জীবনের প্রথম চাকরি-ই হোক, বা নতুন কোম্পানিতে সিনিয়র পর্যায়ের পজিশন – চাকরির প্রথম দিন নিয়ে সবারই কমবেশি ভয় থাকে। এই কোম্পানিতে হয়তো কাউকেই আপনি চেনেন না, টিমের পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নেই, এমনকি এখানে নিজের দায়িত্বটাও হয়তো পুরোপুরি পরিষ্কার না এখনও। এমন অপরিচিত পরিবেশে কে না ভয় পায় বলুন?
প্রথমদিনের এই বিচলিত অবস্থা থেকে আপনাকে মুক্তি দিতে তাই এই আর্টিকেলে থাকছে এমন কিছু টিপস যা আপনার ভয় দূর করে আত্মবিশ্বাসের সাথে নতুন চাকরি শুরু করতে সাহায্য করবে!
চাকরির দায়িত্বগুলো আবার একটু মনে করে নিন
প্রথম দিনে এতো নতুনত্বের সাথে মানিয়ে নিতে গিয়ে আমরা অনেক সময় আমাদের কাজের মূল উদ্দেশ্যটাই ভুলে যাই।
তাই নতুন অফিসে যাওয়ার আগে আরও একবার এই পজিশনে আপনার কাজের বিবরণ ভালোভাবে পড়ে নিন এবং নিজের দায়িত্বগুলো মনে করে নিন। এতে করে আপনাকে উদ্দেশ্যহীন অনুভব করতে হবে না, বরং প্রথম সপ্তাহে কী এবং কতোটুকু কাজ করতে হবে তার ব্যাপারেও একটা ধারণা থাকবে।
দ্বিতীয়ত, কেনো এই চাকরি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং কীভাবে চাকরিটা পেয়েছেন তা আবার মনে করুন। চাকরিদাতা আপনাকে নিয়োগ দেওয়ার পেছনে অবশ্যই উপযুক্ত কারণ রয়েছে। আপনার দক্ষতার ওপর তাঁর বিশ্বাস আছে এবং আপনি এই চাকরির জন্য যোগ্য ব্যক্তি বলেই এই দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছে। তাই নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন।
“আজকে এই চাকরির প্রথম দিন” – এটা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে বরং এই চাকরির দৈনন্দিন কাজের দিকে মনোযোগ দিলে ভয় অনেকটাই কেটে উঠবে।
নিজেকে অতিরিক্ত চাপ দেওয়া থেকে বিরত থাকুন
নতুন কোম্পানিতে নিজের দক্ষতা দেখিয়ে প্রথম দিনেই সবাইকে মুগ্ধ করে দিতে কে না চায়? কিন্তু শুরুতেই নিজের ওপর এতোটা চাপ তৈরি না করাই আসলে ভালো।
সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা আপনি ইতোমধ্যেই পার করে এসেছেন, নাহলে এই চাকরি আপনার হতোই না। এখন আপনার দায়িত্ব শুধুমাত্র আত্মবিশ্বাস বজায় রাখা, অফিসে কারও সাথে খারাপ আচরণ না করা এবং শেখার আগ্রহ বজায় রাখা।
এই পর্যায়ে কী করবেন না করবেন সেই ব্যাপারে নিশ্চিত না থাকাটাই স্বাভাবিক। আপনার বস সেটা ভালোভাবেই জানেন। তাই প্রশ্ন করতে ঘাবড়াবেন না। আর কোনো ভুল করে ফেললে তা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা না করাই ভালো। ভুল থেকেই মানুষ শেখে, তাই চাকরিদাতার জন্য শুরুর দিকে আপনার ছোটখাটো ভুলকে খারাপ চোখে না দেখাই স্বাভাবিক।
তবে নিজের ভুল স্বীকার করার ব্যাপারে পিছপা হবেন না। ভুল ঢাকার চেষ্টা করে সময় নষ্ট করার চেয়ে সেই ভুল স্বীকার করে নিয়ে তার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করলে তা সবার জন্যই ভালো। হতে পারে আপনি সহজেই সমাধান পেয়ে যাবেন। তাছাড়া নিজের কর্মকাণ্ডের দায়িত্ব নিজে নিতে না চাওয়াতে পেশাদারিত্বের অভাবই প্রকাশ পাবে শুধুমাত্র।
নিজেকে মনে করিয়ে দিন যে আপনি সারা জীবন ‘নতুন’ থাকবেন না
নতুন পরিবেশ, নতুন মানুষ, নতুন দায়িত্ব – এসব কিছুর সাথে মানিয়ে নিতে কিছুটা ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু এসব কিছুই সাময়িক। কিছুদিন পার হলেই আপনি এই নতুন পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন। এর চেয়ে অনেক কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েই আপনি চাকরিতে যোগদান করতে পারছেন। নিজেকে তাই মনে করিয়ে দিন যে নিয়োগ প্রক্রিয়া পার করে এতদূর যখন আসতে পেরেছেন, নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়া সেখানে কোনো কঠিন বিষয়ই না।
বেশি দিন যাবার আগেই নতুন দায়িত্বগুলো আপনি গুছিয়ে নেবেন, অফিসের সবার সাথে পরিচয় হবে, সহকর্মীদের সাথে কীভাবে কথা বলতে হবে এবং কী বললে তা সহজভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না তাও বুঝে যাবেন। এতো নতুনত্ব উপভোগ করার সুযোগ বেশি একটা আসে না, আসলেও বেশিদিন থাকে না। তাই এই সময়টাকে ভয় না পেয়ে উপভোগ করার চেষ্টা করুন।
সর্বোত্তম আচরণ বজায় রাখুন
কর্মস্থানের মৌলিক নিয়মগুলো মেনে চলা এই পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি জরুরি। সময়মতো অফিসে যাওয়া, মনোযোগের সাথে কাজ করা, ঘন ঘন মোবাইল ব্যবহার না করা, চাকরির সাথে অপ্রাসঙ্গিক জিনিস পড়া বা দেখা থেকে বিরত থাকে এবং সহকর্মীদের সাথে ভালো ব্যবহার করা – এই সাধারণ বিষয়গুলোর দিকে একটু খেয়াল রাখলে আপনার চাকরির শুরু ভালো ভাবেই হবে।
নতুন চাকরিতে ইতিবাচক মনোভাব এবং শেখার আগ্রহ নিয়ে যাত্রা শুরু করলে নতুন পরিবেশ ও দায়িত্বের সাথে মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যাই হবে না।
কোনো দায়িত্ব নেওয়ার আগে ভেবে দেখুন
চাকরিদাতাকে খুশি করার প্রচেষ্টায় অনেক সময় আমরা এমন দায়িত্ব নিয়ে ফেলি যা আমাদের পক্ষে পালন করা সম্ভব নয়। এবং তাতে বরং হীতে বিপরীত হয়।
যে কোনো নতুন কাজ বা দায়িত্ব নেওয়ার আগে আপনি তা করতে পারবেন কিনা সেটা ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা করে নিন। প্রয়োজনে প্রশ্ন করুন এবং কাজ শুরু করার আগে কী করতে হবে তা পরিষ্কারভাবে জেনে নিন।
একইভাবে, আপনার দায়িত্ব যদি হয় কোনো টিমের নেতৃত্ব দেওয়া তাহলে প্রথম দিন এসেই সবাইকে নানান রকম নির্দেশনা দেওয়া শুরু না করে আগে টিমের সদস্যদের কাজ ও স্কিল সম্পর্কে জানুন। এবং আপনার বিশেষজ্ঞতার ওপর তাদের বিশ্বাস অর্জন করার চেষ্টা করুন। টিমের সদস্যরা যখন আপনাকে সম্মান করবে এবং আপনার নির্দেশনার ওপর ভরসা রাখতে পারবে, তখন আপনার কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে উঠবে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো লিখে রাখার চেষ্টা করুন
সাধারণ নির্দেশনা, লগইন বিষয়ক তথ্য অথবা কাজের তালিকা – যাই মনে রাখার প্রয়োজন হোক না কেনো, কাজে অভ্যস্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত স্মৃতিশক্তির ভরসায় না থেকে সব তথ্য লিখে রাখাটাই ভালো। বিশেষ করে যখন একই দিনে অল্প সময়ের মাঝে সহকর্মীদের নাম থেকে শুরু করে আরও অনেক নতুন তথ্য আপনার জানতে ও মনে রাখতে হবে। তাই হাতের কাছে কাগজকলম রাখুন এবং গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানার পরপরই তা লিখে রাখুন।
এতে করে আপনাকে কী করতে হবে এবং কী জানতে হবে সেই ব্যাপারে সচেতন থাকতে পারবেন। আপনার মানসিক চাপও কমে আসবে।
নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন এবং নতুন পরিবেশের সাথে পরিচয় যেমন ভয়ের, তেমনি আনন্দেরও। ঘাবড়ে না গিয়ে তাই বরং উৎসাহ ও আত্মবিশ্বাসের সাথে এই অভিজ্ঞতাকে উপভোগ করুন। তাহলে খুব শীঘ্রই এই পরিবর্তনে অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারবেন।