বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে গ্যাপ ইয়ার জিনিসটা আজকাল বেশ জনপ্রিয়। নানা কারণে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে এক বছর বিরতি নিতে পছন্দ করে। হয়তো আপনি কোন সেক্টরে কাজ করতে চান তা নিয়ে এখনও নিশ্চিত না, অথবা হয়তো ফাইনাল ইয়ারের পড়াশোনার চাপের পর কয়েকটা দিন একটু শান্তিতে কাটাতে চাচ্ছেন।
কারণ যাই হোক না কেনো, গ্যাপ ইয়ার আপনার ক্যারিয়ারকে কীভাবে প্রভাবিত করবে তা একটু আগে থেকে ভেবে নেওয়া ভালো। এই আর্টিকেলে তাই থাকছে গ্যাপ ইয়ারের কিছু ভালো ও কিছু খারাপ দিক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।
প্রথমেই আসি ভালো দিকগুলোতে-
১। নতুন জিনিস শেখার পেছনে সময় দিতে পারবেন
বেশিরভাগের ক্ষেত্রেই বিরতি নেওয়ার মূল উদ্দেশ্য এটি, নতুন কিছু শেখার দিকে মনোযোগ দেওয়া। হয়তো আপনার ছোটবেলা থেকেই বেকিং শেখার শখ, অথবা হয়তো কোডিং শেখার পেছনে কিছুটা সময় দিতে চান। কিন্তু পড়াশোনার চাপে কখনো সময় হয়ে ওঠে নি। বিরতির সময়টাকে কাজে লাগিয়ে অবশেষে এই ইচ্ছাগুলো পূরণ করার সুযোগ পাবেন।
আপনার পরিকল্পনা যদি হয় বিরতির সময়টা ঘোরাঘুরি করে কাটানো, তাহলে এই সুযোগে নতুন একটা ভাষা শেখার চেষ্টা করতে পারেন। অথবা পছন্দের সেক্টরে কোর্স বা ভলান্টিয়ারিং করে স্কিল এবং অভিজ্ঞতা – দুটোই অর্জন করতে পারেন। সিভিতে এ ধরনের অভিজ্ঞতা থাকা প্রমাণ করবে যে আপনি নিজের বিরতির সময়টার পর্যাপ্ত সদ্ব্যবহার করেছেন।
Simple Life Insure এর প্রতিষ্ঠাতা এবং CEO টাই স্টুয়ার্টের মতে, বিরতি নেওয়ার মাধ্যমে নিজের ক্যারিয়ার সম্পর্কিত লক্ষ্যগুলোর ব্যাপারে স্বচ্ছ ধারণা আসবে এবং কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রয়োজনীয় স্কিলগুলোও অর্জন করা যাবে। তিনি বলেন, “জীবনে ঝুঁকি নেয় নি এমন ব্যক্তির চেয়ে আমি বরং তাকেই চাকরি দেব যে তার গ্যাপ ইয়ারে কোডিং শিখেছে অথবা ফ্রিল্যান্সিং করেছে এবং সেই অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া স্কিলগুলো কাজে লাগিয়ে আমার ব্যবসার উন্নতিতে সাহায্য করতে পারবে।”
তাই বিরতি নেওয়া মানে এটা না যে আপনি বসে থেকে সময় নষ্ট করবেন, বরং এই সময়টাতে নিজের আগ্রহের বিভিন্ন দিক অনুসন্ধান করুন এবং অভিজ্ঞতা তৈরির প্রতি মনোযোগ দিন।
২। এমন সুযোগ জীবনে একবারই আসে
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে আপনাকে কেউ না কেউ নিশ্চয়ই বলেছে যে এখনই ঘোরাঘুরি করার সময়, পরে আর সুযোগ হবে না। আমরা সবাই শিক্ষাজীবনে এই কথাটা বার বার শুনেছি। শুধু ঘোরাঘুরি নয়, নিজের কোনো শখের পেছনে সময় দেওয়া বা নতুন কোনো আগ্রহের বিষয় এক্সপ্লোর করার ক্ষেত্রেও এটা সত্যি।
মাত্র পড়াশোনা শেষ হয়েছে, চাকরির চাপ নেই, সামনে কোনো ডেডলাইন নেই, এটাই তো পৃথিবী ঘুরে দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কিছুদিন পরই চাকরি ও পরিবারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে নিজের শখের পেছনে দেওয়ার মতো সময়টা আর থাকবে না।
Zety এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পিট সসনওস্কি বলেছেন, “বিশ্বের বিভিন্ন রকম সংস্কৃতি, নিয়ম ও রীতিনীতি সম্পর্কে জানার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে সেসব জায়গায় ঘুরতে যাওয়া। বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান মানুষকে সংস্কারমুক্ত করে, নমনীয় করে এবং যে কোনো পরিবেশে মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য দেয়।”
মোটকথা, বিরতির এই সময়টা আপনাকে এমন কিছু অভিজ্ঞতা দেবে যা বাকি জীবনের জন্য আনন্দময় স্মৃতি হয়ে থাকবে।
৩। বিশ্ববিদ্যালয় ও কোম্পানিগুলো বিষয়টা পছন্দ করে
গ্যাপ ইয়ার শেষে মাস্টার্স করার পরিকল্পনা থাকলে এই সময়ের অভিজ্ঞতা আপনার অ্যাপলিকেশনকে আরও জোরদার করতে পারে। ধরুন, আপনি মেরিন বায়োলজিতে মাস্টার্স করতে চান। কোনো মেরিন রিসার্চ ইন্সটিটিউটে কয়েক মাস ইন্টার্নশিপ করলে মাস্টার্সে ভর্তির ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা অগ্রাধিকার পাবে। একইভাবে মেডিক্যাল সেক্টরেও ফিল্ডে গিয়ে ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়।
অন্যান্য ইন্ডাস্ট্রিতেও গ্যাপ ইয়ারকে অনেক সময় ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়। কারণ এর মাধ্যমে আপনার সাহসিক মনোভাব এবং ভালো কিছু অর্জনের জন্য ঝুঁকি নিতে পারার ক্ষমতা প্রকাশ পায়। SOTA Partners এবং Solitaired এর সহপ্রতিষ্ঠাতা নীল তাপাড়িয়ার বলেছেন যে একজন ব্যক্তি গ্যাপ ইয়ার নেওয়ার মানে হলো তিনি সঠিক ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে বরং পর্যাপ্ত সময় দিতে প্রস্তুত। তিনি এমন মানুষদেরই চাকরি দিতে চান যারা প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে কিছু করতে ভয় পান না, কারণ তারা তাঁর কোম্পানির জন্য নতুন ও ভিন্নধর্মী আইডিয়া দিতে পারবেন।
৪। আপনার অভিজ্ঞতা বাড়বে
ভবিষ্যতে কোন সেক্টরে কাজ করবেন তা যদি ইতোমধ্যে ঠিক করে ফেলে থাকেন, তাহলে সেই সেক্টরে কয়েক মাসের জন্য একটি ইন্টার্নশিপ, ট্রেইনিং বা এন্ট্রি লেভেলের চাকরি করলে পরবর্তীতে পার্মানেন্ট চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে তা গুরুত্বপূর্ণ অভিজ্ঞতা হিসেবে গণ্য হবে। শুধু তাই নয়, এর মাধ্যমে আপনি ইন্ডাস্ট্রির মানুষজনের সাথে পরিচিত হতে পারবেন, প্রফেশনাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারবেন এবং কিছু টাকাও উপার্জন করতে পারবেন।
ভবিষ্যতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে থাকলেও ভয় নেই। আপনি যদি এই সময়টায় অন্য কোনো সেক্টরেও কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করেন তা আপনাকে কোনো না কোনো স্কিল অর্জনের সুযোগ অবশ্যই দেবে, যে স্কিলগুলো আপনার পরবর্তী চাকরির ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে পারবেন।
৫। আপনার সিভি আরও সমৃদ্ধ হবে
বিরতির এই সময়টা যে আপনি কার্যকরভাবে পাড় করেছেন তা প্রমাণ করতে পারলে বিরতিটা আপনার প্রোফাইলকে আরও উন্নত করবে এবং আপনাকে চাকরিদাতার কাছে লক্ষণীয় করে তুলবে। কারণ আপনার সিভি হবে বেশিরভাগ প্রার্থীর সিভি থেকে একটু আলাদা। সসনওস্কি বলেছেন, “যেসব প্রার্থীরা একটি ফলপ্রসূ গ্যাপ ইয়ার পাড় করেছেন তাদেরকে মাত্র গ্র্যাজুয়েট হওয়া প্রার্থীদের চেয়ে একটু বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়ে থাকে।”
তাই আপনি যদি কোনো প্রতিযোগিতামূলক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে চান, বিরতির সময়টাকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করুন এবং সিভিকে সমৃদ্ধ করার মতো স্কিল ও অভিজ্ঞতা অর্জন করুন। যাতে হাজার হাজার গ্র্যাজুয়েটদের থেকে আপনাকে আলাদাভাবে চোখে পড়ে।
৬। আপনার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটবে
পড়াশোনা শেষ করার পরের প্রথম বছরটাতে অনেকেই বড়সড় একটা ধাক্কা খায়। জীবনের গত প্রায় ১৬ বছর আপনি পড়াশোনা করে কাটিয়েছেন। হঠাৎ করে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা-অ্যাসাইনমেন্ট না থাকার বিষয়টা শুনতে যতোই ভালো লাগুক, নিজের রুটিন নিজে গুছিয়ে নেওয়া সহজ কাজ নয়। পার্মানেন্ট কোনো চাকরিতে ঢোকার আগে তাই বাস্তব এই পৃথিবীর সাথে একটু খাপ খাইয়ে নেওয়া ভালো।
JCSI এর প্রেসিডেন্ট ও সহপ্রতিষ্ঠাতা জিম সুলিভানের মতে, “শিক্ষাজীবনে ছাত্রছাত্রীদেরকে বলে দেওয়া হয় তাদের কোথায় যেতে হবে আর কী করতে হবে। নিজেদের ব্যক্তিত্ব বিকাশের তেমন কোনো সুযোগ তারা পায় না। গ্যাপ ইয়ারে পাওয়া নানারকম অভিজ্ঞতা তাদেরকে পরিণত ব্যক্তিত্ব পেতে সাহায্য করে।”
তাই বিরতি নেওয়ার মাধ্যমে আপনি স্বনির্ভর হতে শিখবেন এবং নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা অর্জন করতে পারবেন। সফল হতে চাইলে নিজের ব্যক্তিগত উন্নতির পেছনে সময় দেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে বিকশিত করার সুযোগ তৈরি করে নিতে হবে।
৭। অন্যান্য আগ্রহের পেছনে সময় দিতে পারবেন
গ্যাপ ইয়ারের আরেকটা বড় লাভ হচ্ছে নিজের শখের কাজগুলো নিয়ে সময় কাটাতে পারা। হয়তো আপনি পড়াশোনা করেছেন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে, কিন্তু সবসময়ই ফটোগ্রাফি ভালোবাসতেন। বিরতির এই সময়টা আপনাকে ফটোগ্রাফির পেছনে সময় দেওয়ার সুযোগ করে দেবে।
অনেকে আবার এই সময়ে এমন কোনো ব্যবসায়িক আইডিয়া নিয়ে কাজ করে, যা তার পড়াশোনা ও চাকরিক্ষেত্র থেকে আলাদা। মনে রাখবেন, গ্যাপ ইয়ারের উদ্দেশ্য ব্যক্তিগত উন্নতি। তাই শুয়ে-বসে না থেকে নানারকম অভিজ্ঞতা অর্জন করে সময় পাড় করলে তাতে আপনার লাভই হবে।
এবার আসা যাক গ্যাপ ইয়ারের খারাপ দিকগুলোতে-
১। আপনার উদ্দীপনা কমে যেতে পারে
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বছরে পড়াশোনার চাপ যেমন থাকে অনেক, শিক্ষার্থীদের নিজ বিষয়ের প্রতি আগ্রহ এবং পরিশ্রম করার ক্ষমতাও তেমনি থাকে চূড়ায়। গ্যাপ ইয়ার শেষে আপনার যদি উচ্চতর শিক্ষার দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকে, সেক্ষেত্রে বিরতি নেওয়াটা আপনার অনুপ্রেরণা কমিয়ে দিতে পারে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচণ্ড চাপ শেষে অনেক শিক্ষার্থীই ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলে। এটা যদি আপনার ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে তাহলে এই বিরতি আপনাকে সাহায্যই করবে।
২। কিছু সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারেন
বিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনি কী কী সুযোগ ফেলে রেখে যাচ্ছেন তা একটু হিসাব করে নেওয়া উচিত। গ্যাপ ইয়ার নিয়ে আপনার পরিকল্পনার জন্য ইন্টার্নশিপ, গ্র্যাজুয়েট স্কিম অথবা উচ্চতর কোর্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ ছেড়ে যাওয়াটা লাভজনক হবে কিনা তা ভেবে দেখে তারপর সিদ্ধান্ত নিন।
বিরতি শেষে ফেরার পর হয়তো এরকম সুযোগ আর থাকবে না। যেমন, কোনো কোনো ইন্টার্নশিপ ও গ্র্যাজুয়েট চাকরিতে শুধুমাত্র নতুন গ্র্যাজুয়েটদের নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স শেষ হওয়ার সাথে সাথেই সরাসরি মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হওয়া যায়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ ধরনের সুযোগ সুবিধাগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত জেনে নেওয়া ভালো।
৩। আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন
বেশিরভাগ গ্র্যাজুয়েট যারা বিরতি নেওয়ার কথা ভাবছেন, তাদের প্রধান সমস্যা এটাই। অবশ্যই গ্যাপ ইয়ার আপনাকে কীভাবে প্রভাবিত করবে তা আপনার বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি এবং এই বছরে আপনি কী কী করতে চান তার ওপর নির্ভর করে।
আপনার পরিকল্পনা যদি হয় ট্র্যাভেলিং তাহলে আর্থিক সমস্যা তো কিছু হবেই। সেই সমস্যা সমাধানের বেশ কিছু উপায় আছে। ৯টা-৫টা চাকরিই উপার্জনের একমাত্র উপায় না। ফ্রিল্যান্সিং করে অথবা যেখানে ঘুরতে যাচ্ছেন সেই এলাকাভিত্তিক কোনো কাজ করেও ঘোরাঘুরির খরচ জোগাড় করা যায়। যদি জায়গাটা দেশের বাইরে হয়, তাহলে এর জন্য আপনার working holiday visa নিয়ে যেতে হবে। আবার, অর্ধেক বছর চাকরি করে টাকা জমিয়ে বাকি বছর তা দিয়ে ঘুরে আসাও একটি বিকল্প হতে পারে।
ঘোরাঘুরির পরিকল্পনা না থাকলেই যে আর্থিক সমস্যা হতে পারে না তা কিন্তু না। পরিবারের সাথে না থাকলে সেক্ষেত্রে আর কিছু না হোক অন্তত বাসা ভাড়া আর বাজার খরচের কথা অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে। পাশাপাশি আপনার যদি কোনো কোর্স বা শখের পেছনে সময় দেওয়ার ইচ্ছা থাকে তার জন্য প্রয়োজনীয় খরচেরও একটি পরিকল্পনা থাকা দরকার। কী কী খরচ হতে পারে তা হিসেব করে একটি বাৎসরিক বাজেট তৈরি করা গ্যাপ ইয়ারের জন্য প্রস্তুত হতে অনেকটা সাহায্য করবে।
৪। পিছিয়ে পড়ছেন বলে মনে হতে পারে
যখন আপনার বন্ধুরা সবাই মাস্টার্স করছে অথবা প্রথম চাকরি শুরু করছে, তখন আপনি বিরতি নিচ্ছেন। এতে করে বন্ধুদের বা সমবয়সীদের থেকে পিছিয়ে পড়ছেন বলে মনে হওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে। শুরুতে হয়তো প্রায়ই মনে হবে আপনি উদ্দেশ্যবিহীনভাবে দিন পাড় করছেন এবং অন্য সবাই যার যার পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
এরকম মনে হওয়াটা একেবারেই স্বাভাবিক। তবে এর পরের পয়েন্টটি অনুযায়ী পরিকল্পনা করে এই মনোভাব থেকে অনেকাংশেই নিস্তার পাওয়া সম্ভব।
৫। বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে
গ্যাপ ইয়ারটাকে সত্যিই ফলপ্রসূ করতে চাইলে পরিকল্পনা তৈরির বিকল্প নেই। তার মানে এটা না যে আপনার প্রতিদিনের প্রতিটি ঘণ্টার শিডিউল বানাতে হবে। গ্যাপ ইয়ারের উদ্দেশ্যই হচ্ছে বাঁধাধরা রুটিনের বাইরে গিয়ে নিজের মতো করে সময় কাটানো। তারপরও আপনি সারা বছরে কী কী করতে চান তার একটা পরিষ্কার ধারণা অবশ্যই থাকতে হবে। তা না হলে হয়তো সময়টা পুরোই নষ্ট হবে। পরবর্তীতে এই সময়টাকে কাজে না লাগানোর জন্য আপনার আফসোসও হতে পারে।
খুব বেশি সম্ভব আপনার আত্মীয় আর পাড়া-প্রতিবেশীরা গ্যাপ ইয়ারের এই সিদ্ধান্ত পছন্দ করবেন না। তাদের এবং আপনার ভবিষ্যৎ চাকরিদাতাদের দেখানোর জন্য হলেও এই বিরতিটা হওয়া উচিত পরিকল্পিত।
পরিকল্পনা করার সময় বিরতির পরের ধাপের দিকে গুরুত্ব দিন। ক্যারিয়ার শুরুর প্রথম বছরগুলোতে আপনি কী অর্জন করতে চান? আর এই গ্যাপ ইয়ার কীভাবে সেই অর্জনে আপনাকে সাহায্য করবে? এই সব বিষয় চিন্তা করে এমন ভাবে বিরতি পরিকল্পনা করুন যাতে তা আপনার প্রফেশনাল লক্ষ্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
৬। পরবর্তীতে চাকরি পেতে সমস্যা হতে পারে
ResumeGo এর একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, যেসব প্রার্থীদের সিভিতে পূর্ব অভিজ্ঞতার মাঝে ধারাবাহিকতা নেই তাদের ইন্টারভিউ-এ ডাক পাওয়ার সম্ভাবনা ৪৫% কম। তবে যারা এই শূন্যস্থানের জন্য উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারেন তাদের ইন্টারভিউয়ের সম্ভাবনা আবার ৬০% বেড়ে যায়।
গ্যাপ ইয়ারের উপস্থিতি সহজাতভাবে আপনার সিভিকে সবার উপরেও নিয়ে যাবে না আবার বাতিলও করে দেবে না। বরং বিরতির এই সময়টা আপনি কীভাবে কাটাচ্ছেন তার ওপরেই নির্ভর করবে সিভির উন্নতি বা অবনতি। গ্যাপ ইয়ার মানেই সময় নষ্ট করা নয়। বছরটা থেকে কিছু না কিছু অর্জন অবশ্যই থাকতে হবে।
এই বিরতির অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কী শিখছেন তা সিভিতে গুছিয়ে উপস্থাপন করার চেষ্টা করুন। আপনি যদি এই সময়টা কার্যকরী কোনো কিছুই না করেন, তাহলে বিরতি থেকে আপনার লাভ নয় বরং ক্ষতিই হবে।
গ্যাপ ইয়ার নেওয়া অনেক বড় একটা সিদ্ধান্ত এবং এর পেছনে চিন্তা ভাবনা করার অনেক বিষয় আছে। ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দুই রকম ফলাফলই এর থেকে আসতে পারে। তাই একটু সময় নিয়ে সবদিক ভেবে পরিকল্পনা মতো বিরতি নিলেই সবচেয়ে ভালো হয়।
আপনি যদি বিরতির সময়টাকে নিজের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে, নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে ব্যবহার করেন তাহলে আফসোসের জায়গা খুব কমই থাকবে।