ভার্চুয়াল এই যুগে রিমোট চাকরি পাবেন কীভাবে?

December 19, 2021 |
Views: 574

গত দুই বছরে সারা বিশ্বের চাকরি ক্ষেত্রেই বিশাল পরিবর্তন এসেছে। চাকরির মার্কেট যেমন পরিবর্তন হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে কর্মপদ্ধতিও। যার হাত ধরে পরিবর্তন এসেছে চাকরি সন্ধান ও নিয়োগ প্রক্রিয়াতেও।

অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন রিমোট চাকরির সুযোগ বেশি এবং চাহিদাও কোনো দিক দিয়ে কম না। Owl Labs এর State of Remote Work 2020 রিপোর্ট অনুযায়ী ৭৪% কর্মীদের মতে রিমোট কাজ করার সুযোগ থাকলে তাদের চাকরি ছাড়ার সম্ভাবনা কম।

তবে চাকরি রিমোট হোক বা নন-রিমোট, প্রায় সব পদের জন্যই এখন চাকরির সন্ধান ও নিয়োগের অনেকটাই হয় ভার্চুয়্যালি। তাই ভার্চুয়াল এই জগতে চাকরির সন্ধানের পদ্ধতি ও কৌশল নিয়েই সাজানো আজকের আর্টিকেল।

কীভাবে শুরু করবেন আপনার ‘ভার্চুয়াল’ চাকরি সন্ধান?

ম্যাককিপারের সিওও মাইকোলা টিমকিভের বলেন, “লিংকডইন, চাকরির পোর্টাল এমনকি ফেসবুকের মাধ্যমেও আপনি চাকরির সন্ধান শুরু করতে পারেন।” এর পাশাপাশি তিনি পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং প্রফেশনাল ক্ষেত্রে পরিচিতদেরকে জিজ্ঞেস করতেও উৎসাহিত করেন। আপনার পরিচিত ও কাছের মানুষজনেরই আপনাকে সাহায্য করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

তবে সামনা সামনি দেখা করার সুযোগ কমে যাওয়ায় নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সামনে এগিয়ে যাওয়া কিছুটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, বিশেষ করে লিংকডইনের ব্যবহার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিজের ইন্ডাস্ট্রির নতুন মানুষদের সাথে পরিচিত হওয়া, যোগাযোগ রাখা এবং প্রয়োজনে পরামর্শ চাওয়া অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে লিংকডইন। কোনো চাকরির সন্ধান শুরু করার আগে সেই পজিশনের ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে চাকরিটা আপনার জন্য কতোটা উপযুক্ত তাও জেনে নেওয়া সম্ভব এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কল্যাণে।

আজকাল যে কোনো কোম্পানির সম্পর্কেই অনেক তথ্য অনলাইনে পাওয়া সম্ভব। তাই কোনো কোম্পানিতে চাকরির আবেদন করার আগে গুগল, তাদের ওয়েবসাইট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ঘেঁটে তাদের সম্পর্কে যথেষ্ট জেনে নেওয়া ভালো। এতে করে প্রথমত এই কোম্পানির কালচার ও পরিবেশ আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা তা বুঝতে পারবেন এবং দ্বিতীয়ত সাম্ভাব্য ভবিষ্যৎ ইন্টারভিউয়ের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে সুবিধা হবে। আপনি যদি রিমোট চাকরিই করতে চান তাহলে সেই ব্যাপারে কোম্পানির নীতি কী এবং অদূর ভবিষ্যতে সেই নীতি পরিবর্তনের সম্ভাবনা কতোটুকু তারও একটা ধারণা পাওয়া সম্ভব অনলাইনে খোঁজ করার মাধ্যমে।

আজকাল চাকরির সন্ধান শুধু লিংকডইনে সীমাবদ্ধ নয়। অনেক কোম্পানি টুইটার এবং ফেসবুকেও তাদের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে থাকে। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে চাকরি সন্ধানের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখবেন আপনার প্রোফাইলটি যেন প্রফেশনাল ধাঁচের হয়। ফেসবুকের প্রোফাইলে ব্যক্তিগত পোস্ট প্রাইভেট রাখা এবং প্রোফাইলের ছবিটি প্রফেশনাল হওয়া এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে। লিংকডইনে কোনো ব্যক্তিগত পোস্ট , যা আপনার পড়াশোনা বা কর্মক্ষেত্রের সাথে সম্পর্কিত নয়, তা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।

এবং অবশ্যই আপনার কাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ সিভি তৈরি করে তাতে সাম্প্রতিক সব তথ্য আছে কিনা তা নিশ্চিত করতে ভুলবেন না।

কী প্রস্তুতি নেবেন অনলাইন ইন্টারভিউয়ের জন্য?

অনলাইনে ইন্টারভিউ দেওয়ার অভিজ্ঞতা না থাকলে প্রথম দিকে জিনিসটা অনেক জটিল মনে হতে পারে। কিন্তু প্রযুক্তির সাথে নিজেকে পরিচিত করে নেওয়ার মাধ্যমে এর জন্য প্রস্তুত হওয়া সম্ভব। তাছাড়া ইন্টারভিউয়ের প্রস্তুতির জন্য সাধারণত আপনার যা যা করতে হয় তা একইরকম থাকবে। সম্ভাব্য ‘কমন’ প্রশ্নগুলোর উত্তর প্রস্তুত রাখুন, কোম্পানি নিয়ে রিসার্চ করুন এবং প্রফেশনাল কাপড় পরুন। ইন্টারভিউ অনলাইন মানেই এটা না যে আপনি কেমন কাপড় পরছেন তাতে কিছু যায় আসে না। ভিডিও ইন্টারভিউয়ের ক্ষেত্রেও আপনার পোশাক ও নিজেকে প্রকাশ করার ভঙ্গী একইরকম গুরুত্বপূর্ণ।

প্রযুক্তি সম্পর্কে জানুন

ইন্টারভিউ যদি জুম, গুগল মিট বা অন্য কোনো ভিডিও কল প্ল্যাটফর্মে হয়, তাহলে আসল
ইন্টারভিউয়ের আগে কোনো বন্ধুর সাথে একটি ‘ট্রায়াল’ ভিডিও কল করে দেখে নিন অ্যাপটি কীভাবে কাজ করে। আপনার অডিও ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, ভিডিওতে আপনার চেহারা সঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে কিনা এইরকম সব ব্যাপারে যার সাথে ভিডিও কল করেছেন তার থেকে ফিডব্যাক নিয়ে নিন।

ভিডিও কলের সময় আপনার পেছনে কী দেখা যাচ্ছে সে দিকেও লক্ষ্য রাখুন। ইন্টারভিউয়ের
সময় সাধারণত ফাঁকা দেয়ালের বা এরকম কিছুর সামনে বসা ভালো। ব্যক্তিগত কোনো জিনিস বা অন্য কোনো ব্যক্তি ভিডিওর এলাকার মধ্যে যাতে চলে না আসে সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখুন। এরকম ব্যাকগ্রাউন্ড না পেলে ভার্চুয়াল ব্যাকগ্রাউন্ডও ব্যবহার করতে পারেন।

প্রয়োজনীয় তথ্য নোট করে রাখুন

ভিডিও ইন্টারভিউয়ের চমৎকার একটি সুবিধা হচ্ছে আপনি নিজের জন্য নোট লিখে রাখতে পারবেন এবং ইন্টারভিউয়ার তা দেখতে পারবেন না। ছোট ছোট স্টিকি নোটে কী বিষয়ে কথা বলবেন তার কিছু আইডিয়া লিখে রাখুন যা কোনো সময় যদি কী বলবেন খুঁজে না পান তখন কাজে লাগবে। তবে এগুলো শুধুই নোট, যার কাজ আপনাকে আইডিয়া দেওয়া। তাই সরাসরি নোটের লেখা থেকে পড়ে পড়ে উত্তর দেবেন না। কারণ এটা ইন্টারভিউয়ার খুব সহজেই ধরে ফেলবেন।

কীভাবে বেতন নিয়ে আলোচনা করবেন?

ইন্টারভিউ শেষে চাকরির জন্য বাছাই হয়ে যাওয়ার পর সময় আসবে বেতন নিয়ে আলোচনা করার। আর সামনা সামনি হোক বা ভার্চুয়ালি, এই অংশটা কারোই পছন্দের না। তবে বেতন নিয়ে কথা বলাটাকে প্রয়োজনের চেয়ে কঠিন বানানোর কোনো দরকার নেই। আপনি নিজের ক্যারিয়ারের পেছনে যথেষ্ট শ্রম দিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী যথেষ্ট বেতন আপনি আশা করতেই পারেন। চাকরির সুযোগ দেওয়া হয়েছে মানে কোম্পানি ইতোমধ্যেই আপনার দক্ষতাকে মূল্যায়ণ করেছে। তাই নিজের আশা অনুযায়ী বেতন চাইতে দ্বিধান্বিত হওয়ার কিছু নেই।

কেমন বেতন আপনার প্রাপ্য সে বিষয়ে ধারণা না থাকলে Glassdoor বা এ ধরনের কোনো ওয়েবসাইটে আপনার পদের জন্য কেমন বেতন দেওয়া হয়ে থাকে তা নিয়ে রিসার্চ করুন। যে কোম্পানিতে চাকরি করতে যাচ্ছেন সেই কোম্পানির অন্য কর্মকর্তারা কেমন বেতন পেয়ে থাকেন তা নিয়েও একটু ঘাঁটাঘাঁটি করুন। রিমোট চাকরির ক্ষেত্রে অনেক সময় আপনি কোন এলাকায় থাকেন তার ওপরও বেতনের কম-বেশি হওয়া নির্ভর করে। ইন্ডাস্ট্রির অন্যান্যরা কেমন বেতন ও সুবিধাদি পাচ্ছে তা জানতে পারলে নিজের জন্য উপযুক্ত পরিমাণটি নির্ধারণ করা সহজ হয়ে যাবে।

তবে বেতনই এখানে একমাত্র আলোচ্য বিষয় নয়। চাকরি আপনার জীবনের অনেক বড় একটি অংশ দখল করে নেবে। তাই এখান থেকে আপনি আর কী সুবিধাদি পাচ্ছেন বা চান সে বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। রিমোট ভাবে কাজ করা যদি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয় এবং প্যানডেমিক শেষে অফিস খুলে গেলেও যদি আপনি বাসা থেকেই কাজ করতে চান, তাহলে এখনই সময় সে বিষয়ে কথা বলার।

কীভাবে রিমোট চাকরির জন্য প্রস্তুত হবেন?

আপনার যদি এর আগে বাসা থেকে কাজ করার অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে কিছু জিনিসের দিকে আগে থেকে খেয়াল রাখা দরকার। যাতে করে রিমোট চাকরিতে সফল হওয়া আপনার জন্য সহজ হয়ে উঠবে।

প্রথমত, কাজ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা থাকা প্রয়োজন। যেখানে আপনি শুধু কাজ করেন এমন আলাদা একটি ঘর হলে খুবই ভালো। তবে যে কোনো জায়গায় টেবিল-চেয়ার ফেলে এমনকি ডাইনিং রুমের টেবিলে বসেও কাজ করা সম্ভব। কিন্তু সেই জায়গাটা শুধুমাত্র কাজের জন্যই থাকা উচিত। খাওয়া-দাওয়া, গল্প বা বিনোদনের জন্য টেবিল থেকে উঠে গিয়ে অন্য কোথাও বসার চেষ্টা করুন যাতে সারাদিন আপনি একই জায়গায় বসে পাড় না করে দেন। মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যেও কাজ ও বিশ্রামের জায়গা ভিন্ন হওয়া জরুরী।

এছাড়া বাসা থেকে কাজ করার সময় অনেকেই কাজে মনোযোগ ধরে রাখতে সমস্যায় ভোগেন। এর জন্য সবসময় গুছিয়ে কাজ করা এবং মনোযোগ ধরে রাখার জন্য প্রচলিত বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। রিমোট কাজের ক্ষেত্রে আরেকটা সমস্যা প্রায়ই ভোগান্তি তৈরি করে, তা হচ্ছে যোগাযোগের অভাব। সহকর্মী ও ম্যানেজারদের সাথে সবসময়ই পর্যাপ্ত ও সঠিক উপায়ে যোগাযোগ বজায় রাখার চেষ্টা করুন। সহকর্মীদের সাথে সুসম্পর্ক ও টিমওয়ার্কের মনোভাব আপনাকে কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত থাকতেও সাহায্য করবে।

বাস্তবতা হচ্ছে, কোভিড-১৯ প্যানডেমিক কর্মক্ষেত্রকে স্থায়ীভাবে পরিবর্তন করে দিয়েছে। প্রযুক্তির কল্যাণে এখন এমন অনেক কিছুই সম্ভব যা কয়েক বছর আগেও মানুষের চিন্তার বাইরে ছিল। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সবাইকেই পরিবর্তনে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। রিমোট কাজ করাও এমনই একটি ক্ষেত্র এবং আমরা যত তাড়াতাড়ি এই বিষয়টিতে অভ্যস্ত হতে পারব ততোই এর সুফল পাওয়া সম্ভব।