পারসোনাল স্টেটমেন্ট কীভাবে লিখবেন?

September 29, 2021 |
Views: 467

পারসোনাল স্টেটমেন্ট অনেক ধরনের এবং অনেক উদ্দেশ্যে লেখা হয়ে থাকে। কিন্তু সব ক্ষেত্রেই এর মূল উদ্দেশ্য থাকে পাঠকের কাছে নিজের যোগ্যতা সংক্ষেপে উপস্থাপন করা। সেই যোগ্যতাটা হওয়া চাই আবার যে চাকরির আবেদন করছেন তার সাথে সম্পর্কিত।

কিন্তু মাত্র কয়েকটা লাইনে নিজের পুরো দক্ষতা-অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ সফলভাবে উপস্থাপন করবেন কী করে? চলুন সেই ব্যাপারেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস জেনে নেই।

পারসোনাল স্টেটমেন্ট কী?

পারসোনাল স্টেটমেন্ট হচ্ছে সিভির শুরুতে সংক্ষেপে নিজের পরিচয় দেওয়া এবং অন্য আবেদনকারীদের থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করার উদ্দেশ্যে লেখা ৩-৪ লাইনের একটি অনুচ্ছেদ। অর্থাৎ কারও সিভির শুরুতে নাম-ঠিকানার পরে নিজের সম্পর্কে যে অল্প কিছু বাক্য লেখা থাকে – সেটাই পারসোনাল স্টেটমেন্ট।

কেনো গুরুত্বপূর্ণ?

পারসোনাল স্টেটমেন্ট আপনার সিভির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলোর মধ্যে একটি। সিভির শুরুতেই মাত্র অল্প কয়েক লাইনে নিজেকে নিয়োগদাতার কাছে যোগ্য প্রমাণ করার সুযোগ এটা। তাছাড়া একটি ভালো সারসংক্ষেপ পাঠককে সিভির বাকি অংশের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে সক্ষম। অর্থাৎ সফলভাবে পারসোনাল স্টেটমেন্ট লিখতে পারলে আপনি নিজের সিভিকে আর সবার থেকে আলাদা করে তুলতে পারবেন সহজেই।

কতো বড় হওয়া উচিত?

আপনার পারসোনাল স্টেটমেন্ট ১৫০ শব্দ অর্থাৎ সিভির ৪-৫ লাইনের চেয়ে বড় হওয়া উচিত নয়। এর চেয়ে বড় স্টেটমেন্ট লেখা মানে সাধারণত তাতে অপ্রয়োজনীয় তথ্য রয়েছে এবং সিভিতে অতিরিক্ত জায়গা দখল করছে।

পারসোনাল স্টেটমেন্ট লেখার সময় অবশ্যই মনে রাখবেন যে এটা আপনার সিভির সারসংক্ষেপ, কভার লেটার নয়। তাই একে সংক্ষিপ্ত এবং প্রাসঙ্গিক রাখা খুবই জরুরি।

কী কী তথ্য থাকা উচিত?

একটি সফল পারসোনাল স্টেটমেন্টে এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর অবশ্যই থাকতে হবে –

আপনি কে?
আপনার কী ধরনের দক্ষতা আছে?
আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য কী?

কোনো পয়েন্ট যাতে বাদ না পরে যায় তা নিশ্চিত করতে মূল স্টেটমেন্ট লেখার আগে প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর বুলেট পয়েন্ট আকারে ড্রাফট করে নিতে পারেন। কী ধরনের স্কিল উল্লেখ করা উচিত তা বুঝতে চাইলে যে চাকরির আবেদন করছেন সেই সার্কুলারটি ভালোভাবে পড়ুন। যে কোনো চাকরির সার্কুলারে নিয়োগদাতা কী ধরনের স্কিল খুঁজছেন তা উল্লেখ করা থাকে। আপনার পারসোনাল স্টেটমেন্টকে প্রাসঙ্গিক রাখতে সেই স্কিলগুলোই এখানে উল্লেখ করুন।

যেমন, চাকরির বিবরণীতে যদি বলা হয় সঠিক ক্যান্ডিডেটের ভালো বিজনেস অ্যানালাইসিস জানতে হবে, তাহলে এই অংশে লিখতে পারেন যে আপনার বিজনেস অ্যানালাইসিস এবং প্রবলেম সলভিং-এর অভিজ্ঞতা রয়েছে।

কীভাবে লিখবেন?

‘আপনি কে’ এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে নিজের পরিচয় দিয়ে পারসোনাল স্টেটমেন্ট শুরু করুন।

পারসোনাল স্টেটমেন্ট শুরুর একটি উদাহরণ হতে পারে – ‘A qualified and enthusiastic X, with over Y years’ worth of experience, currently searching for a Z position to utilise my skills and take the next step in my career’.

কোন ‘টেন্স’ ব্যবহার করে লিখবেন?

আপনি নিজের পছন্দমতো যে কোনো টেন্স ব্যবহার করে লিখতে পারেন। কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যাতে পুরো স্টেটমেন্টে একই ধরনের বাক্য ব্যবহৃত হয়। একই অনুচ্ছেদে ভিন্ন ভিন্ন টেন্স বা পারসন ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।

অর্থাৎ, ‘I am a recent business economics graduate. Excellent analytical and organisational skills.’ – এরকম স্টেটমেন্ট কোনোভাবেই লেখা যাবে না।

এই স্টেটমেন্ট লেখার পেছনে কতোটা সময় লাগতে পারে?

পারসোনাল স্টেটমেন্ট যেমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ভিন্ন, তেমনি প্রত্যেক চাকরির জন্যও ভিন্ন ভিন্ন হওয়া উচিত। কেননা, প্রতিটি চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় স্কিল ও অভিজ্ঞতা কিছুটা হলেও আলাদা।একবার সময় নিয়ে একটা পারসোনাল স্টেটমেন্ট লিখবেন এবং প্রত্যেক চাকরির আবেদনে সেই একই অনুচ্ছেদ ব্যবহার করবেন – সেই ক্ষেত্রে আপনার স্টেটমেন্টের সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

হ্যাঁ, প্রত্যেক বার চাকরির আবেদন করতে গিয়ে সেই চাকরির জন্য প্রাসঙ্গিক পারসোনাল স্টেটমেন্ট লিখতে হয়তো কিছুটা বেশি সময় লাগবে। কিন্তু এই অতিরিক্ত পরিশ্রমটা নিয়োগদাতার কাছে আপনার সিভিকে বিশেষত্ব দিতে পারে। মনে রাখবেন, ৫০টি চাকরিতে অপ্রাসঙ্গিক সিভি পাঠানোর চেয়ে ৫টি চাকরিতে প্রাসঙ্গিক ও যথাযথ সিভি পাঠানো আপনার ক্যারিয়ারের জন্য বেশি ভালো সুযোগ বয়ে আনবে।

পারসোনাল স্টেটমেন্ট মাত্র তিন-চার লাইনের ছোট্ট একটি অনুচ্ছেদ হলেও এর ক্ষমতা অনেক। একটি সফল স্টেটমেন্ট হতে পারে আপনার পছন্দের চাকরি পাওয়ার কারণ। তাই আর দেরি না করে আজই লিখতে শুরু করে দিন আপনার পার্ফেক্ট পারসোনাল স্টেটমেন্ট!