ট্র্যাভেল এজেন্ট ক্যারিয়ারে প্রবেশের পথ দুটি। আপনি নিজেই একটা ট্র্যাভেল এজেন্সি খুলে বসতে পারেন, অথবা কোনো এজেন্সির ট্র্যাভেল অপারেটর হিসেবে কাজ করতে পারেন। তবে দুই ক্ষেত্রেই একটা সাধারণ বিষয় আছে, ক্লায়েন্টদের ট্র্যাভেল প্ল্যানিং এর পাশাপাশি আপনি নিজেও নানা ধরনের নতুন জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন।
শুনতে তো বেশ ভালোই লাগছে, তাই না? তবে ক্যারিয়ার নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব দিক ভেবে নেওয়া জরুরি। তাই চলুন জেনে নেই এই ক্যারিয়ার সম্পর্কে বিস্তারিত।
এই ক্যারিয়ার কাদের জন্য উপযুক্ত?
ট্র্যাভেল এজেন্ট হিসেবে কাজ করার একটা বড় অংশ ঘোরাঘুরি হলেও, এটাই যে ট্র্যাভেল এজেন্টদের একমাত্র যোগ্যতা তা কিন্তু নয়। তাই এই ক্যারিয়ারের পথে পা বাড়ানোর আগে ভেবে দেখুন আপনি সত্যিই অন্যদের জন্য ট্র্যাভেল প্ল্যান করাকে নিজের পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে চান কিনা।
এই পেশায় সফল হতে চাইলে আপনার চমৎকার যোগাযোগ দক্ষতা তো লাগবেই, পাশাপাশি হতে হবে সেলস-এ পারদর্শী। আপনার ট্রাভেল প্ল্যানটা যে ক্লায়েন্টের প্রয়োজন ও স্বপ্নের সাথে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ এটা তাদেরকে বোঝানোর ক্ষমতা থাকতে হবে। ক্লায়েন্টদের সাথে সুন্দর ও বন্ধুসুলভ আচরণ এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে নিজের মতামত উপস্থাপন করতে পারাও একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ গুণ এই ক্যারিয়ারের জন্য।
এতো কিছুর মানে এটা নয় যে আপনাকে বিশ্বের সবগুলো জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা চিনতে ও জানতে হবে। বেশিরভাগ এজেন্টরাই একটি নির্দিষ্ট এলাকা নিয়ে কাজ করেন। শুধুমাত্র একটি দেশ অথবা নির্দিষ্ট একটি এলাকার পরিচিত ঘোরার জায়গাগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেও আপনি এই ক্যারিয়ারে কাজ করা শুরু করতে পারেন।
কী ধরনের যোগ্যতা থাকতে হবে?
দেশ ও বিদেশের বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্র্যাভেল, ট্যুরিজম ও হসপিটালিটি নিয়ে কোর্স এবং ডিগ্রি রয়েছে। তবে এই ক্যারিয়ার শুরুর জন্য এ ধরনের কোনো ডিগ্রি থাকা বাধ্যতামূলক না। আপনি চাইলে ট্র্যাভেল বা ট্যুরিজম সংক্রান্ত কোনো কোর্স করতে পারেন, অথবা কলেজের পড়াশোনা শেষ করে সরাসরিও এই পেশায় যোগ দিতে পারেন।
অন্যান্য কাস্টমার সার্ভিস ভিত্তিক কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে তা এই পেশায় সাহায্য করবে। কিন্তু দিনশেষে সাফল্যের বেশিরভাগটাই নির্ভর করবে ট্র্যাভেল লোকেশনগুলোর ব্যাপারে আপনার জ্ঞান, ক্লায়েন্টদের সাথে সঠিক যোগাযোগ বজায় রাখার দক্ষতা ও নিজের প্ল্যানগুলোকে বিক্রি করার ক্ষমতার উপর।
কী কী স্কিল লাগবে?
কোনো ডিগ্রি বা অভিজ্ঞতা ছাড়া কাজ শুরু করা গেলেও, ক্লায়েন্টদের ভালো সার্ভিস দিতে চাইলে একজন ট্র্যাভেল এজেন্টের কিছু স্কিল অবশ্যই থাকা চাই।
– সাংগঠনিক দক্ষতা
ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজ করতে হলে বেশ খানিকটা সাংগঠনিক জ্ঞান থাকতে হয়। কারণ এ ধরনের এজেন্সিগুলোতে নিয়মিত ট্র্যাভেল প্ল্যান তৈরির পাশাপাশি হোটেল থেকে শুরু করে যানবাহন পর্যন্ত অনেক ধরনের বুকিং ও ইনভয়েস তৈরির কাজ করতে হয়।
– ধৈর্য্য
আর পাঁচটা কাস্টমার সার্ভিস ভিত্তিক পেশার মতো ট্র্যাভেল এজেন্টদেরও অনেক ধৈর্যশীল হতে হয়। প্রতিদিন নানা রকম ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষজনের সাথে পরিচয় হওয়ার মাঝে যেমন আনন্দ আছে, এর আছে কিছু খারাপ দিকও। যে কোনো সময় যে কোনো ক্লায়েন্ট আপনার ধৈর্য্যের পরীক্ষা নিতে পারেন। এ ধরনের পরিস্থিতি ঠাণ্ডা মাথায় সামাল দিতে পারার মতো ধৈর্য্য থাকা একজন সফল ট্র্যাভেল এজেন্টের অন্যতম গুণ।
– পছন্দসই ব্যক্তিত্ব
ক্লায়েন্ট নির্ভর প্রফেশনগুলোতে সফল হওয়ার একটি অব্যর্থ কৌশল হলো পুরনো ক্লায়েন্টদের ধরে রাখা। আর এর জন্য দরকার তাঁদের সাথে একটি নির্ভরযোগ্যতার সম্পর্ক স্থাপন। স্বতঃস্ফূর্ত ও ভালো লাগার মতো একটি ব্যক্তিত্ব আলাপ-আলোচনা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে আপনাকে অনেক সুবিধা দেবে, যার ফলে ক্লায়েন্টদের ভালো সার্ভিস দিয়ে পরবর্তীতে তাঁদের আপনার কাছে ফেরত আসা নিশ্চিত করতে পারবেন।
– উৎফুল্লতা
এই স্কিলটি অন্য প্রয়োজনীয় স্কিলগুলো থেকে একটু আলাদা। কারণ এটা আপনাকে শুধু ট্র্যাভেল এজেন্টের দৈনন্দিন কাজেই সাহায্য করবে না, বরং অন্য এজেন্টদের থেকে আপনাকে আলাদা করে তুলবে। আপনি নিজে যদি ঘোরার জায়গাটি নিয়ে উৎফুল্ল থাকেন তাহলে ক্লায়েন্টদেরকেও চমৎকার একটি অভিজ্ঞতা দিতে পারবেন।
এই উদ্দীপনা সবসময় বজায় রাখা যায় কীভাবে? শুধুমাত্র সেই সব জায়গা নিয়েই কাজ করুন যেগুলো আপনার সবচেয়ে প্রিয়। যেমন ধরুন, আপনার যদি সমুদ্র ভালো লাগে তাহলে শুধু দেশ-বিদেশের ক্লায়েন্টদের কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতগুলো ঘুরে দেখানোর ব্যবস্থা করুন।
– লেখালেখির দক্ষতা
ট্র্যাভেল এজেন্টদের কাজের একটি বড় অংশ ভ্রমণবৃত্তান্ত লেখা, তাঁর পুরো পরিকল্পনাটাকে মনোরমভাবে উপস্থাপন করা। আর এর জন্য চাই লেখালেখির অভ্যাস। এছাড়াও ক্লায়েন্টদের সাথে আপনার যোগাযোগের একটা বড় অংশ হবে ইমেইলের মাধ্যমে। এই ইমেইলগুলো নির্ভুলভাবে লিখতে হলে আপনার বানান ও ব্যাকরণের জ্ঞান থাকাও জরুরী।
– কাস্টমার সার্ভিস
আগেও উল্লেখ করেছি, কাস্টমার সার্ভিস এই প্রফেশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ট্র্যাভেল এজেন্সির মূল কাজই হচ্ছে ট্যুরিজম সার্ভিস দেওয়া, তাই কাস্টমারদের জন্য সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা ট্র্যাভেল এজেন্ট হিসেবে আপনার দৈনন্দিন কাজের একটি অংশ হবে।
– মনোযোগ
আপনার সামান্য একটি ভুল ক্লায়েন্টের পুরো ছুটির প্ল্যানটাকে নষ্ট করে দিতে পারে। পাসপোর্ট নম্বর, ব্যাংকিং তথ্য এবং বুকিং-এর তারিখের মতো সূক্ষ্ম বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য না রাখতে পারলে এই ক্যারিয়ারে সাফল্যের আশা শেষ। তাই ছোট-বড় প্রতিটি তথ্য মনোযোগের সাথে যাচাই করে নিশ্চিত হয়ে নিতে ভুল করবেন না।
চাকরি পাবো কীভাবে?
অনেকের মতে, বুকিং.কম এবং এ ধরনের ওয়েবসাইটগুলোর কারণে ট্র্যাভেল এজেন্সি ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের সুযোগ আগের চেয়ে অনেক কম। কিন্তু বাস্তবে এখনও ট্র্যাভেল এজেন্টদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে, বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ট্রিপ পরিকল্পনায় অনেকেই এজেন্টদের সাহায্য নিয়ে থাকেন।
তাই আপনি যদি ট্র্যাভেল এজেন্ট হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েই থাকেন, তাহলে লোকাল ট্র্যাভেল এজেন্সি বা ট্যুর অপারেটরদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। অথবা আপনি নিজেই একটি অনলাইন পেজ খুলে ট্র্যাভেল এজেন্ট হিসেবে নিজের প্রচারণা শুরু করে দিতে পারেন।
ক্যারিয়ারে উন্নতি করব কীভাবে?
ট্র্যাভেল এজেন্ট ক্যারিয়ারে শেখার কোনো শেষ নেই। সবসময়ই নিজের এলাকার বিভিন্ন ইভেন্ট সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখুন এবং নতুন সব ট্যুরিস্ট স্পট নিয়ে পড়াশোনা করতে থাকুন। পাশাপাশি নতুন মানুষজনের সাথে পরিচিত হয়ে এবং পুরনো ক্লায়েন্টদের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রেখে আপনার নেটওয়ার্কের পরিধি বাড়াতে চেষ্টা করুন। এভাবে আরও জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে কোম্পানিতে পদোন্নতি পাওয়া যেমন সম্ভব, তেমনি নিজের আলাদা এজেন্সি খুলে নিজের মতো করে কাজ করাও হয়ে উঠবে আরও সহজ।
ট্র্যাভেল এবং ট্যুরিজম ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে একটি উত্তেজনাময় প্রফেশনাল জীবন যাপন করা সম্ভব, যেখানে আপনার কাজের প্রত্যেকটা দিন হবে আগের দিন থেকে ভিন্ন। ঘুরে বেড়ানোর মাধ্যমে উপার্জন করার চেয়ে ভালো আর কী আছে, তাই না?