অনেককেই দেখা যায় নিজের কোন কাজে আগ্রহ আছে তা নিয়ে তেমন একটা মাথাই ঘামান না। যে চাকরির সুযোগ সামনে আসে তাতেই কাজ শুরু করে দেন। আর তা হবে না-ই বা কেনো? আগ্রহের বিষয় খুঁজে বের করা তো খুব সহজ কাজ নয়। কেউ এসে আমাদের কানে কানে বলে দিয়ে যায় না এই কঠিন প্রশ্নের উত্তর। কিন্তু – ক্যারিয়ার যদি হয় অপছন্দের এবং কাজে যদি আগ্রহ না থাকে, বার্নআউট হয়ে যাওয়া খুবই স্বাভাবিক। সে থেকে জন্ম নিতে পারে বিষণ্নতা ও দুশ্চিন্তার মতো নানারকম সমস্যা।
১। আগে আপনার আগ্রহের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবুন
নিজের ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় প্রথম ধাপ হওয়া উচিত আপনার কী কী কাজ বা বিষয়ে আগ্রহ আছে তা নিয়ে চিন্তা করা।
স্কুলে আপনার পছন্দের বিষয় কোনটা ছিল এবং কেনো সেই বিষয়টা আপনার প্রিয় ছিল? অথবা যদি এর আগে কোনো ইন্টার্নশিপ বা স্বেচ্ছাসেবী কাজ করে থাকেন, সেই কাজের কোন অংশটি আপনার ভালো লেগেছে? এমন কি কোনো বিষয় আছে যা নিয়ে পড়াশোনা করতে বা শিখতে আপনার ভালো লাগে? কী কী বিষয়ে আগ্রহ আছে বোঝার পর ভেবে দেখুন কীভাবে সেই দক্ষতাগুলো ভবিষ্যতে ক্যারিয়ারে কাজে লাগাতে পারবেন।
২। আপনার দক্ষতাগুলো কী তা ভেবে বের করুন
ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় নিজের সহজাত দক্ষতা ও গুণগুলোর সাথে সামঞ্জস্যতা থাকা সাফল্যকে তুলনামূলকভাবে সহজ তো করেই, পাশাপাশি কাজ নিয়ে ভয় বা উদ্বেগও কমাতে সাহায্য করে। নিজের দক্ষতার বিষয় নিয়ে কাজ করে আরও বেশি সফল ও পরিতৃপ্ত অনুভব করা সম্ভব।
প্রথমে নিজের দক্ষতা ও গুণগুলো ভেবে বের করুন এবং তারপর এইসব দক্ষতা ব্যবহার করে সফল হওয়ার মতো ক্যারিয়ারগুলোর একটি তালিকা বানান। যেমন আপনার যদি খুব ভালো অর্গানাইজেশনাল স্কিলস থাকে, তা ব্যবহার করে ইভেন্ট প্ল্যানার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব।
৩। টাকার ব্যাপারে ভুলে যান (আপাতত)
চাকরির চাহিদা কেমন এবং বেতন কেমন পাওয়া যাবে – ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পেছনে অন্যতম একটু ভূমিকা থাকে এই প্রশ্নগুলোর। আর হওয়াটাও স্বাভাবিক। কিন্তু একটা জিনিস ভুলে গেলে চলবে না। কাজ যদি আপনার অপছন্দের হয়, টাকার অঙ্ক যতো বেশিই হোক না কেনো – তা আপনাকে শান্তি দিতে পারবে না। তাই কোন ক্যারিয়ারে কতো টাকা বেতন পাওয়া সম্ভব এটা ভেবে চাকরির সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো।
আপনার যদি টাকার কোনো প্রয়োজন না থাকতো, কোন কাজটা আপনি ফ্রিতে করতে রাজি হতেন? আপনি কি আনন্দের সাথে ও বিনামূল্যে নিজের সময় ও শ্রম এই কাজে ব্যয় করতেন? কোনো কাজের ব্যাপারে যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হয় ‘হ্যাঁ’, তাহলে সেই পেশাই আপনার জন্য পার্ফেক্ট।
৪। আপনার শখগুলোর তালিকা তৈরি করুন
অবসর সময়ে কী করতে উপভোগ করেন? স্ট্যাম্প সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে ফুটবল খেলা পর্যন্ত – শখ আপনার যাই হোক, ক্যারিয়ার বেছে নেওয়ায় তা অনুপ্রেরণা যোগাতে সক্ষম।
সবচেয়ে ভালো হয় আপনি যদি নিজের প্রিয় শখটাকে ফুল-টাইম ক্যারিয়ারে রূপান্তর করতে পারেন। যেমন ধরুন, আপনি যদি অবসর সময়ে বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়স্বজনের জন্য জন্মদিন বা অন্যান্য উৎসব উপলক্ষে নানান রকম কার্ড বানাতে পছন্দ করেন, তাহলে এইসব কার্ড অনলাইনে বিক্রি করার মাধ্যমে নিজের একটি ব্যবসা গড়ে তোলা সম্ভব।
আবার আপনার পছন্দের কাজ যদি লেগো দিয়ে বিভিন্ন জিনিস বানানো, তাহলে স্থপতি, নির্মাণ কাজের ব্যবস্থাপক বা গ্রাফিক ডিজাইনারের মতো ক্যারিয়ারগুলো আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। কারণ এসব ক্যারিয়ারে লেগো দিয়ে স্থাপনার তৈরির মতোই সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতাকে ব্যবহার করে কাজ করতে হয়।
৫। ক্যারিয়ার বিষয়ক পরামর্শদাতার সাথে কথা বলুন
খরচ একটু বেশি পড়লেও, ক্যারিয়ার পরামর্শকের সাহায্য নেওয়া পরবর্তীতে অনেকটা সহায়ক হতে পারে। বিশেষ করে এর মানে যদি হয় অপছন্দের একটি বিষয় নিয়ে চার-পাঁচ বছর পড়াশোনা করার মতো ভুল থেকে বেঁচে যাওয়া।
ক্যারিয়ার পরামর্শকের সাথে কথা বলা বিশেষ সাহায্য করবে যখন আপনি কোনো নির্দিষ্ট ক্যারিয়ারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন নি। কারণ তাঁদের কাজ হচ্ছে আপনার লক্ষ্য, আগ্রহ, নীতি ও পছন্দ-অপছন্দ খুঁজে বের করতে সাহায্য করা এবং নিজেকে আরও ভালোভাবে বোঝার সম্ভাবনা গড়ে তোলা। আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়ে থাকেন তাহলে আপনার বিশ্ববিদ্যালয় কোনো ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং সেবা প্রদান করে কিনা সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন।
৬। আপনার কাছে কোন জিনিসটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা নিয়ে চিন্তা করুন
কোন ক্যারিয়ারটা আপনার জন্য সঠিক তা বোঝার জন্য আপনার কাছে কোন জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা জরুরী। তা হতে পারে আপনার কাজের জন্য স্বীকৃতি পাওয়া, নিজের নীতি ধরে রেখে কাজ করা অথবা নিজের দেশ ও বিশ্বের উন্নয়নে ভূমিকা রাখা।
এই ধাপে নেওয়া তথ্য ও সিদ্ধান্ত ব্যবহার করে আপনার জন্য কোন ধরনের ক্যারিয়ার সবচেয়ে উপযুক্ত এবং তা থেকে আপনি কী অর্জন করতে চান তা বুঝতে পারবেন। কারণ সাফল্যের সংজ্ঞা ব্যক্তিভেদে সবসময় এক হয় না।
৭। ছোটবেলার স্বপ্নগুলোর কথা মনে করুন
ছোটবেলায় বড় হয়ে কী হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন আপনি? মহাকাশচারী? নাকি চিকিৎসক? সেই স্বপ্ন আপনার জন্য ততোটা অধরা নাও হতে পারে।
আপনার ছোটবেলার স্বপ্ন যদি বর্তমান ব্যক্তিত্ব ও আগ্রহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে তা আপনার জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নাও হতে পারে। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রেই এই আগ্রহগুলো তাঁদের ব্যক্তিত্বের একটি অংশকে প্রতিফলিত করে। তাই ছোটবেলার স্বপ্নগুলো বিশ্লেষণ করে আপনার ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার খুঁজে পেয়েও যেতে পারেন।
৮। বিভিন্ন ক্যারিয়ার নিয়ে পড়াশোনা করুন
একবার আপনার আগ্রহ ও দক্ষতা নিয়ে ধারণা হয়ে গেলে সম্ভাব্য ক্যারিয়ারগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন এবং প্রতিটি ক্যারিয়ার নিয়ে রিসার্চ করুন। এই ক্যারিয়ারে প্রতিদিন কী কী কাজ করতে হয় এবং কোন ধরনের সাংগঠনিক পরিবেশে এই কাজের সুযোগ আছে? কোন স্কিলগুলো কাজে লাগে এবং কোন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করতে হয়? এই ক্যারিয়ারে চাকরির সুযোগ ও চাহিদা কেমন? আপনি কি পাঁচ বছর পর নিজেকে প্রতিদিন এই ক্যারিয়ারে দেখতে চান?
প্রয়োজনে এই ক্যারিয়ারে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলুন। তাঁদেরকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করুন এবং গুগল অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্রতিটি ক্যারিয়ার সম্পর্কে যতোটা সম্ভব তথ্য খুঁজে বের করুন। কারণ পর্যাপ্ত তথ্য ছাড়া কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়।
নিজের জন্য উপযুক্ত ক্যারিয়ার খুঁজে বের করা একটি কঠিন ও সময়সাপেক্ষ কাজ। কিন্তু কর্মজীবনে সাফল্যের পাশাপাশি শান্তি ও পরিপূর্ণতা পেতে চাইলে ক্যারিয়ারের শুরুতে এই ধাপটি এড়িয়ে না যাওয়াই ভালো। সঠিক ক্যারিয়ারের সন্ধানে আপনার ভবিষ্যৎ অভিযানের জন্য শুভকামনা।