অফিসে কাজ করতে গিয়ে প্রতিদিন আপনাকে নানারকম মানসিক চাপের সম্মুখীন হতে হয়। সেখানে নেতিবাচক একটি পরিবেশ এই চাপকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। সবারই মাঝে মাঝে খারাপ দিন যায়। কখনো প্রেজেন্টেশন ভালোভাবে সম্পন্ন হয় না, কখনো ডেডলাইন মিট করতে বাড়তি সময় কাজ করতে হয়। কিন্তু কাজের চাপ বেশি থাকা বা হঠাৎ একদিন কোনো ঝামেলায় পড়ার সাথে একটি সম্পূর্ণ টক্সিক পরিবেশের আকাশ-পাতাল পার্থক্য।
টক্সিক কাজের পরিবেশ বলতে আমরা কী বুঝি?
হয়তো আপনার বস কখনো নিজের ভুল স্বীকার করতে চান না, অথবা অফিসে কার্যকরভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় শৃঙ্খলা নেই। যখন আপনি নিজের পছন্দের কাজটাও করে আনন্দ পাবেন না এবং অফিসের নানা সমস্যার কারণে প্রতিনিয়ত মানসিকভাবে ক্লান্ত বা বিপর্যস্ত বোধ করবেন, তখনই বুঝে নেবেন আপনার কাজের পরিবেশটা সম্ভবত উপযুক্ত নয়।
এ ধরনের পরিবেশে কাজ করা শুধু কাজের মানই কমিয়ে দেয় না, বরং নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক সমস্যার সৃষ্টি করে। স্ট্যানফোর্ড ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু গবেষণায় পাওয়া গেছে যে টক্সিক পরিবেশে কাজ করার কারণে কর্মজীবীদের উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের নানাবিধ সমস্যাসহ মানসিক বিপর্যস্ততা থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
তাহলে কীভাবে বুঝবেন কর্মক্ষেত্রের পরিবেশটা আপনার জন্য ক্ষতিকর কিনা এবং কীভাবেই বা করবেন এই সমস্যার সমাধান? এইসব প্রশ্নের উত্তর জানতে পড়তে থাকুন!
টক্সিক পরিবেশের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য
বৈশিষ্ট্য ১ঃ আপনি সারাক্ষণ একটা মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন
প্রতিদিনই কি ঘুম থেকে ওঠার পর অফিসে যেতে অনিচ্ছা হয়? এর কারণ হতে পারে নেতিবাচক পরিবেশ। বিশেষ করে চাকরির কারণে যদি পরিবার বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়, তাতে মানসিক চাপ বাড়ার সম্ভাবনা আরও বেশি থাকে।
বৈশিষ্ট্য ২ঃ আপনাকে সবসময়ই অনেক বাড়তি কাজ করতে হয়
অফিসের পরিস্থিতি যখন প্রতিকূল থাকে, চাকরিজীবীদেরকে তাদের ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করতে হয়। এভাবে অতিরিক্ত কাজ করা বার্নআউটের কারণ হতে পারে যাতে পরবর্তীতে কাজের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি হয়। সাম্প্রতিক একটি সার্ভে অনুযায়ী, যেসব চাকরিজীবীদের অতিরিক্ত কাজ করতে হয় তাদের মধ্যে ৪৩% চাকরিদাতার ওপর রাগান্বিত বোধ করেন।
বৈশিষ্ট্য ৩ঃ কর্মক্ষেত্রে আপনাকে হেনস্তার শিকার হতে হয়
নেতিবাচক পরিবেশে কর্মক্ষেত্রে খারাপ ব্যবহার বা হেনস্তার শিকার হওয়ার নজির অনেক বেশি দেখা যায়। সেই খারাপ ব্যবহারটা যেমন চাকরিদাতা বা ম্যানেজারের কাছ থেকে হতে পারে, সহকর্মীদের কাছ থেকেও হতে পারে। ঝগড়া বা গালাগালি করা, বিশেষ কাউকে নিয়ে হাসাহাসি করা অথবা কারও কাজে ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যাঘাত ঘটানো – এসবই নেতিবাচক পরিবেশের লক্ষণ।
বৈশিষ্ট্য ৪ঃ সহকর্মীদের মধ্যে গুজব বা পরচর্চা করার স্বভাব দেখা যায়
আপনার কাছে এসে যদি অফিসের কেউ অন্য কাউকে নিয়ে কোনো গুজব রটানোর চেষ্টা করে, এ ধরনের ব্যবহারে লিপ্ত না হওয়াই ভালো। এতে কারও তো কোনো লাভ হয়ই না, বরং অফিসে একটি ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়। সহকর্মীদের ওপর বিশ্বাস রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে গুজব ছড়ানোর এই অভ্যাস থেকেই অফিসে নেতিবাচক পরিবেশের সূচনা হয়।
বৈশিষ্ট্য ৫ঃ আপনার বস কারণে-অকারণে সবার সাথে রাগারাগি করেন
আপনার বস বা ম্যানেজার যদি নেতিবাচক মানসিকতার অধিকারী হন, অফিসের পরিবেশের জন্য এর থেকে খারাপ আর কিছু হতে পারে না। নেতৃত্ব স্থানীয়রা যদি আপনাকে ভালো কাজের জন্য বাহবা না দিয়ে শুধু ভুল-ত্রুটি ধরতে থাকেন এবং আপনাকে অপমান করেন, তাহলে নিঃসন্দেহে ধরে নিতে পারেন আপনি একটি টক্সিক পরিবেশে কাজ করছেন।
এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়?
এরকম নেতিবাচক পরিবেশে কাজ করার চেয়ে চাকরি পরিবর্তন করে অন্য কোথাও যাওয়াই এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পন্থা। তবে বেশিরভাগ মানুষেরই যে কোনো সময় চাকরি ছেড়ে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি থাকে না।
নেতিবাচক মানুষের সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলুন
আপনার অফিসে বেশিরভাগ সমস্যা সৃষ্টির কারণ যদি হয়ে থাকে একজন ব্যক্তি, তাহলে আপনি নিজে তার সাথে এ ব্যাপারে কথা বলে দেখতে পারেন। এক্ষেত্রে মাথা ঠাণ্ডা রেখে তাকে পরিস্থিতিটা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করুন এবং আপনার অনুভূতির দিকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং তার আচরণগুলোর অফিসের পরিবেশে সর্বোপরি কী প্রভাব ফেলছে তা বোঝানোর চেষ্টা করুন।
উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো সহকর্মী অফিসের মিটিং-এ বারবার আপনার দেওয়া প্রস্তাবনা বা আইডিয়াকে ভুল প্রমাণ করার চেষ্টা করেন, তাকে বলুন, “আমি বুঝতে পারছি আপনি ফিডব্যাক দিতে আগ্রহী, কিন্তু বার বার এভাবে কথায় বাধা দিলে আমার আইডিয়াগুলো টিমকে জানানোয় ব্যাঘাত ঘটতে পারে।” অর্থাৎ আপনি অপমানিত বা বিরক্ত বোধ করছেন এটা উল্লেখ না করে তার আচরণ অফিসের কাজকে কীভাবে প্রভাবিত করছে তা উল্লেখ করছেন।
নেতৃস্থানীয়দের সাহায্য নিন
ব্যক্তিগতভাবে কথা বলে যদি কাজ না হয়, তাহলে এবার অফিসের সিনিয়রদের সাহায্য নিতে পারেন। তাঁদেরকে জানান যে আপনার কোনো সহকর্মীর সাথে এরকম সমস্যা হচ্ছে এবং এ বিষয়ে কথা বলা জরুরী। তবে এই নিয়ে মিটিং শুরু হওয়ার আগে আপনার কিছু পদক্ষেপ নেওয়া জরুরী।
প্রথমত, আপনার কোনো সহকর্মীও একই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন কিনা তা খুঁজে বের করুন। আপনার দল যতো বড় হবে, আপনার অভিযোগও ততো জোরালো হবে। দুই-তিনজন ব্যক্তির একই অভিযোগ থাকলেই তা নেতিবাচক আচরণের বিপক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য যথেষ্ট হওয়ার কথা।
দ্বিতীয়ত, সম্ভব হলে আপনার অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ সংগ্রহ করুন। যেমন আপনার কোনো সহকর্মী যদি নিয়মিত দেরী করে কাজ শেষ করে এবং ডেডলাইন ধরতে না পারার দায় আপনার ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে টাইমস্ট্যাম্পসহ তার সম্পর্কিত ইমেইল বা মেসেজগুলো সংগ্রহ করে রাখুন যাতে প্রয়োজনে মিটিং-এ দেখাতে পারেন।
চাকরি পরিবর্তনের পরিকল্পনা করুন
যদি কোনোভাবেই এই পরিবেশ থেকে বের হয়ে না আসা যায়, তাহলে বুঝে নিতে হবে সমস্যাটা কোনো ব্যক্তিবিশেষের না বরং পুরো কোম্পানির। সেক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চাকরি পরিবর্তন করে সেই কোম্পানি থেকে বের হয়ে আসাই শ্রেয়।
সেক্ষেত্রে চাকরি ছাড়ার নোটিশ দেওয়ার আগেই অন্য একটি চাকরি খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ একটি চাকরি থাকা অবস্থায় নতুন চাকরি খোঁজা তুলনামূলক সহজ। বর্তমান কর্মক্ষেত্রের নেতিবাচকতা পেছনে ফেলে নতুন চাকরি খোঁজার কথা ভাবছেন? Chakri.app-এ ফ্রি অ্যাকাউন্ট খুলে আজই শুরু করে দিন চাকরির সন্ধান! অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কষ্ট করে মানিয়ে নেওয়া কারও জন্যই উপযোগী নয়।