৮টি ধাপে সম্পন্ন করুন চাকরির সন্ধান

December 27, 2021 |
Views: 533

প্রথমবারের মতোই হোক বা চাকরি পরিবর্তনের আশায় – চাকরির সন্ধানের অভ্যাস না থাকা প্রায় সবার জন্যই স্বাভাবিক। কোত্থেকে শুরু করবেন, কীভাবে এগোবেন, কোন চাকরিতে আবেদন করবেন – এমন অনেক কিছুই চিন্তা করার ব্যাপার আছে এখানে।

চাকরির সন্ধান নিয়ে দুশ্চিন্তিত হওয়া আসলে কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। এই দুশ্চিন্তার কথা মাথায় রেখেই তাই আমরা সাজিয়েছি এই আর্টিকেলটি যেখানে চাকরির সন্ধানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ সম্পর্কে থাকছে বিস্তারিত তথ্য।

প্রথম ধাপঃ প্রতিটি চাকরির জন্য আলাদাভাবে সিভি তৈরি করুন

আপনার যদি পাঁচ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে সিভিতে বিশ্ববিদ্যালয় শেষে প্রথম ইন্টার্নশিপের কথা উল্লেখ থাকার কোনো প্রয়োজনই নেই। আপনার সিভি যদি দীর্ঘদিন আগে বানানো হয়ে থাকে তাহলে তা আপডেট করুন অথবা নতুন করে বানান

এরপর প্রতিটি চাকরিতে আবেদন করার আগে সেই সিভিকে চাকরির সাথে সামঞ্জস্য রেখে ঠিকঠাক করে নিন। চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে যেসব দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়েছে সেগুলোর দিকে বিশেষ গুরুত্ব রাখুন। এবং সবসময় মনে রাখবেন, চাকরিদাতারা প্রতিটি সিভির পেছনে খুবই কম সময় ব্যয় করেন। তাই সিভি যতো সংক্ষিপ্ত ও যথাযথ হয় ততো ভালো।

দ্বিতীয় ধাপঃ কভার লেটারও তৈরি করে নিন

কভার লেটারকে অনেকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন না। কিন্তু এখনও অনেক ক্ষেত্রেই সিভির সাথে কভার লেটার জমা দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এবং চাকরির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যথাযথ একটি কভার লেটার আপনার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণে বাড়িয়ে দিতে সক্ষম।

তাই সিভি তৈরির পরই নতুন করে কভার লেটারটাও লিখে ফেলুন এবং প্রতিবার জমা দেওয়ার আগে সম্বোধন থেকে শুরু করে চিঠির বিভিন্ন জায়গায় প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করতে ভুলবেন না।

তৃতীয় ধাপঃ লিংকডইন প্রোফাইল ঠিকঠাক করুন

চাকরির সন্ধানের সময় আপনার প্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হতে হবে লিংকডইন। কর্মক্ষেত্রে আপনার অভিজ্ঞতা ও আগ্রহের সারসংক্ষেপ হওয়া চাই আপনার লিংকডইন প্রোফাইল। তবে শুধু ভালো একটা প্রোফাইল বানানোই যথেষ্ট নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে এটাকে ব্যবহারও করুন।

ইন্ডাস্ট্রির পরিচিত অথবা অপরিচিত অনেকের সাথেই লিংকডইনের মাধ্যমে কানেকশন গড়তে পারবেন যা ভবিষ্যতে সম্ভাব্য অনেক কাজে আসবে। এছাড়া পেশার সাথে সম্পর্কিত বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও অর্জন শেয়ার করা এবং সম্ভব হলে আপনার কাজের কিছু নমুনা (আর্টিকেল, প্রেস রিলিজ ইত্যাদি) প্রোফাইলে প্রদর্শন করাও গুরুত্বপূর্ণ।

সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে আপনি লিংকডইন কানেকশনদের সাথে মেসেজের মাধ্যমে সরাসরি কথা বলতে পারবেন। তবে খেয়াল রাখবেন যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কথা বলার সময়ও পেশাদারিত্ব বজায় রাখা জরুরী।

চতুর্থ ধাপঃ এবার আপনার অনলাইন উপস্থিতি ঠিকঠাক করুন

নিয়োগদাতারা সিভি দেখে আগ্রহী হলে পরবর্তী পর্যায়ে গুগলে আপনাকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। অর্থাৎ অনলাইন পোর্টফোলিও থেকে শুরু করে ফেসবুকের পাবলিক পোস্ট পর্যন্ত সবকিছুই এখন আপনার আবেদনের অংশ।

এসব কারণে অনলাইনে আপনার উপস্থিতিতে যতোটা সম্ভব পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন। তার মানে এটা না যে আপনি শুধু ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে খবর বা তথ্যই শেয়ার করবেন এবং আর কিছুই আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থাকবে না। বরং তার মানে হচ্ছে আপনার পাবলিক প্ল্যাটফর্মগুলোতে এমন কোনো কিছু যেনো না থাকে যা নেতিবাচকভাবে দেখা যায়। সন্দেহ থাকলে পাবলিকের বদলে প্রাইভেসি ব্যবহার করে পোস্ট শেয়ার করুন।

অনলাইন উপস্থিতিকে আরও এক ধাপ উপরে নিয়ে যেতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে আপনার ব্যক্তিগত পোর্টফোলিও হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। ফেসবুকের বায়োতে নিজের কর্মজীবন বা আগ্রহের বিষয় নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযোজন থেকে শুরু করে ইন্সটাগ্রাম বা টুইটারে নিজের বিভিন্ন কাজ শেয়ার করা – এ সবকিছুই আপনার জন্য ইতিবাচক দিক হিসেবে কাজ করবে।

পঞ্চম ধাপঃ নেটওয়ার্কিং

যতো বেশি মানুষের সাথে আপনার পরিচয় থাকবে, চাকরি পাওয়া আপনার জন্য ততো সহজ হবে। আর চাকরি খুঁজছেন এটা লুকিয়ে না রেখে পরিচিতজনদের যতোটা সম্ভব জানানোর চেষ্টা করুন। বন্ধু বা আত্মীয় হোক, অথবা কোনো প্রফেশনাল কানেকশন – আপনি চাকরির সন্ধান করছেন এটা না জানলে তারা আপনাকে সাহায্য করতে পারবে না।

এর পাশাপাশি লিংকডইন বা ইমেইলের মাধ্যমে অপরিচিত ব্যক্তিদের কাছ থেকেও আপনি সাহায্য বা পরামর্শ চাইতে পারেন। বিশেষ করে আপনি চাকরি করতে চান এরকম কোনো কোম্পানিতে কর্মরত থাকা কোনো ব্যক্তির সাথে কথা বলা সেখানকার পরিবেশ, কাজের ধরণ এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারে।

ষষ্ঠ ধাপঃ কোন চাকরিগুলোতে আবেদন করবেন তা নিয়ে রিসার্চ করুন

অনেকেই মনে করে চাকরি যখন খুঁজছি, যত বেশি চাকরিতে আবেদন করব তত ভালো। কিন্তু এই ধারণা খুবই ভুল। চোখের সামনে পড়া সব চাকরিতে আবেদন করতে থাকলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনোটাতেই সঠিকভাবে আবেদন করা হয় না।

তাই চাকরিতে আবেদন করার আগে সময় নিয়ে রিসার্চ করুন, সিভি ঠিকঠাক করুন এবং শুধুমাত্র সেসব চাকরিতেই আবেদন করুন যেগুলো আপনার জন্য উপযুক্ত।

সপ্তম ধাপঃ ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি নিন

ইন্টারভিউয়ের আমন্ত্রণ পাওয়া মানে চাকরি পাওয়ার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া এবং এই পর্যায়েও আপনার হাতে অনেক কিছু রয়েছে। আপনি ইন্টারভিউয়ারদের ওপর কেমন ছাপ ফেলছেন তার ওপরেই নির্ভর করে চাকরি পাওয়া-না পাওয়া।

তাই ইন্টারভিউয়ের জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেকনিক্যাল প্রশ্নের প্রস্তুতি নেওয়ার পাশাপাশি প্রায় সব ইন্টারভিউয়ে করা হয় এমন কিছু প্রচলিত প্রশ্ন ও তাদের উত্তর সাজিয়ে নিন এবং সেগুলো বলার অভ্যাস করুন। সম্ভব হলে কোনো বন্ধুর কাছে ইন্টারভিউ দিয়ে প্র্যাকটিসও করতে পারেন।

অষ্টম ধাপঃ ধৈর্য্য হারাবেন না

আগেও বলেছি, চাকরির সন্ধান অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। মনের মতো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি পাচ্ছেন না? ইন্টারভিউয়ের আমন্ত্রণ আসছে না? তাতে ধৈর্য্যহারা হওয়ার কিছু নেই। হাল ছেড়ে দিয়ে বসে থাকলে কোনো লাভ হবে না।

সবসময় মনে রাখার চেষ্টা করুন যে উপযুক্ত চাকরি খুঁজে পেতে সময়ের ও চেষ্টার প্রয়োজন। তাই দুশ্চিন্তা না করে বরং নিষ্ঠার সাথে সন্ধান চালিয়ে যান। শীঘ্রই পেয়ে যাবেন আপনার পছন্দের চাকরি!