ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০২০ সালের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী আমেরিকার সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন তিনটি পেশা হচ্ছে ডেটা অ্যানালিস্ট ও সায়েন্টিস্ট, এআই ও মেশিন লার্নিং স্পেশালিস্ট এবং বিগ ডেটা স্পেশালিস্ট। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সবগুলো পেশাই তথ্য বিশ্লেষণের সাথে সম্পর্কিত।
ডেটা অ্যানালিটিক্স টিম পরিচালনা করে অভ্যস্ত একজন সিটিও মার্ক হার্শবার্গের মতে, “এটি এমন একটি পেশা যা দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন আরও বেশি কোম্পানি অনলাইনে কাজ শুরু করছে এবং তথ্যের পরিমাণও বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে IoT এবং ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার তথ্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি করছে। কোম্পানিগুলো চায় এই তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করা এবং বোঝার মাধ্যমে তাদের ব্যবসাকেও এগিয়ে নিয়ে যেতে।”
তথ্য বিশ্লেষণ শুধু টেকনলজি ইন্ডাস্ট্রিতেই জরুরী নয়। এই দক্ষতা আপনাকে অনেক ধরনের ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশের সুযোগ করে দেবে। শুধু তাই নয়, সেই ইন্ডাস্ট্রির ভেতরেও বিভিন্ন পদে কাজ করার অপশন থাকবে আপনার সামনে।
কী সেই অপশনগুলো? আর কোনটাই বা আপনার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত? চলুন তাহলে জেনে নেই এমনই ৮টি ক্যারিয়ারের কথা!
১। তথ্য বিশ্লেষক
তথ্য বিশ্লেষকদের মূল কাজ হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ ও গোছানো এবং এরপর সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নেওয়া। সেই সিদ্ধান্ত হতে পারে কীভাবে খরচ কমানো যায়, কীভাবে গ্রাহক ধরে রাখা যায় বা কোনো প্রডাক্টের দাম কতো হওয়া উচিত – এমন আরও অনেক কিছু। এছাড়া তথ্য সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয় যেমন রিপোর্ট তৈরি করা, তথ্য বিশ্লেষণ করা এবং তথ্যের সূক্ষ্মতা যাচাই করাও একজন তথ্য বিশ্লেষকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
এই পেশায় কাজ করতে সাধারণত গণিত, পরিসংখ্যান, অর্থনীতি বা কম্পিউটার সায়েন্সের মতো কোনো বিশ্লেষণভিত্তিক বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকতে হয়। তবে এই বিষয়ে বুটক্যাম্প স্টাইলেরও কিছু কোর্স আছে যা করে তথ্য বিশ্লেষণে ক্যারিয়ার শুরু করা সম্ভব।
২। তথ্য বৈজ্ঞানিক
তথ্য বিশ্লেষকদের কাজ যেমন তথ্য বিশ্লেষণ করা, তথ্য বৈজ্ঞানিকদের কাজ হচ্ছে তা করার জন্য কার্যকরী পদ্ধতিটার নকশা বানানো। পরিসংখ্যানের মডেল ও অ্যালগরিদম ব্যবহার বা তথ্য নিয়ে নানারকম পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো থেকে শুরু করে তথ্য সংক্রান্ত প্রডাক্ট তৈরি ও তথ্য বিশ্লেষণের নকশাকে প্রতিনিয়ত অপটিমাইজ করা পর্যন্ত সবকিছুই এই কাজের অংশ – যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে সূক্ষ্ম ও সঠিক বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ তৈরি।
এই পেশায় কাজ করার জন্যও সাধারণত কম্পিউটার সায়েন্স, গণিত, পরিসংখ্যান, ইঞ্জিনিয়ারিং বা সম্পর্কিত কোনো বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রয়োজন। এমনকি অনেক কোম্পানি আরও উচ্চতর ডিগ্রিও আশা করে থাকে।
৩। মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার
মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ হচ্ছে এমন অ্যালগরিদম, মডেল, সিস্টেম এবং ফ্রেমওয়ার্ক তৈরি করা যা ব্যবহার করে মেশিন কোনো আদেশ ছাড়াই নিজে নিজে বিভিন্ন ফাংশন শিখতে ও ব্যবহার করতে পারে। এছাড়া তথ্য বৈজ্ঞানিকদের নকশাকৃত মডেল কোডিং-এর মাধ্যমে প্রডাক্টে ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করাও মেশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ারদের কাজের অংশ।
ম্যাশিন লার্নিং ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে জাভা এবং পাইথন সহ কিছু প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে দক্ষতা থাকতে হবে। পাশাপাশি কম্পিউটার সায়েন্স, গণিত, পরিসংখ্যান বা এ ধরনের কোনো বিষয়ে ব্যাচেলর অথবা উচ্চতর ডিগ্রিও থাকা প্রয়োজন।
৪। ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা বিশ্লেষক
এই পেশার দায়িত্ব হচ্ছে তথ্য বিশ্লেষণ করে সংগঠনের উন্নতি করা। এই কাজের অংশ হিসেবে থাকছে কোম্পানির বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন ধরনের ইন্ডাস্ট্রিভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করা এবং সেই তথ্য ব্যবহার করে ট্রেন্ড ও সম্ভাব্য অসুবিধাগুলো খুঁজে বের করা। তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণ করে পাওয়া সিদ্ধান্তগুলোকে ব্যবসার উন্নতির জন্য কার্যকর পন্থায় রূপান্তর করা এবং সেই পন্থা কোম্পানির নেতৃত্ব স্থানীয়দের কাছে উপস্থাপন করাও ব্যবসায়িক বুদ্ধিমত্তা বিশ্লেষকদের কাজ।
বিজনেস ইন্টেলিজেন্স অ্যানালাইসিস খুবই টেকনিক্যাল একটি পেশা। তাই এই পেশায় কাজ করতে হলে সাধারণত কম্পিউটার সায়েন্স, গণিত অথবা একই ধরনের কোনো বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি প্রয়োজন। অনেক কোম্পানি আবার এমবিএ-এর মতো উচ্চতর ডিগ্রিও আশা করে থাকে।
৫। লজিস্টিকস বিশ্লেষক
পণ্য সংগ্রহ থেকে শুরু করে ডেলিভারি পর্যন্ত সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন অংশ তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে অপটিমাইজ করাই একজন লজিস্টিকস বিশ্লেষকের কাজ। সাপ্লাই চেইনের কোনো অংশে লাভ হ্রাসের সম্ভাবনা আছে কিনা তা নির্ণয় করে তার সমাধান নকশা করা এবং পণ্য উৎপাদন, বণ্টন ও বিতরণের প্রক্রিয়াকে কার্যকর বানানো এই কাজের অংশ।
এই পেশায় কাজ করার জন্য সাধারণত একটি ব্যাচেলর ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। তবে লজিস্টিকস এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যোগ্য ক্যান্ডিডেটরা ব্যাচেলর ডিগ্রি ছাড়াও এই পেশায় কাজ শুরু করতে পারেন।
৬। তথ্য স্থপতি
একজন স্থপতি যেমন নানান রকম স্থাপনা নকশা করেন, একজন তথ্য স্থপতির কাজ হচ্ছে কোনো সংগঠনের জন্য একটি স্থাপনা তৈরি করা যাতে করে কার্যকরভাবে তথ্য সংগ্রহ, বিন্যাস, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবহার করা যায়। এই কাজের অংশ হিসেবে থাকছে ব্যবসায়িক লক্ষ্যগুলোকে একটি তথ্য ব্যবস্থাপনা ফ্রেমওয়ার্কে পরিণত করা, ফ্রেমওয়ার্কটি নকশা করা, এর ভেতর দিয়ে তথ্য কীভাবে আদান প্রদান হবে তার বিস্তারিত পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা এবং অন্য টিম ও ইঞ্জিনিয়ারদের সাথে সম্মিলিতভাবে কাজ করার মাধ্যমে ফ্রেমওয়ার্কটি বাস্তবায়ন করা।
বেশিরভাগ ডেটা আর্কিটেক্টের কম্পিউটার সায়েন্স বা কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি থাকে। অনেকে আবার উচ্চতর ডিগ্রির জন্যও পড়াশোনা করে থাকেন।
৭। ব্যবসায়িক পদ্ধতি বিশ্লেষক
ব্যবসায়িক পদ্ধতি বিশ্লেষকদের দায়িত্ব হচ্ছে তথ্য বিশ্লেষণ ও ব্যবহারের মাধ্যমে সাংগঠনিক পদ্ধতিগুলোকে আরও কার্যকর বানানো – বিশেষ করে আইটি সেক্টরে। তথ্যনির্ভর বিভিন্ন টুলস ব্যবহার করে কোম্পানির বর্তমান পদ্ধতিগুলোকে বিশ্লেষণ করা এবং সে অনুযায়ী সিস্টেম অপ্টিমাইজেশনের মাধ্যমে খরচ কমানো ও কোম্পানিতে আইটির ব্যবহারকে আরও কার্যকর করা এই পেশাজীবীদের কাজের অংশ। এছাড়া নতুন পদ্ধতি ও টুলস নিয়ে গবেষণা এবং কোম্পানির বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টে সেসব বাস্তবায়নে সাহায্য করাও ব্যবসায়িক পদ্ধতি বিশ্লেষকদের কাজ।
এই পেশায় কাজ করার জন্য সাধারণত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা বা তথ্য ব্যবস্থার মতো টেকনিক্যাল বিষয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। তবে আইটি-তে বিশেষ আগ্রহ এবং বিশদ জ্ঞান সম্পন্ন বাণিজ্যিক ব্যাকগ্রাউন্ডের পেশাজীবীরাও এই ক্যারিয়ারে কাজ করতে পারেন।
৮। মার্কেটিং বিশ্লেষক
মার্কেটিং বিশ্লেষকদের মূল কাজ হচ্ছে কোনো কোম্পানিকে তাদের গ্রাহকদের সম্পর্কে জানতে ও তাদের চাহিদা বুঝতে সাহায্য করা। তারা সাধারণত কোম্পানির টার্গেট জনগোষ্ঠীর সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন ডেটা সেট বিশ্লেষণ করেন এবং সেই বিশ্লেষণ থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেন যাতে করে কোম্পানি নতুন গ্রাহকদের সাথে যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পুরনো গ্রাহকদের কার্যকরভাবে তাদের প্রোডাক্টের মার্কেটিং করতে পারে। এর পাশাপাশি নেতৃস্থানীয়দের কাছে বা বিজনেস টিমের অন্যান্য সহকর্মীদের কাছে নিজের বিশ্লেষণ ও তা থেকে পাওয়া তথ্য উপস্থাপন করাও মার্কেটিং বিশ্লেষকদের কাজ। তাই সঠিক উপায়ে তথ্যবহুল রিপোর্ট ও চার্ট তৈরি করতে পারাও এই পেশায় একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা।
এই পেশায় কাজ করার জন্য সাধারণত একটি ব্যাচেলর ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। তবে তা মার্কেটিং, অর্থনীতি, বাণিজ্য, গণিত, পরিসংখ্যান বা মনোবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে হতে পারে।
তথ্য বিশ্লেষণ বর্তমানে যেমন চাহিদাপূর্ণ, তেমনই চ্যালেঞ্জিং একটি ক্যারিয়ার। সঠিক ক্যারিয়ারটি বেছে নিতে পারলে এই পেশা হতে পারে বেশ আনন্দের একটি অভিজ্ঞতা। আপনি কি উত্তেজনাময় এই ক্যারিয়ারের পথে যাত্রা শুরু করতে প্রস্তুত? চাকরি অ্যাপে প্রোফাইল খুলে আজই শুরু করে দিন চাকরির সন্ধান!