অনেকের মধ্যেই একটি ধারণা দেখা যায় যে ইংরেজি সাহিত্যের গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির সুযোগ কম। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, একটি ইংরেজি সাহিত্যের ডিগ্রি আপনাকে অ্যাকাডেমিক জ্ঞানের বাইরেও এমন অনেক কিছু শেখায় যা চাকরিক্ষেত্রে শুধু আপনাকে সুযোগই দেবে না, রীতিমতো সাহায্যও করবে। অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণের তুখোড় ক্ষমতা, সঠিক যোগাযোগ রক্ষার কৌশল এবং স্বনির্ভরভাবে কাজ করার যোগ্যতা – এ সব কিছুই অনেক চাকরিদাতার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্কিল।
আপনি যদি এখনও দ্বন্দ্বে থেকে থাকেন যে বিশ্ববিদ্যালয় শেষে কী ধরনের কাজে মনোযোগ দেবেন, এই ২০টি ক্যারিয়ারের তালিকা আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
১। শিক্ষক
ইংরেজি সাহিত্যের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে বেশ পরিচিত একটি চাকরি হচ্ছে শিক্ষকতা, এটা আমরা মোটামুটি সবাই জানি। একমাত্র উপায় না হলেও শিক্ষকতা হতে পারে আপনার পছন্দের ক্যারিয়ার। কারণ শিক্ষকতা একটি সম্মানজনক চাকরি, যা আপনাকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করার সুযোগ করে দেবে।
ইংরেজির গ্র্যাজুয়েট হিসেবে আপনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও পর্যায়ে শিক্ষকতা করার সুযোগ পাবেন। আপনার যদি বাচ্চাদের সাথে কাজ করতে ভালো লাগে তাহলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে কাজ করতে পারবেন। তা না চাইলে উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করতে পারবেন। এমনকি সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ হিসেবে যে কোনো বয়সের শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শেখানোর মাধ্যমেও আপনি একটি স্থায়ী ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে পারেন।
শিক্ষক হিসেবে চাকরি করতে চাইলে গ্র্যাজুয়েশনের পর শিক্ষকতা সংক্রান্ত কোর্সে মাস্টার্স করা বা শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে তৈরি করুন।
২। প্রফেসর এবং লেকচারার
আপনি যদি অ্যাকাডেমিক কাজ ও গবেষণা নিয়ে আগ্রহী হন, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা আপনার জন্য উপযোগী হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো প্রায় প্রতি বছরই নতুন লেকচারার অথবা কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রফেসরও নিয়োগ করে থাকে। একজন লেকচারার বা প্রফেসর হিসেবে আপনি শুধু শিক্ষকতাই নয়, বরং আপনার মনের মতো বিষয়ে নিয়মিত পড়াশোনা ও গবেষণা করতে পারবেন।
এ ধরনের পোস্টের জন্য সম্পর্কিত বিষয়ে মাস্টার্স আবশ্যক। তাই শুরুতে মাস্টার্স করার জন্য আপনার পছন্দের বিষয়টি বেছে নিন। এর পর সেই বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি খুঁজতে থাকুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার জন্য সাধারণত অনার্স ও মাস্টার্সে অনেক ভালো ফলাফল অর্জনের প্রয়োজন হয়। তবে আপনার সিজিপিএ যদি একটু কমও থাকে, একটি নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করা এবং শিক্ষকতায় আগ্রহ থাকলে লেকচারার অথবা প্রফেসর হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ে তোলা সম্ভব।
৩। কপিরাইটার
আরও অনেক স্কিলের মতো ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের লেখালেখির চর্চাও থাকে। আপনি যদি নিজের লেখা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী হন, তাহলে কোনো সংস্থায় কপিরাইটার হিসেবে যোগদানের চেষ্টা করতে পারেন।
কপিরাইটারদের কাজ সাধারণত আকর্ষণীয় কপি লেখা যা কোম্পানির পরিচিতি বাড়াতে সাহায্য করবে। তবে কোম্পানিভেদে কপিরাইটারদের দায়িত্বও বিভিন্ন রকম হতে পারে। ব্লগ পোস্ট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত কপি, ম্যাগাজিন কপি – যে কোনো কিছুই হতে পারে আপনার জব রেসপন্সিবিলিটির অংশ। একজন কপিরাইটার হিসেবে কিছু লেখার আগে আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনুসন্ধান করতে হবে, পরিসংখ্যান খুঁজে বের করতে হবে।
এ ধরনের চাকরির জন্য সাধারণত আলাদা কোনো ডিগ্রি বা কোর্সের প্রয়োজন হয় না। আপনি যদি ভালো লিখতে জানেন এবং কাজ করার আগ্রহ থাকে তাহলে একটু চেষ্টা করলেই কপিরাইটার হিসেবে চাকরি করার সুযোগ পেয়ে যাবেন।
৪। টেকনিক্যাল রাইটার
লিখতে ভালোবাসেন কিন্তু সৃজনশীলতার চেয়ে যৌক্তিক ধারার লেখা বেশি পছন্দ? তাহলে টেকনিক্যাল রাইটার হতে পারে আপনার জন্য একদম উপযুক্ত চাকরি।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা তাদের পণ্যের ম্যানুয়াল, পলিসি, প্রেস রিলিজ ইত্যাদি লেখার জন্য টেকনিক্যাল রাইটার নিয়োগ দিয়ে থাকে। বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং, আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োটেক এবং ফিন্যান্স সেক্টরে টেকনিক্যাল রাইটারের প্রয়োজনীয়তা বেশি। এ ধরনের চাকরিতে আপনার দায়িত্ব হবে টেকনিক্যাল বিষয়গুলোকে সহজ ও সাধারণ ভাষায় পাঠক ও পণ্য ব্যবহারকারীর কাছে উপস্থাপন করা।
কপিরাইটারদের মতো এই চাকরির জন্যও আপনার আলাদা কোনো অ্যাকাডেমিক যোগ্যতার প্রয়োজন নেই। তবে ভালো লেখার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কিছু প্রায়োগিক জ্ঞান থাকা সুবিধাজনক।
৫। প্যারালিগাল
প্যারালিগালদের কাজ হচ্ছে আইনজীবীদেরকে তাঁদের মামলা পরিচালনায় সাহায্য করা। আইনী তথ্য সন্ধান ও বিশ্লেষণ, কোর্টের ডকুমেন্ট তৈরি ও ফাইলিং করা, পূর্ববর্তী মামলা সম্পর্কে ঘাঁটাঘাঁটি করা ইত্যাদি প্যারালিগালদের কাজের অংশ। যে কোনো আইনী মামলার পেছনে তাঁদের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইংরেজি সাহিত্যের গ্র্যাজুয়েট হিসেবে এই ভাষার ওপর আপনার দখলকে কাজে লাগাতে পারেন প্যারালিগাল হিসেবে। পাশাপাশি আইনী ক্ষেত্রে যদি আগ্রহ থাকে তাহলে তো কথাই নেই!
৬। সাংবাদিক
গঠনমূলক সমালোচনা, সঠিক যোগাযোগ এবং লেখালেখি – ইংরেজি গ্র্যাজুয়েটদের অন্যতম তিনটি স্কিল। এর সবগুলোই একজন ভালো সাংবাদিক হিসেবে আপনাকে প্রতিষ্ঠিত করতে কার্যকরী।
প্রিন্ট রিপোর্টার, সংবাদ সংস্থার সম্প্রচারক, অনলাইন ম্যাগাজিনের স্টাফ অথবা সংবাদপত্রের কলামিস্ট – আগ্রহের ওপর নির্ভর করে যে কোনো ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন সাংবাদিক হিসেবে। কোনো বাড়তি ডিগ্রি ছাড়াই শুধুমাত্র ইংরেজি গ্র্যাজুয়েট হিসেবেও সাংবাদিকতায় এন্ট্রি লেভেল চাকরি বা ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাওয়া যায়। অথবা সাংবাদিকতায় মাস্টার্স করে সরাসরি আরও উপরের লেভেলের চাকরিতেও নিয়োগ পেয়ে যেতে পারেন।
৭। ওয়েব এডিটর এবং কন্টেন্ট ম্যানেজার
লেখালেখির পাশাপাশি এডিটিং এবং প্রুফরিডিংও ইংরেজি গ্র্যাজুয়েটদের অন্যতম একটি স্কিল। একজন ওয়েব এডিটর অথবা কন্টেন্ট ম্যানেজার হিসেবে কোম্পানির তৈরি কন্টেন্টগুলোর দায়িত্বও নিতে হবে আপনাকে। সেই কন্টেন্ট হতে পারে লিখিত অথবা ভিজ্যুয়াল।
আপনার দায়িত্বের মধ্যে থাকবে বিভিন্ন এসইও টুল ব্যবহার করে ওয়েবসাইটে মানুষের আনাগোণা বাড়ানো, কন্টেন্টের কার্যকারীতা পর্যবেক্ষণ করা এবং পরবর্তীতে কী ধরনের কন্টেন্ট তৈরি করা হবে তার পরিকল্পনা করা।
৮। গৃহশিক্ষক
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকতার বাইরেও গৃহশিক্ষক হিসেবে কাজ করে আপনি নিজের জ্ঞান ও শিক্ষাদানের আগ্রহকে কাজে লাগাতে পারেন। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের গৃহশিক্ষকের সাহায্য নেওয়ার সংখ্যা আমাদের দেশে অনেক। তবে গৃহশিক্ষক হিসেবে আপনি যে কাউকে তার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সহায়তা করতে পারেন।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষকতার সাথে গৃহশিক্ষকতার বড় পার্থক্য হচ্ছে আপনি নিজের পছন্দমতো সময়ে এবং নিজের পছন্দমতো উপায়ে শিক্ষকতা করতে পারবেন। অনলাইন টিউটরিংও ইদানীং বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। এছাড়া আপনি বাসায় গিয়ে অথবা কোনো কোচিং-এর সাথে যুক্ত হয়েও শিক্ষকতা করতে পারেন।
৯। কপি এডিটর
ইংরেজির শিক্ষার্থী হিসেবে খুব স্বাভাবিকভাবেই আপনার ইংরেজি ব্যাকরণের ওপর দখল থাকার কথা। এই যোগ্যতাকে কাজে লাগাতে আপনি কপি এডিটিং-এর কথা ভেবে দেখতে পারেন। বিভিন্ন ডকুমেন্টের প্রুফরিডিং, বানান, ব্যাকরণ ও অন্যান্য ভুল শুধরে দেওয়া এবং লেখাকে আরও পরিস্কার ও শুদ্ধ করতে সাহায্য করাই একজন কপি এডিটরের কাজ।
একজন কপি এডিটর হিসেবে আপনার কাজের অংশ হিসেবেই থাকবে পড়াশোনা এবং তথ্য অনুসন্ধান। কারণ এই কাজে প্রতিদিন আপনাকে অন্য কারও লেখা ডকুমেন্টের তথ্য যাচাই করতে হবে, পুনরাবৃত্তি বা অসামঞ্জস্যের মতো ভুলগুলো ধরতে হবে।
১০। প্রকাশক
প্রকাশনা সংস্থায় কাজ করার ইচ্ছা থাকলে আপনি সাহিত্যিকদের এজেন্ট, প্রডাকশন এডিটর অথবা প্রকাশক হিসেবে চাকরি করতে পারেন। একজন প্রকাশক হিসেবে আপনি পুরো সংস্থার সর্বোচ্চ পর্যায়ে কাজ করবেন এবং প্রকাশনার এডিটিং, ডিজাইন ও প্রডাকশনের সব কাজ তদারকি করবেন।
তবে শুরুতেই একজন প্রকাশক হিসেবে চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি নয়। এর জন্য আপনাকে অন্য কোনো পজিশন অথবা ইন্টার্ন হিসেবে প্রকাশনা সংস্থায় যোগদান করতে হবে। পরিশ্রম ও সংকল্পের সাথে কাজ করলে এক সময় অবশ্যই প্রকাশকের পর্যায়ে চাকরি করার সুযোগ আসবে।
১১। অভিধান লেখক
একজন অভিধান লেখকের দায়িত্ব হচ্ছে অভিধানে যোগ করার জন্য নতুন শব্দ খুঁজে বের করা এবং অভিধানের রক্ষণাবেক্ষণ করা। ভাষার বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পরিবর্তন। সময়ের সাথে প্রতিটি ভাষারই শব্দ ভাণ্ডারে পরিবর্তন আসে, নতুন শব্দ যোগ হয়, পুরনো শব্দের অর্থ পালটে যায়। একজন অভিধান লেখকের দায়িত্ব হচ্ছে এই শব্দগুলোর উৎস ও ব্যবহার যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা।
একজন অভিধান লেখক হিসেবে শব্দের অর্থকে সংজ্ঞায়িত করবেন যাতে করে অর্থটি হয় সঠিক ও যুগোপযোগী। অনুসন্ধান, এডিট করা এবং প্রুফরিড করা হবে আপনার দৈনন্দিন কাজের অংশ।
১২। এডিটরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট
একজন এডিটরিয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে আপনি গ্রন্থ প্রকাশনা, সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন, ডিজিটাল মিডিয়া সাইট এবং কর্পোরেট কোম্পানিসহ বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করতে পারবেন। ইন্ডাস্ট্রিভেদে ডকুমেন্টের ধরণ আলাদা হলেও সব জায়গায়ই আপনার দায়িত্ব মোটামুটি একরকমই থাকবে। বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য অনুসন্ধান, প্রুফরিডিং এবং এডিটরিয়ালের স্টাফকে তাঁদের কাজে সহায়তা করা হবে আপনার চাকরির দৈনন্দিন অংশ।
এটি মূলত একটি এন্ট্রি লেভেল চাকরি হলেও অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে আপনি ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে মূল্যবান অভিজ্ঞতা অর্জন করবেন যা পরবর্তীতে সেই ইন্ডাস্ট্রিতে আরও উচ্চ পর্যায়ের চাকরি পেতে সহায়তা করবে।
১৩। প্রশাসক
প্রশাসক হিসেবে কাজ করার জন্য চাই অনন্য সাংগঠনিক ও নেতৃত্ব জ্ঞান। পাশাপাশি প্রয়োজন সঠিক যোগাযোগ বজায় রাখার ক্ষমতা।
একজন প্রশাসক হিসেবে আপনার কাজের অংশ হিসেবে থাকবে ফোন ও ইমেইলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ বজায় রাখা, ক্লায়েন্ট ও সংস্থার অন্য সদস্যদের সাথে সংযোগ স্থাপন, প্রয়োজনে অ্যাপয়েন্টমেন্টের ব্যবস্থা করা এবং ডিপার্টমেন্টের আর্থিক পরিকল্পনা তদারকি করা।
১৪। শিক্ষানীতি বিশ্লেষক
শিক্ষাক্ষেত্রে কাজ করতে চাইলে শিক্ষকতার পরিবর্তে এই ক্যারিয়ারটিও আপনি বেছে নিতে পারেন। একজন শিক্ষানীতি বিশ্লেষক হিসেবে আপনার দায়িত্ব হবে শিক্ষা সংক্রান্ত বর্তমান নীতি, পাঠ্যক্রম ও সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করা এবং শিক্ষার্থীদের ওপর এই নীতিগুলোর প্রভাব অনুধাবন করা। বিশ্লেষণের ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন সুপারিশ করাও হবে আপনার কাজের অংশ।
একজন শিক্ষানীতি বিশ্লেষক হিসেবে আপনার কাজ ও পরামর্শ দেশের শিক্ষা মাধ্যমে বিরাট পরিবর্তন আনতে, এমনকি পাঠ্যক্রম পাল্টাতেও সক্ষম। তাই এই অবস্থানে চাকরি পাওয়ার আগে আপনাকে অবশ্যই কোনো বিদ্যালয়ে কাজ করে অথবা শিক্ষা বিষয়ে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।
১৫। পিআর ম্যানেজার
পিআর ম্যানেজারদের প্রধান কাজ হচ্ছে তাঁদের চাকরিদাতা সংস্থার একটি ইতিবাচক চিত্র গঠন। কনফারেন্স, ইন্টারভিউ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদির মাধ্যমে মানুষের সামনে সংস্থাটিকে যুগোপযোগী হিসেবে উপস্থাপন করা তাঁদের কাজের উদ্দেশ্য।
একজন পিআর ম্যানেজার হিসেবে আপনি এনজিও থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়, বিশাল কোনো করপোরেশন, এমনকি সরকারি সংস্থাতেও কাজ করতে পারবেন। এই ধরনের কাজের উপযোগী হতে চাই সৃজনশীলতা ও ভালো কমিউনিকেশন স্কিল।
১৬। প্রাতিষ্ঠানিক লাইব্রেরিয়ান
বেশিরভাগ ইংরেজি সাহিত্যের গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যেই বইয়ের প্রতি ভালোবাসা দেখা যায়। তাঁদের আদর্শ ক্যারিয়ার হতে হবে বইয়ের সাথে সম্পর্কিত।
লাইব্রেরিয়ানদের কথা শুনলে আমরা ভাবি তাঁদের একমাত্র কাজ বইয়ে ষ্ট্যাম্প লাগানো আর বইগুলো শেলফে গুছিয়ে রাখা। তবে বাস্তবে তাঁদের কাজ এতেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রাতিষ্ঠানিক লাইব্রেরিয়ানদের প্রায়ই বিভিন্ন গবেষণার কাজে সাহায্য করতে হয়। লাইব্রেরিতে বইয়ের সংগ্রহ বাড়ানো ও রক্ষণাবেক্ষণ করা, প্রতিষ্ঠানের কোর্সগুলো সাজাতে সহায়তা করা এবং লাইব্রেরির সম্পদগুলোকে গুছিয়ে রাখাও একজন প্রাতিষ্ঠানিক লাইব্রেরিয়ানের কাজের অংশ।
১৭। ফ্রিল্যান্স লেখক
মার্কেটিং ইমেইল থেকে শুরু করে বিখ্যাত কোনো বইয়ের সারাংশ – ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে যে কোনো অথবা সবটাই হতে পারে আপনার দৈনন্দিন কাজের অংশ।
আপনি যদি বৈচিত্র্য ভালোবাসেন অথবা কোন ক্ষেত্রে কাজ করবেন তা এখনও ঠিক করতে না পারেন, ফ্রিল্যান্স লেখক হতে পারে আপনার উপযুক্ত ক্যারিয়ার। কারণ এর মাধ্যমে আপনি মার্কেটিং, সাংবাদিকতা এবং অ্যাডভার্টাইসিং সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
১৮। অ্যাডভার্টাইজিং ম্যানেজার
ক্লায়েন্টের বিজ্ঞাপন ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা এবং প্রিন্ট, সামাজিক যোগাযোগ, টেলিভিশন ও অনলাইন অ্যাড মাধ্যমে ক্যাম্পেইনের তদারকি করা এই চাকরির অংশ। পাশাপাশি আপনি ব্র্যান্ডের প্রচারণা কৌশল নির্ধারণ, কোম্পানি কোন কন্টেন্ট প্রকাশ করবে তা ঠিক করা এবং পুরো একটি টিমের নেতৃত্ব দেওয়ারও সুযোগ পাবেন।
যদিও গ্র্যাজুয়েশনের পরেই সরাসরি এই চাকরিতে যোগদানের সুযোগ নেই। তবে সংশ্লিষ্ট ইন্ডাস্ট্রিতে অভিজ্ঞতা অর্জন করে আপনি অ্যাডভার্টাইসিং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার প্রস্তুতি নিতে পারেন।
১৯। অনুবাদক
ইংরেজির শিক্ষার্থী হিসেবে যেহেতু আপনি একাধিক ভাষায় পারদর্শী, বিভিন্ন লিখিত বা মৌখিক বস্তু অনুবাদের কাজ করাও আপনার পক্ষে সম্ভব।
বই, সিনেমার সাবটাইটেল, আর্টিকেল অথবা ভিডিও – যে কোনো কিছু অনুবাদ করতেই আপনার মতো দোভাষী ব্যক্তির সাহায্য প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই অনুবাদক হিসেবেও আপনি সুযোগ পাবেন বিচিত্র মাধ্যম নিয়ে কাজ করার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করার।
২০। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ম্যানেজার
আপনি কি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পর্কে অনেক কিছু জানেন? সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার বর্তমান যুগের সবচেয়ে উঠতি ক্যারিয়ারগুলোর একটি। প্রায় প্রতিটি কোম্পানি এখন তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপস্থিতি বাড়াতে আগ্রহী এবং তার জন্য তারা কাউকে না কাউকে নিয়োগ করছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ম্যানেজার হিসেবে আপনাকে চাকরিদাতার অনলাইন প্রোফাইলের দেখাশোনা তো করতে হবেই, পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইনগুলোর জন্য পরিকল্পনা করা, কন্টেন্ট তৈরিতে সহায়তা করা এবং অনলাইনে ফলোয়ারদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করাও হবে আপনার প্রতিদিনের কাজের অংশ।
এখনও যদি সিদ্ধান্ত না নিয়ে থাকেন ভবিষ্যতে কোন পথে যেতে চান, ভয় পাওয়া বা তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই। ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য অনেক বিকল্প পথ আছে আপনার সামনে। সময় নিয়ে নিজের পছন্দের ক্যারিয়ারটি বেছে নিন, প্রয়োজনে একাধিক ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করুন এবং যে বিষয়ে আপনি সবচেয়ে বেশি আগ্রহ বোধ করেন তাকেই আপনার স্থায়ী পেশা হিসেবে বেছে নিন।