টিমওয়ার্ক স্কিল বাড়ানোর ১০টি সহজ উপায়

November 10, 2021 |
Views: 544

একটি টিমের অংশ হিসেবে কীভাবে কাজ করতে হবে – এ বিষয়ে ধারণা থাকা যে কোনো চাকরির জন্যই অপরিহার্য। কিন্তু প্রায়ই আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতার দিকে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেই না।

যে কোনো টিমের সাথেই কার্যকারিতার সাথে মানিয়ে নিতে পারা কোনো সহজ কাজ নয়। এর জন্য একাধিক স্কিল অর্জন করতে হয়, আচরণগত পরিবর্তন আনতে হয় এবং নেতৃত্বের গুণাবলী থাকতে হয়। তাহলেই সঠিক টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কর্মক্ষেত্রে বাস্তবিক প্রভাব ফেলা সম্ভব হয়।

কিন্তু কীভাবে এই টিমওয়ার্কের দক্ষতা অর্জন করবেন?

এই বিষয়ক ১০টি কার্যকরী টিপস নিয়েই সাজানো এই আর্টিকেল!

১। টিমে আপনার ভূমিকা ঠিক কী তা বুঝতে হবে

যে কোনো টিমে নিজের ভূমিকা বুঝতে চাইলে আগে বুঝতে হবে আপনার বিশেষ দক্ষতাগুলো কী।

কিছুটা সময় নিয়ে নিজের দক্ষতা এবং দুর্বলতার দিকগুলো মূল্যায়ণ করুন। এর জন্য আপনি সাম্প্রতিককালে পাওয়া ফিডব্যাক যাচাই করে দেখতে পারেন, অথবা নিজেই নিজের স্কিল মূল্যায়ণ করতে পারেন। এতে করে টিমের জন্য আপনার অবদান কী হতে পারে তা বুঝতে পারবেন। এছাড়া অন্যরা টিমে কী ভূমিকা রাখছে তা বুঝাটাও জরুরী। এতে করে যেমন টিমে আপনার জায়গাটা সঠিকভাবে খুঁজে নিতে পারবেন, তেমনি কী নিয়ে এবং কীভাবে কাজ করবেন তার ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা হয়ে যাবে।

সবসময় মনে রাখবেন, টিমের কাউকে সাহায্য করার আগে নিজের কাজকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আপনার এই টিমে থাকার উদ্দেশ্য নিজের ভূমিকাটা সঠিকভাবে পালন করা।

২। টিমের সাথে কাজ করার মানসিকতা তৈরি করুন

টিমে আপনার ভূমিকা বুঝতে পারাটা শুধু প্রথম ধাপ, সামনে আরও অনেক পথ বাকি। একটি টিমে কাজ করার সময় ব্যক্তিগত অর্জনের চেয়ে পুরো টিমের সম্মিলিত সাফল্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু নিজের জন্য নয়, টিমের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করুন এবং সেই লক্ষ্যের কথা মাথায় রেখে কাজ করুন।

টিমের অন্য সদস্যদের সাথে কথা বলুন, তাদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করুন এবং একে অন্যের কাজ নিয়ে গঠনমূলক সমালোচনা করতে পারার মতো সম্পর্ক বজায় রাখুন। টিমের একজন সদস্য হিসেবে আপনার দায়িত্ব হচ্ছে সব সদস্যকে ভালোভাবে কাজ সম্পন্ন করতে এবং নতুন কিছু শিখতে যথাসম্ভব সাহায্য করা। আপনার আচরণ বা কথায় যেন কারও অনুপ্রেরণা নষ্ট না হয়ে যায় সে দিকে সবসময় লক্ষ্য রাখুন।

৩। পরিবর্তনশীলতাকে মেনে নিতে শিখুন

টিমের সাথে কাজ করার সময় সবকিছু পরিকল্পনা মতো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। টিমের একজন সদস্য হিসেবে আপনাকে অবশ্যই পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ টিমের ভেতর দ্বিমতের কারণেই হোক, বা কোনো পরিস্থিতির শিকার হয়ে – টিমের গঠন এবং কাজ বিভিন্নভাবে প্রায়ই প্রভাবিত হবে।

পরিবর্তনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতা আপনার অনেক কাজে লাগবে। এই গুণ যেমন সবার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সাহায্য করবে, তেমনি আপনার স্কিলও বাড়াবে। আগে থেকে কাজের পরিকল্পনা তৈরি করে রাখা এবং সে অনুযায়ী গুছিয়ে কাজ করা সামনের বাধা-বিপত্তি থেকে বের হয়ে আসাকে তুলনামূলকভাবে সহজ করে তুলবে।

৪। টিমের লক্ষ্যের দিকে খেয়াল রাখুন

সাফল্য অর্জনের একটি অন্যতম উপায় হচ্ছে লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং নিয়মিত সেই লক্ষ্যের কথা নিজেকে মনে করিয়ে দেওয়া। টিমের সাথে আলোচনা করে আপনারা কী কী অর্জন করতে চান তা লিখে রাখুন এবং কীভাবে তা অর্জন করবেন সে ব্যাপারে টিমের সদস্য ও লিডারদের সাথে আলোচনা করে একটা পরিকল্পনা তৈরি করুন। সেই পরিকল্পনায় ব্যক্তি হিসেবে আপনার ভূমিকা কী তাও বিস্তারিতভাবে বুঝে নিতে ভুলবেন না!

দীর্ঘ সময় প্রয়োজন এমন লক্ষ্যগুলোকে ছোট ছোট ভাগে বিভক্ত করে নিন। বড় প্রজেক্টকে ছোট ছোট ধাপে সাজানো এবং প্রত্যেক ধাপে কতোটা সময় লাগবে তা নির্ধারণ করার জন্য ব্যবহার্য অন্যতম একটি পদ্ধতি হচ্ছে গান্ট চার্ট তৈরি করা। এটা ব্যবহার করে প্রজেক্টের জন্য প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণ এবং প্রত্যেক ধাপে আপনাকে ও আপনার টিমকে কী কী কাজ করতে হবে তার পরিষ্কার পরিকল্পনা তৈরি সম্ভব।

৫। সঠিক যোগাযোগ বজায় রাখুন

ইন্ট্রোভার্ট বা এক্সট্রোভার্ট যেটাই হয়ে থাকেন না কেনো – টিমে সবার সাথে কার্যকরভাবে যোগাযোগ রাখতে পারা সবার জন্যই জরুরী। কাজ করতে নানা রকম চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবেন যা টিমের সদস্যদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। তাছাড়া একটি টিমে কাজ করা মানেই হচ্ছে একজনের কাজের ওপর অন্যজনের দায়িত্ব কোনো না কোনোভাবে নির্ভর করবে। টিমে কে কী নিয়ে কাজ করছে এবং কী উপায়ে তা সম্পন্ন হচ্ছে সেই বিষয়ে জানার জন্যেও যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

টিমের লক্ষ্য এবং কাজ নিয়ে আলোচনা করার সময় চুপ করে বসে না থেকে আপনিও আলোচনায় অংশগ্রহণ করুন, অন্যদের মতামতকে সম্মান করুন এবং নিজের মতামতও প্রকাশ করুন। কোনো কিছু নিয়ে আলোচনা করার সময় তা পরিষ্কারভাবে বুঝিয়ে বলা জরুরী, যাতে কোনো বিভ্রান্তি তৈরির সুযোগ না থাকে।

সবার সাথে নিজের মতামত বা তথ্য নিয়ে আলোচনা করা চাকরি ক্ষেত্রে জ্ঞান অর্জন ও চর্চার একটি পরিবেশ তৈরি করে। যা কোম্পানির সবাইকে জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে এবং বিভিন্ন বিষয়ে পারদর্শিতা অর্জন করতে উদ্বুদ্ধ করবে।

৬। দায়িত্বশীলতা প্রদর্শন করুন

দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করতে পারা আপনাকে যেমন ক্যারিয়ারে সাফল্য অর্জন করতে সাহায্য করবে, তেমনি টিমের সদস্যদের কাছে নির্ভরযোগ্য হতেও সাহায্য করবে। নিজের কাজের দিকে মনোযোগ দিন এবং যতোটা সম্ভব তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করুন। কাজটা সম্পন্ন করার সবচেয়ে কার্যকর উপায় কী তা খুঁজে বের করুন। দায়িত্বের সাথে কাজ সম্পন্ন করা টিমের ভেতর আস্থা এবং সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তুলবে।

৭। অন্যদের সাহায্য করার চেষ্টা করুন

টিমের সাফল্য যেহেতু সবার কাজের ওপরই নির্ভর করে, একজন সদস্যও যদি কাজে পিছিয়ে যায় বা কোনো সমস্যায় পড়ে তার সরাসরি প্রভাব পড়ে পুরো টিমের সাফল্যের ওপর। টিমে সবার ভূমিকা বুঝে নিয়ে ও সদস্যদের সাথে কথা বলে তারা কী নিয়ে কাজ করছেন এবং কোন জায়গায় তাদের সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে সে ব্যাপারে সচেতন থাকা আবশ্যক।

টিমের অন্যদের ব্যাপারে এটা যেমন সত্য, আপনার ব্যাপারেও সত্য। টিমের কে কী নিয়ে কাজ করছেন জানা থাকলে কোনো প্রয়োজনে আপনার কার কাছে সাহায্য চাইতে হবে তা বুঝাও সহজ হয়ে যাবে। টিমের কেউ যদি অন্যদের সাহায্য করতে আগ্রহী না থাকে তাহলে শুরুতেই এই বিষয় নিয়ে কথা বলা বা প্রয়োজনে লিডারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা উচিত।

৮। প্রয়োজনে অন্যদের সাহায্য নিন

প্রয়োজনের সময় টিমের সদস্যদের কাছ থেকে সাহায্য চাইতে দ্বিধার কিছু নেই। টিম গঠনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে একে অপরকে সাহায্য করার মাধ্যমে একটি সম্মিলিত উদ্দেশ্য অর্জন করা। আলোচনা এবং একে অন্যের পারদর্শিতা সম্পর্কে জানার মাধ্যমে সহজেই টিমের মধ্যে এই সহযোগিতার পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব।

যার কাছ থেকে সাহায্য নিচ্ছেন তাকে কৃতিত্ব দেওয়া থেকে কখনো পিছিয়ে যাবেন না। এতে করে সাহায্যকারীসহ অন্যদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব আরও অনুপ্রাণিত হবে। একই সাথে, প্রয়োজনে যে কেউ টিম থেকে সাহায্য চাইতে পারে এ বিষয়টাও সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে।

৯। অফিস ‘পলিটিক্স’-এ অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকুন

বাস্তবতা হচ্ছে সব কর্মক্ষেত্রেই এ ধরনের কিছু সমস্যা থাকে, কিছু পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু টিমের সাফল্য নিশ্চিত করতে এ ধরনের বিষয় থেকে বিরত থাকা বা অন্তত যতোটা সম্ভব দূরে থাকা জরুরী। দ্বন্দ্ব বা দ্বিমত ঠাণ্ডা মাথায় সামলানোর দক্ষতা এই ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।

আপনি কর্মক্ষেত্রে নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে চান তা নিয়ে ভাবুন। আপনার উপস্থিতি হওয়া চাই ইতিবাচক এবং অবিচলিত। অফিসের ভেতর যদি এমন কোনো পরিস্থিতি চলতে থাকে যা নিয়ে আপনার কথা বলা নিতান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে, সেক্ষেত্রেও বিচলিত নাহয়ে ভেবে চিন্তে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।

১০। অন্য কারও ওপর দোষ চাপিয়ে দেবেন না

টিমের সদস্যরা যদি যে কোনো সমস্যায় একে অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে সেই টিমের ব্যর্থ হওয়া নিশ্চিত। কোনো ভুল হলে তা স্বীকার করে নিয়ে তা থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করাই বরং শ্রেয়।

দোষারোপ করার এই মনোভাব থেকে দূরে থাকার অন্যতম উপায় হচ্ছে কোম্পানিতে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে পারা যা সবাইকে নতুন কিছু শিখতে ও নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে উদ্বুদ্ধ করবে। কোনো সমস্যা হলে ব্যক্তিগতভাবে ও টিমের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কীভাবে এই সমস্যা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এরকম কিছু যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে কী কী পদক্ষেপ নিতে হবে তার পরিকল্পনা তৈরি করে নিন।

বাস্তবতা হচ্ছে টিমওয়ার্কের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য অব্যর্থ সমাধান বলতে কিছু নেই, যা সবার জন্যই সমানভাবে কাজ করবে। এই বিষয়ে দক্ষ হওয়ার পেছনে অভিজ্ঞতা একটি বড় ভূমিকা পালন করে। আত্ম উপলব্ধি, নিজের কী প্রয়োজন তা বোঝা এবং পর্যাপ্ত যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমেই টিমের সাথে কাজ করার দক্ষতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়।