মাত্র কিছুদিন হলো পড়াশোনা শেষ করে চাকরির খোঁজ শুরু করেছেন, বিভিন্ন কোম্পানিতে কাঙ্ক্ষিত চাকরির জন্য অ্যাপ্লাই করছেন। এমনই একটি কোম্পানি থেকে একদিন চলে এলো ইন্টারভিউয়ের সুযোগ। এই একটি ইন্টারভিউ বদলে দিতে পারে আপনার জীবন!
আনন্দ আর উৎসাহ ঢেকে দিয়ে মুহূর্তের মধ্যেই আপনার মনে চাড়া দিয়ে উঠল আশঙ্কা আর ভয়। ‘যদি ইন্টারভিউ ভালো না হয়?’ ‘যদি চাকরিটা না পাই?’ এমন হাজারটা প্রশ্ন ঘুরতে শুরু করল মাথার ভেতর। এমন অবস্থা যে অন্য কিছুতে মনোযোগ দেওয়াটাই অসম্ভব।
এমন পরিস্থিতি থেকে কীভাবে রক্ষা পাওয়া যায় জানতে চান তো? তাহলে পড়তে থাকুন, কারণ চাকরির ইন্টারভিউয়ে কীভাবে সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ধরে রাখা যায় তারই চমৎকার কিছু টিপস নিয়ে সাজানো আজকের আর্টিকেল।
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন
আত্মবিশ্বাস শব্দের মানেই হচ্ছে নিজেকে বিশ্বাস করা। তাই যে কোনো ইন্টারভিউয়ে ভালো করার প্রথম ধাপ হচ্ছে নিজের ওপর বিশ্বাস গড়ে তোলা। নিজেকে ছোট করে দেখা বা চাকরিটার জন্য নিজেকে যোগ্য মনে না করা আপনার আত্মবিশ্বাসকে নষ্ট করে দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজেই আসবে না।
নেতিবাচক নয়, বরং ইতিবাচকভাবে নিজেকে বোঝান। আপনার আগের সফলতার কথাগুলো ভাবুন এবং ঠিক কী কী কারণে এই চাকরির জন্য আপনি যোগ্য তা নিজেকে মনে করিয়ে দিন। দৃঢ় আত্মবিশ্বাস স্থাপনের প্রথম ধাপ হলো নিজের ওপর থেকে সন্দেহ দূর করা।
আপনি যদি নিজেই নিজের ওপর ভরসা না রাখেন, তাহলে ইন্টারভিউয়ারেরও আপনার ওপর ভরসা না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। সামাজিক মনস্তত্ববিদ অ্যামি কাডি বলেছেন, “আপনি অন্যের ওপর কী প্রভাব ফেলছেন সে বিষয়ে কম চিন্তা করে বরং নিজের ওপর কী প্রভাব ফেলছেন সে বিষয়ে বেশি ভাবুন।”
সাফল্যের কথা কল্পনা করুন
ইন্টারভিউ, পরীক্ষা বা যে কোনো বড় সিদ্ধান্তের আগে আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনাটা নিয়ে চিন্তা করা। Pugsquest এর HR বিভাগের প্রধান জে স্কটের মতে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য এর উল্টোটা করা জরুরি। তিনি বলেন, “ক্যান্ডিডেটদের উচিত কিছুক্ষণের জন্য ইন্টারভিউ প্রসেসের কথা ভাবা বাদ দিয়ে চাকরি পাওয়ার পরের সময়ের কথা ভাবা।”
তাঁর মতে এই ইতিবাচক চিন্তার প্রক্রিয়াটি আপনার মনোবল বাড়াবে এবং ইন্টারভিউ আরও ভালোভাবে সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে। “এই মনোবল বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই আত্মবিশ্বাস বাড়ায়।”
ধৈর্য্য বাড়ানোর চেষ্টা করুন
আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি সাধারণত দুশ্চিন্তার জন্ম দেয়। এরকম বড় একটি পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা হওয়াটা স্বাভাবিক, কিন্তু একটু চেষ্টা করলেই আপনি ধৈর্য্য বৃদ্ধির মাধ্যমে আরও আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
আপনার উৎসাহ বাড়ে এবং দুশ্চিন্তা দূর হয় এমন কাজে মনোযোগ দিন। তা হতে পারে ব্যায়াম বা মেডিটেশন। অথবা হতে পারে পছন্দের সেই গানগুলো শোনা যা সবসময় আপনার মন ভালো করে দেয়। এছাড়া কিছু নিশ্বাসের কৌশল অবলম্বন করেও দুশ্চিন্তা কমানো ও আত্মবিশ্বাস বাড়ানো যায়। Healthline এর মতে এ ধরনের ব্যায়াম আমাদের শরীরকে শিথিল করে ও শান্ত থাকার ক্ষমতা বাড়ায়।
এই ধৈর্য্যশীল ও নিশ্চিন্ত মনোভাব আপনাকে যে কোনো ইন্টারভিউ চমৎকারভাবে শুরু করার সুযোগ করে দেবে।
বর্তমানে মনোযোগ দিন
যে কোনো ক্ষেত্রেই দুশ্চিন্তার একটা মূল কারণ সাধারণত ভবিষ্যৎ নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করা। পরবর্তীতে কী হবে তা নিয়ে কম ভেবে বরং বর্তমানে মনোযোগ দিন।
বিশেষ করে ইন্টারভিউ চলার সময় ইন্টারভিউয়ার আপনাকে নিয়ে কী ভাবছেন, চাকরি আদৌ হবে কি না – এসব চিন্তায় হারিয়ে যাওয়াটা খুব সম্ভব। এতে করে আপনার আত্মবিশ্বাস তো কমবেই, ইন্টারভিউয়ের দিকে মনোযোগও কমে যাবে যা কোনোভাবেই ভালো নয়।
তাই ভবিষ্যতের কথা না ভেবে বরং ইন্টারভিউয়ার এখন কী বলছেন তার দিকে খেয়াল করুন ও সম্পূর্ণ মনোযোগ ধরে রেখে তাঁর প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিন। মনোযোগ বাড়ানোর কিছু উপায় হিসেবেও আগের মতোই মেডিটেশন বা নিশ্বাসের ব্যায়াম করা যেতে পারে।
নিজেকে প্রস্তুত করুন
আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য প্রস্তুতির কোনো বিকল্প নেই। আপনি নিজেকে যত ভালোভাবে তৈরি করতে পারবেন, আপনার মানসিক চাপ ততই কমে যাবে। তাছাড়া প্রস্তুতি নেওয়ার মানেই হচ্ছে ইন্টারভিউয়ে ভালো পারফর্ম করার সম্ভাবনা বৃদ্ধি, ভুল কিছু বলা বা কিছু মনে না পড়ার সম্ভাবনা কমা।
আপনার সিভি ও পোর্টফোলিও ভালোভাবে দেখে নিন, সাধারণত যেসব প্রশ্ন করা হয় তার উত্তর তৈরি রাখুন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি কোনো বন্ধুর সাথে, এমনকি নিজে নিজে হলেও ইন্টারভিউয়ের সম্ভাব্য প্রশ্নোত্তরগুলো একবার অভ্যাস করে নিতে পারেন। এতে করে আপনার ভয় দূর হবে এবং নিজের প্রস্তুতি সম্পর্কে একটা ভালো ধারণা পেয়ে যাবেন।
পোশাকের দিকে গুরুত্ব দিন
আপনি নিজেকে কীভাবে তুলে ধরছেন তা আপনার ইন্টারভিউয়ারকে যেমন প্রভাবিত করবে, আপনাকেও ঠিক তেমনি প্রভাবিত করবে। আপনি কেমন পোশাক পড়ে আছেন তার ওপর আপনার মানসিক অবস্থা অনেকাংশেই নির্ভর করছে।
তাই আপনার ইন্টারভিউ যদি অনলাইনেও হয়, এমন পোশাক বেছে নিন যাতে আপনি আত্মবিশ্বাসী অনুভব করবেন। তা অবশ্যই হতে হবে প্রফেশনাল এবং আরামদায়ক। তার পাশাপাশি, কী পরবেন তা বেছে নেওয়ার সময় আপনি কোন কাজের জন্য ইন্টারভিউ দিচ্ছেন সেটাও মাথায় রাখা জরুরি।
আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুন
এতো কিছুর পরেও ইন্টারভিউ দিয়ে গিয়ে একটু ভয় পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের এই সামান্য অভাবকে আপনার পারফর্মেন্সের ওপর প্রভাব ফেলতে দেবেন না।
ইন্টারভিউয়ে সফল হওয়ার একটা প্রধান কৌশল হচ্ছে ইন্টারভিউয়ারের মনে ইতিবাচক ছাপ ফেলতে পারা। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের অভাবে যদি আপনি ঠিকভাবে কথা না বলতে পারেন তাহলে এটা সম্ভব নয়। তাই যদিও আপনি চিন্তিত থাকেন, বাকিদেরকে তা বুঝতে না দিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে কথা বলুন।
নিজেকে আত্মবিশ্বাসী হিসেবে তুলে ধরার জন্য ইন্টারভিউয়ের শুরুতে সবার সাথে কুশল বিনিময় করা, প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা এবং সুযোগ অনুযায়ী নিজেও প্রশ্ন করে কোম্পানি ও কাজের ব্যাপারে আগ্রহ দেখানো কার্যকরী উপায়।
সঠিক যোগাযোগ বজায় রাখুন
“আত্মবিশ্বাসের সাথে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে উত্তর দেওয়ার আগে ২-৩ সেকেন্ড সময় নেওয়া,” বলেছেন কনডন।
আত্মবিশ্বাসের অভাব থাকলে সাধারণত মানুষ দ্রুত কথা বলে বা খুব তাড়াতাড়ি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করে। এতে করে ভুল উচ্চারণ, এমনকি ভুল উত্তর দেওয়ার সম্ভাবনা থাকে অনেক বেশি। যাতে করে ইন্টারভিউয়ার সহজেই বুঝে যাবেন যে আপনি চিন্তিত।
এছাড়া দ্রুত কথা বললে অনেক সময় আপনার কথা বুঝতে ইন্টারভিউয়ারের অসুবিধা হতে পারে যা কারোর জন্যই উপযোগী নয়। তাই শান্তভাবে চিন্তা ভাবনা করে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিন।
ভুল স্বীকার করে নিতে শিখুন
বাস্তবতা হচ্ছে সম্পূর্ণ আত্মবিশ্বাসী মানুষও অনেক সময় ভুল করে। কোনো মানুষের পক্ষেই সম্পূর্ণ নির্ভুল ইন্টারভিউ দেওয়া সম্ভব না। তবে একজন সত্যিকার আত্মবিশ্বাসী মানুষ জানেন কীভাবে নিজের ভুল স্বীকার করে নিতে হয়।
Thrive Agency এর HR ম্যানেজার সিনডি ডিউসারের মতে, “কোনো কিছু না জানাকে ভয় পাবেন না। কেউই সবকিছু জানে না। আপনি যে চাকরি চাইছেন তার সাথে সম্পৃক্ত কিছু যোগ্যতা অবশ্যই আপনার থাকতে হবে। তাই বলে ‘আমি এখনও এটা জানি না’ বলতে ভয় পাবেন না। যখন আপনি কিছু একটা না জানেন, সেটা আত্মবিশ্বাসের সাথে স্বীকার করুন এবং এ বিষয়ে শেখার ও জানার বিষয়ে আগ্রহ দেখান।”
নিজের ব্যক্তিত্ব বজায় রাখুন
দিনশেষে ইন্টারভিউয়ের মূল লক্ষ্য হচ্ছে আপনার সম্পর্কে জানা। তাই নিজের ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরতে ভয় পাবেন না। কোনো ‘আদর্শ’ ক্যান্ডিডেটের মতো আচরণ না করে বরং আপনার ব্যক্তিগত দক্ষতা ও দুর্বলতাগুলোকে তুলে ধরুন। নিজের সম্পর্কে সৎ ও সঠিক ধারণা দিতে প্রস্তুত এমন ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষকে ইন্টারভিউয়ারের পছন্দ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক ক্ষেত্রেই বেশি।
“নিজের ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরা এবং পরিবেশের ওপর নিজের প্রভাব ফেলাটা গুরুত্বপূর্ণ,” বলেন ডিউসার। “যদি হাসার মতো কোনো কথা বলা হয়, হাসুন। আপনাকে খারাপ অনুভব করানো ইন্টারভিউয়ের উদ্দেশ্য না, এর উদ্দেশ্য আপনারা একে অপরের সাথে কাজ করতে প্রস্তুত কিনা কথোপকথনের মাধ্যমে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া।”
দুশ্চিন্তা না করে তাই হাসিমুখে স্বাভাবিকভাবে কথা বলুন। কারণ হাসিখুশি ও ইতিবাচক আচরণ যে কোনো মানুষের মনে উল্লেখ্য ছাপ ফেলার অন্যতম উপায়।