সিভিতে ‘ক্যারিয়ার গ্যাপ’ ব্যাখ্যা করবেন কীভাবে?

September 22, 2021 |
Views: 461

বিভিন্ন কারণে বা নানারকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়ে আমরা অনেকেই অনেক সময় চাকরি জীবন থেকে বিরতি নেই। ইচ্ছাকৃত হোক বা কোনো সমস্যার কারণে – সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে না পারলে এই বিরতির সময়টা পরবর্তীতে আপনার ক্যারিয়ারের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

ইন্টারভিউয়ে বসে সামনাসামনি এই বিরতির কারণ ব্যাখ্যা করা যেমন কঠিন, তার চেয়েও অনেক বেশি কঠিন সিভিতে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারা। যার ফলাফল হিসেবে হয়তো আপনাকে ইন্টারভিউয়েই ডাকা হবে না এবং হারিয়ে যাবে আপনার উপযুক্ত চাকরির সুযোগ। তাহলে এক্ষেত্রে আপনার করণীয় কী? কীভাবে সিভির স্বল্প পরিসরে দেবেন আপনার ক্যারিয়ার গ্যাপের সঠিক ব্যাখ্যা? এই সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যেই তৈরি করা আজকের আর্টিকেল!

ক্যারিয়ার গ্যাপ কী?

একটি চাকরি ছাড়ার পর থেকে নতুন পজিশনে কাজ শুরুর মাঝে যদি কোনো ফাঁকা সময় থাকে সেই সময়টাকেই বলা হয় ক্যারিয়ার গ্যাপ। তবে দুই চাকরির মাঝখানে না হয়ে বিরতিটা ক্যারিয়ারের শুরুতেও হতে পারে। পড়াশোনা শেষ করার পর চাকরি শুরু করার আগে অনেকেই দীর্ঘদিন বিরতি নিয়ে থাকেন। এই বিরতির ব্যাখ্যাও আপনার সিভিতে থাকা জরুরি।

ক্যারিয়ার গ্যাপ যে সবসময় অনিচ্ছাকৃত তা কিন্তু নয়। ঘোরাঘুরি, পরিবারকে সময় দেওয়া – এরকম নানান কারণেও অনেকে চাকরি থেকে বিরতি নিয়ে থাকেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ক্যারিয়ার বিরতিকে আপনার পেশাজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। আপনাকে শুধু জানতে হবে এই বিরতির ব্যাপারটাকে কীভাবে উপস্থাপন করবেন।

সিভির গ্যাপ ব্যাখ্যা করার ৫টি টিপস

১। প্রথমত, সিভিতে আপনার সব অভিজ্ঞতা উল্লেখ করা জরুরি না

দীর্ঘ ক্যারিয়ার এবং পেশাজীবনে বেশ কিছু পজিশনে চাকরি করার অভিজ্ঞতা থাকলে সেক্ষেত্রে সিভিকে সংক্ষিপ্ত রাখতে কিছু খুঁটিনাটি তথ্য বাদ দেওয়ার মাঝে দোষের কিছু নেই। যার ফলে ছোটখাটো বিরতির উল্লেখও আপনি বাদ দিতে পারবেন সহজেই।

একইভাবে, কোনো চাকরির শুরু ও শেষের তারিখ লিখতে গিয়ে মাস বাদ দিয়ে শুধু বছর উল্লেখ করার মাধ্যমেও কয়েক মাসের ছোট বিরতির বিষয় বাদ দিয়ে দেওয়া যায়। এ ধরনের কোনো উপায় অবলম্বন করে আপনার ক্যারিয়ার গ্যাপ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি সিভিকে যথাযথ ও সংক্ষিপ্ত রাখা সম্ভব।

বড় কোনো বিরতির ক্ষেত্রে হয়তো এই পদ্ধতি আপনার কাজে আসবে না। সেক্ষেত্রে বিরতি নিয়ে কথা বলার জন্য সিভির চেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে কভার লেটার। সিভির সাথে চাকরির আবেদনে যদি কভার লেটার চাওয়া হয়, এটা হতে পারে আপনার বিরতির কারণ ব্যাখ্যা করা এবং কেনো এখন আপনার চাকরিতে ফেরত আসার উপযুক্ত সময় তা উল্লেখ করার উপযুক্ত সুযোগ।

২। বিরতির কারণ যাই হোক, সততার সাথে ব্যাখ্যা করুন।

অবশ্যই, সিভিতে শুধু বছরের উল্লেখ করে দুএক মাসের বিরতি বাদ দিয়ে দেওয়া বা খুঁটিনাটি সব তথ্য সিভিতে না লেখার মাঝে দোষের কিছু নেই। কিন্তু বড় একটা বিরতির কথা একেবারেই উল্লেখ না করা বা বিরতির কারণ নিয়ে মিথ্যা বলা সেই বিরতির দিকে চাকরিদাতার মনোযোগ কমাবে না, বরং বাড়িয়ে দেবে।

ভুলক্রমেও গ্যাপ ঢাকার জন্য আগের চাকরি ছাড়ার সময় কিছুটা পিছিয়ে লেখার চেষ্টা করবেন না। হায়ারিং ম্যানেজারের আগের কোম্পানিতে যোগাযোগ করে আপনার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। মিথ্যা বা অসৎ কোনো উপায় অবলম্বন করার চেয়ে বিরতির কারণ ব্যাখ্যা করে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

৩। বিরতির সময়টাকে কাজে লাগান

নতুন চাকরির সন্ধানে যে সময়টা পাড় করছেন, তখন চাকরি খোঁজার পাশাপাশি আরও নানান কাজে সময়টা ব্যবহার করতে পারেন। স্কিল বৃদ্ধি করতে কোনো কোর্স বা মেন্টরশিপ প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা অথবা ভালান্টারি কাজে যোগদান করা চাকরিদাতার কাছে আপানার শেখার ইচ্ছাকে উপস্থাপন করবে। বিরতির সময়টাকে অপচয় না করে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে ব্যবহার করা অন্যদের থেকে আপনার সিভিকে ভিন্ন রূপ দেবে।

কোর্স বা ভলান্টিয়ারিং-এর সুযোগ না পেলে অন্য কোনোভাবে নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর পদ্ধতি খুঁজে বের করুন। বর্তমান সময়ে নিজের স্কিল ব্যবহার করে অনলাইনে এমন অনেক কিছুই করা যায় যাতে আপনার সময়ও ফলপ্রসূ হবে, কিছু বাড়তি আয়ও করতে পারবেন।

৪। ইতিবাচক অভিজ্ঞতা হিসেবে উপস্থাপন করুন

ক্যারিয়ারে বিরতি নেওয়া মানেই খারাপ কিছু নয়। বরং অনেক কোম্পানি এটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখে। তবে তার জন্য আপনার সিভির ভাষাও ইতিবাচক হতে হবে।

‘চাকরি খুঁজে পাই নি’ না লিখে, লিখুন ‘ক্যারিয়ারের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং পছন্দের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ খুঁজতে কিছুদিন বিরতি নিয়েছি’। বিরতির সিদ্ধান্ত যদি আপনার নিজের না হয়, বরং ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কোনো সমস্যাই হয়ে থাকে বিরতির কারণ, সেক্ষেত্রেও এই সময়টা থেকে ভালো কী অর্জন হয়েছে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন। কী শিখেছেন এই পরিস্থিতিতে পড়ে এবং এমন কী করেছেন যা আপনার ক্যারিয়ারকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে তা উল্লেখ করার চেষ্টা করুন সিভিতে।

৫। ইন্টারভিউয়ে বিরতি সম্পর্কিত প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত থাকুন

আপনার সিভি যদি সফলভাবে পরের ধাপে পৌঁছায়, সাধারণত আপনার একটা ইন্টারভিউ দিতে হবে। আর সেই ইন্টারভিউয়ে কোনো না কোনোভাবে আপনাকে এই বিরতি নিয়ে অবশ্যই প্রশ্ন করা হবে। এই প্রশ্নের উত্তরে সংক্ষেপে এবং প্রাসঙ্গিক উপায়ে কীভাবে আপনার গ্যাপকে ব্যাখ্যা করবেন তা আগে থেকেই নির্ধারণ করে রাখুন, যাতে ইন্টারভিউয়ের মাঝে বিপদে না পড়তে হয়।

এছাড়া ইন্টারভিউয়ে যাওয়ার আগে কোম্পানি ও ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে কিছু রিসার্চ করে যেতে ভুলবেন না। এতে করে হায়ারিং ম্যানেজারের কাছে আপনি প্রমাণ করতে পারবেন যে বিরতির কারণে ইন্ডাস্ট্রির প্রতি আপনার আগ্রহ কমে যায় নি এবং এখনও ইন্ডাস্ট্রির ট্রেন্ড সম্পর্কে আপনি খোঁজ-খবর রাখেন।

 

আপনার ক্যারিয়ার গ্যাপের ফলাফল কী হবে তা অনেক বিষয়ের ওপরই নির্ভর করে। বছর দুয়েক আগে কয়েক মাসের জন্য বিরতি নেওয়া হয়তো আপনার পরবর্তী পজিশনের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু বছরখানেক বা তার চেয়েও বড় ক্যারিয়ার গ্যাপ থাকলে অবশ্যই সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে হবে।

সিভিতে বিরতি থাকা তেমন কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় এবং সেই বিরতি ঢাকার চেষ্টা করলেই বরং তার দিকে চাকরিদাতার নজর পড়বে বেশি। একজন হায়ারিং ম্যানেজার শুধু চান বিরতির পর আপনি উৎসাহ ও উদ্দীপনা নিয়ে কাজে ফেরত আসবেন। আত্মবিশ্বাস এবং সততা যে কোনো ইন্টারভিউয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ ধরনের মনোভাব ধরে রাখতে পারলে ক্যারিয়ার গ্যাপ আপনার অগ্রগতি আটকে রাখতে পারবে না।