুলনামূলকভাবে বেশি পরিচিত এবং প্রায় সব পেশায়ই কাজে লাগে।

নেতৃত্ব

জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার দক্ষতা কোনো না কোনোভাবে কাজে লাগে। চাকরিজীবনও তার বিকল্প নয়। অনেকে মনে করেন শুধুমাত্র ম্যানেজমেন্ট সংক্রান্ত কাজের জন্যই নেতৃত্ব দিতে জানতে হয়। কিন্তু আপনার যদি এই দক্ষতা থাকে, পেশা যা-ই হোক এটা আপনার অল্প হলেও কাজে লাগবে।

আপনার যে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো দক্ষতা আছে তা চাকরিদাতার কাছে কীভাবে উপস্থাপন করবেন ভাবছেন? এর উদাহরণ আসতে পারে যে কোনো ক্ষেত্র থেকে। ছাত্রজীবনে কোনো গ্রুপ প্রজেক্ট থেকে শুরু করে খেলাধুলার সময় দলের নেতৃত্ব দেওয়া পর্যন্ত যে কোনো সময়ের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে আপনি নিজের নেতৃত্ব গুণ উপস্থাপন করতে পারেন।

সময় ব্যবস্থাপনা

সময় ম্যানেজ করতে পারা একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা। যে কোনো পেশায়ই সময়মতো কাজ শেষ করা এবং ডেডলাইন অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজের সময়কে কীভাবে কাজে লাগাবেন, প্রজেক্টের কোন অংশ কখন শেষ করবেন, কীভাবে কাজের তালিকা তৈরি করবেন এবং কখন অন্যদের কাছ থেকে সাহায্য চাইবেন – এ সবকিছু বুঝতে হলে সময় ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হওয়া জরুরি।

ডেডলাইনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের প্রজেক্ট শেষ করতে পারা অথবা কোনো ক্লায়েন্টের জন্য স্বল্প সময়ে সঠিকভাবে কাজ শেষ করে দেওয়া – খুঁজলে নিজের জীবনেও সাফল্যের সাথে সময় ব্যবস্থাপনা করার এমন কোনো না কোনো উদাহরণ পেয়েই যাবেন!

অগ্রাধিকার নির্ধারণ

কোন কাজটা আগে করবেন, কোনটা পরে – এই সিদ্ধান্ত নিতে পারে বড় একটি দক্ষতা। কারণ কাজের চাপ যখন বেশি থাকবে, এই দক্ষতাই আপনাকে সময়মতো প্রজেক্ট শেষ করতে সাহায্য করবে। তাই চাকরিদাতারা এই দক্ষতাকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।

হয়তো আপনি গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দ্রুত শেষ করতে তুলনামূলক কম প্রয়োজনীয় কাজ বাদ দিতে ভয় পান না। অথবা হয়তো সময় বাঁচানোর জন্য নানারকম পন্থা অবলম্বন করে ছোট-খাট কাজগুলো অল্প সময়েই শেষ করে ফেলেন। আপনার পদ্ধতি যেটাই হোক অগ্রাধিকার নির্ধারণ করতে পারা একটি বড় গুণ এবং আপনার সিভিতে এই গুণের উপস্থিতি চাকরিদাতা পছন্দই করবেন।

অন্যের সাহায্য নেওয়া

ডেলিগেশন মূলত ম্যানেজার, সুপারভাইসর এবং সিনিয়র কর্মকর্তাদের জন্য বেশি জরুরি। কিন্তু আপনি ম্যানেজমেন্টে কাজ করছেন না তার মানে এটা না যে আপনার কখনো ডেলিগেট করার প্রয়োজন হবে না।

আপনার যদি ছাত্রজীবনে টিউশনি করার অভিজ্ঞতা থাকে অথবা কোনো সহকর্মীকে কোনো কাজ বা প্রক্রিয়া বুঝিয়ে দিয়ে থাকেন, তাহলে এটাই হতে পারে আপনার ডেলিগেশনের একটি অন্যতম অভিজ্ঞতা। মনে রাখবেন, সিভি তৈরির সময় আপনি কীভাবে নিজের দক্ষতার বর্ণনা দিচ্ছেন এবং কীভাবে চাকরির বিবরণীর সাথে তার সংযোগ স্থাপন করছেন তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে।

মনোযোগের সাথে অন্যদের কথা শোনা

আপনার অভিজ্ঞতা যতো কম বা বেশি হোক, আপনি যে ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করেন – অন্যের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা প্রত্যেক মানুষেরই একটি অন্যতম গুণ হওয়া উচিত। তাই সিভিতে এই দক্ষতা উপস্থাপন করা তেমন কঠিন হওয়ার কথা নয়।

আপনার এই শোনার দক্ষতা ভালো কোনো কাজে লেগেছে বা কোনো সমস্যা সমাধানে সহায়তা করেছে – এমন কোনো সময়ের কথা মনে করুন এবং তার উদাহরণ দিন। হয়তো আপনি ক্লায়েন্টের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী একদম সঠিকভাবে কাজ করেছেন অথবা আপনাকে কেউ কিছু শেখালে আপনি দ্রুত শিখে নিতে পারেন। এরকম যে কোনো উদাহরণ আপনার এই দক্ষতাকে উপস্থাপন করতে সক্ষম।

সঠিক যোগাযোগ

যোগাযোগ স্থাপন ও বজায় রাখতে পারা যে কোনো ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের সবারই এই দক্ষতা অর্জন করা উচিত। বিশেষ করে কাস্টমারদের সাথে কাজ করতে হয় এমন পেশায় সঠিক যোগাযোগ দক্ষতা খুব জরুরি। কর্মক্ষেত্রে সঠিক যোগাযোগ বজায় রাখতে পারার ওপর নির্ভর করে অফিসের পরিবেশ ও কার্যকারিতা।

যোগাযোগ দক্ষতার উদাহরণ হিসেবে আপনি কোনো ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলে তার সমস্যা সমাধান করেছেন অথবা কোনো সহকর্মীর সাথে একই প্রজেক্টে একসাথে কাজ করেছেন এমন ঘটনা উল্লেখ করতে পারেন।

গবেষণা ও বিশ্লেষণ

অনেক পেশায়ই ভালো বিশ্লেষণী দক্ষতা প্রয়োজন হয়। তাই চাকরিদাতাদের আপনার গবেষণা ও বিশ্লেষণ সংক্রান্ত দক্ষতার ব্যাপারে জানিয়ে দেওয়া বেশ জরুরি।

এই দক্ষতা উপস্থাপনের জন্য কী উদাহরণ ব্যবহার করা উচিত তা নির্ভর করে আপনি কোন চাকরিতে অ্যাপ্লাই করছেন এবং সেখানে আপনাকে কী কাজ করতে হবে তার ওপর। ছাত্রজীবনে তৈরি করা কোনো রিপোর্ট বা অ্যাসাইনমেন্ট অথবা যে কোনো তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ সংক্রান্ত কাজের উদাহরণ দিয়ে আপনি এই দক্ষতা উপস্থাপন করতে পারেন।

আপনার সিভিতে কোন ট্রান্সফারেবল স্কিলগুলো উল্লেখ করবেন?

এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে চাকরির বিবরণী পড়া। কারণ এখানে প্রায়ই চাকরিদাতা আপনার মধ্যে কী কী ট্রান্সফারেবল স্কিল আশা করছেন তা উল্লেখ করা থাকে।

এখান থেকে কোন স্কিলগুলো আপনি নিজের সিভিতে উল্লেখ করবেন তা ঠিক করে নেওয়ার পর কীভাবে সেগুলো উপস্থাপন করবেন তা নিয়ে ভাবুন। সিভি লেখার সময় আপনার দক্ষতা কীভাবে চাকরিদাতা ও তার কোম্পানিকে সাহায্য করবে সেই বিষয়ে জোর দিন।