মার্কেটিং-এর ওপর ডিগ্রি আপনাকে শুধু মার্কেটিং বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে সাহায্য করেনা, সেইসাথে আপনার সৃজনশীলতা, নেটওয়ার্কিং এবং রিসার্চ স্কিলকেও ধারালো করে তোলে। আপনার এই মূল্যবান স্কিলগুলোকে কাজে লাগিয়ে একটি নয়, বরং বেশ কয়েকটি ক্যারিয়ার অপশন আপনার সামনে চলে আসে। নিজের জন্য সঠিক প্রফেশনটি বেছে নেওয়ার আগে তাই সবগুলো অপশন যাচাই করে দেখা ভালো। এই আর্টিকেল থেকে এমনই ২০টি ক্যারিয়ার সম্পর্কে আপনি ধারনা পেতে পারবেন।
১. মার্কেট রিসার্চার
মার্কেটিং গ্র্যাজুয়েট হিসেবে যদি আপনার ডেটা অ্যানালাইসিসে বিশেষ আগ্রহ থেকে থাকে, তাহলে আপনি মার্কেট রিসার্চকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন।
মার্কেট রিসার্চাররা তাঁদের রিসার্চের দক্ষতাকে ব্যবহার করে ব্র্যান্ড বা প্রডাক্টের টার্গেট মার্কেট সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন। তারপর এই তথ্য বিশ্লেষণ করে ক্রেতাদের পছন্দ-অপছন্দ বোঝার চেষ্টা করেন এবং মার্কেটের নানান ট্রেন্ড খুঁজে বের করেন।
২. PR অফিসার
পাবলিক স্পিকিং-এ আগ্রহ? সংকট ব্যবস্থাপনার অভিজ্ঞতা আছে? পাবলিক রিলেশনে চাকরির কথা ভেবে দেখতে পারেন!
PR অফিসাররা তাঁদের পাবলিক স্পিকিং, লেখালেখি ও আলাপ-আলোচনার দক্ষতা ব্যবহার করে ব্যক্তি অথবা কোম্পানির মর্যাদা বাড়াতে সাহায্য করেন। নিজের মার্কেটিং স্কিল ব্যবহার করে আপনি বিভিন্নভাবে আপনার ক্লায়েন্টের ব্র্যান্ডিং, রেপুটেশন ও বক্তব্যের ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন।
৩. সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার
আজকালকার যুগে ব্র্যান্ডের মর্যাদা নির্ভর করে তাদের অনলাইন উপস্থিতির ওপর, বিশেষ করে ফেসবুক আর লিংকডইনের মতো যোগাযোগ মাধ্যমে। আপনার যদি সোশ্যাল মিডিয়ার দিকে বিশেষ আগ্রহ থাকে তাহলে সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট আপনার জন্য আদর্শ ক্যারিয়ার হতে পারে।
ব্র্যান্ডের উপস্থিতি ম্যানেজ ও উন্নত করা এবং সামাজিক মাধ্যমে মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট প্রচার করে কাস্টমার রিলেশনশিপের দায়িত্ব গ্রহণ করা এই কাজের অংশ। লেখালেখির দক্ষতা এবং ডিজাইনের ধারণা থাকাও এই ক্ষেত্রে কার্যকরী।
৪. ইভেন্ট ম্যানেজার
শক্তিশালী সাংগঠনিক জ্ঞান ও যোগাযোগ দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে সফল ক্যারিয়ার গড়তে পারেন সহজেই।
এই প্রফেশনালরা তাঁদের মার্কেটিং স্কিল ব্যবহার করে ব্র্যান্ডকে মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন, সম্ভাব্য ক্রেতাদের আকর্ষণ অর্জন করতে পারেন এবং সেলস জেনারেট করতে পারেন। তাঁদের দায়িত্ব হচ্ছে বিভিন্ন কনফারেন্স, প্রদর্শনী ও অন্যান্য অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা ও পরিচালনা করা।
৫. প্রডাক্ট ম্যানেজার
যেসব মার্কেটিং গ্র্যাজুয়েটরা এমন একটি ক্যারিয়ার চান যাতে তাঁদের সব স্কিলই কম-বেশি কাজে খাটানো হবে, তাঁদের জন্য প্রডাক্ট ম্যানেজমেন্ট একটি উপযুক্ত প্রফেশন। প্রডাক্ট তৈরি থেকে শুরু করে এর বিক্রি হওয়া পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ ম্যানেজ করাই প্রডাক্ট ম্যানেজারদের কাজ। যার অংশ হিসেবে থাকে মার্কেট রিসার্চ, বিজ্ঞাপন ও মিডিয়া পরিকল্পনা।
প্রডাক্ট ম্যানেজারদের চমৎকার অ্যানালিটিকাল স্কিলের পাশাপাশি থাকতে হয় সহজেই মানুষকে কোনো কিছু বোঝাতে পারার ক্ষমতা। ক্রেতাদের কাছে বাজেট ও অন্যান্য প্রস্তাবনা উত্থাপন করাও তাঁদের কাজের অংশ।
৬. মার্কেটিং ম্যানেজার
পূর্ববর্তী অভিজ্ঞতা ও চমৎকার লিডারশিপ স্কিল থাকলে আপনি মার্কেটিং ম্যানেজার প্রফেশনটিকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন।
মার্কেটিং ম্যানেজারের দায়িত্ব ব্র্যান্ডের সম্পূর্ণ ক্যাম্পেইনের দেখাশোনা করা এবং তাঁদের সৃজনশীল ও বিশ্লেষণী দক্ষতা ব্যবহার করে বাজেট নিয়ন্ত্রণ, কপি লেখা, মার্কেট রিসার্চ করা ও ক্রেতাদের আকর্ষণ করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা।
৭. মার্কেটিং অ্যাসিসটেন্ট
মার্কেটিং-এ ক্যারিয়ার শুরু করতে চমৎকার একটি উপায় হচ্ছে অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে কাজ করা। একজন অ্যাসিসটেন্ট হিসেবে কাজ করার মাধ্যমে আপনি অ্যাডভার্টাইসিং, মার্কেট রিসার্চ ও সেলসের বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন। যা পরবর্তীতে মার্কেটিং ক্ষেত্রে আপনার ক্যারিয়ারকে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক সাহায্য করবে।
৮. মিডিয়া প্ল্যানার
একজন মিডিয়া প্ল্যানার হিসেবে আপনার দায়িত্ব হবে ক্লায়েন্টের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সঠিক প্ল্যাটফর্মটি বেছে নেওয়া। সাধারণত অ্যাডভার্টাইজিং এজেন্সিগুলোতে এই পজিশনে নিয়োগ দেওয়া হয় এবং প্রেস, টেলিভিশন ও অন্যান্য মিডিয়ার সাথে কাজ করার মাধ্যমে একটি উপযুক্ত অ্যাডভার্টাইজিং স্ট্র্যাটেজি তৈরি করাই হয় মিডিয়া প্ল্যানারের কাজ।
৯. সেলস রিপ্রেজেন্টিটিভ
মার্কেটিং-এ অভিজ্ঞতার হাত ধরেই আসে সেলসে দক্ষতা।
শক্তিশালী যোগাযোগ দক্ষতা ও মার্কেটিং-এর জ্ঞান ব্যবহার করে আপনি সেলসের জন্য একটি দৃঢ় বক্তব্য তৈরি করতে পারবেন। একজন সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভের দায়িত্ব সম্ভাব্য ক্রেতাদের লক্ষ্য করে সেলস স্ট্র্যাটেজি তৈরি করা এবং সফলভাবে কোম্পানির প্রডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করতে পারা।
১০. মার্কেটিং কপিরাইটার
আপনি যদি আপনার মার্কেটিং-এর প্যাশনের পাশাপাশি সৃজনশীলতা ও লেখালেখির দক্ষতাকেও কাজে লাগাতে চান, তাহলে মার্কেটিং কপিরাইটার আপনার জন্য একদম সঠিক প্রফেশন।
এই প্রফেশনালদের কাজ নিজেদের মার্কেটিং স্কিল ব্যবহার করে অনলাইন ও অফলাইন বিজ্ঞাপনের জন্য স্লোগান, ভিডিও স্ক্রিপ্ট, এমনকি সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্ট ও অন্যান্য কন্টেন্ট লেখা।
১১. SEO বিশেষজ্ঞ
আপনার যদি ডিজিটাল মার্কেটিং-এ আগ্রহ ও সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশনের জ্ঞান থাকে, তাহলে SEO specialist হিসেবে ক্যারিয়ারের কথা ভাবছেন না কেন?
বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির কোম্পানি তাদের অনলাইন উপস্থিতি ধরে রাখতে এই প্রফেশনালদের নিয়োগ দিয়ে থাকে যাতে করে তাদের ওয়েবসাইটের র্যাংকিং বাড়ে ও সার্চ ইঞ্জিনে আরও সহজে সবার চোখে পড়া যায়। ব্যবহারকারীর মানসিকতা ও ব্র্যান্ডের বক্তব্যকে পরিকল্পিতভাবে উপস্থাপন এই ক্যারিয়ারের জন্য আবশ্যক।
১২. অ্যাডভার্টাইজিং ম্যানেজার
আগ্রহী মার্কেটাররা অ্যাডভার্টাজিং ক্ষেত্রেও কাজ করতে পারেন। ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতে চাইলে পরিকল্পনা করা, নেতৃত্ব দেওয়া, সৃজনশীলতা ও যোগাযোগ রক্ষা করার দক্ষতা থাকতে হবে। অ্যাডভার্টাইজিং ম্যানেজাররা বিজ্ঞাপনের পরিকল্পনা তৈরি ও তা পরিচালনা করেন, ক্লায়েন্ট ও টিমের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখেন এবং বাজেট নির্ধারণ করেন।
আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন থেকে শুরু করে দৃষ্টিনন্দন ব্যানার ও বিলবোর্ড তৈরির মাধ্যমে একজন অ্যাডভার্টাইজিং ম্যানেজার বেশিরভাগ সময় ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়ানোর কাজেই লেগে থাকেন।
১৩. ওয়েব কন্টেন্ট ম্যানেজার
আপনি যদি অনলাইন ক্ষেত্রে আপনার মার্কেটিং স্কিলকে কাজে লাগাতে চান, এটাই আপনার জন্য সঠিক ক্যারিয়ার।
একজন ওয়েব কন্টেন্ট ম্যানেজার হিসেবে আপনার দায়িত্ব হবে ওয়েবসাইটটি তার ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন সঠিকভাবে মেটাচ্ছে কিনা সেই দিকে দৃষ্টি রাখা। আপনার লেখালেখি ও টেকনিক্যাল জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কপিরাইটিং, ব্যবহারকারীদের আচরণ বিশ্লেষণ এবং বিভিন্ন ভিজ্যুয়াল দিক ঠিকঠাক রাখাই হবে আপনার কাজ।
১৪. ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ
ডিজিটাল মার্কেটিং-এ আগ্রহ থাকলে একজন বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজের সুযোগ খুঁজতে পারেন।
এই বহুল পরিচিত চাকরিটি মার্কেটিং প্রফেশনালদেরকে অনলাইন অ্যাডভার্টাইজিং ও ই-সেলস ক্ষেত্রে তাঁদের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ করে দেয়। SEO, PPC, কন্টেন্ট ম্যানেজমেন্ট ও ওয়েব ডিজাইন ব্যবহার করে ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞরা ব্র্যান্ডের অনলাইন উপস্থিতি নিশ্চিত করেন।
১৫. প্রমোশন ম্যানেজার
প্রমোশন ম্যানেজাররা বিভিন্ন মার্কেটিং প্রমোশন তৈরি ও পরিচালনা করেন। এই প্রমোশনগুলোর উদ্দেশ্য থাকে সংস্থার মর্যাদা ও আয় বাড়ানো। সৃজনশীলতা ও মার্কেটিং-এর জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে নানারকম বিশেষ অফার, আর্টিকেল অথবা ডিসপ্লে ম্যাটেরিয়ালের মতো প্রমোশন ইত্যাদি তৈরি করার মাধ্যমে তাঁরা ক্যাম্পেইনের উদ্দেশ্য অর্জনের চেষ্টা করেন।
সৃজনশীলতা ও ম্যানেজমেন্ট স্কিল সম্পন্ন মার্কেটিং গ্র্যাজুয়েটদের জন্য এটি একটি আদর্শ ক্যারিয়ার।
১৬. মোবাইল মার্কেটিং ম্যানেজার
প্রযুক্তিভিত্তিক ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে মোবাইল মার্কেটিং এর বিষয়ে ভেবে দেখুন। কেননা, বেশির ভাগ বিজ্ঞাপন আর প্রমোশন ক্রেতাদের স্মার্টফোনের মাধ্যমেই তাঁদের কাছে পৌঁছায়।
এই প্রফেশনের ম্যানেজাররা এমন সব মোবাইল মার্কেটিং ক্যাম্পেইন তৈরি করেন যা ক্রেতাদের একদম ঠিক সময়ে টার্গেট করে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যম হিসেবে SMS, মোবাইল অ্যাপ বা গেইমে ব্যানার অ্যাডভার্টাইজিং ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
১৭. কমিউনিটি ম্যানেজার
খুব ভালো যোগাযোগ দক্ষতা এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতাসম্পন্ন মার্কেটিং স্পেশালিস্টরা কমিউনিটি ম্যানেজারের পজিশনে কাজ করতে পারেন। এই ম্যানেজাররা সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে যোগাযোগ বজায় রাখার মাধ্যমে ব্র্যান্ডের চেহারা ও আওয়াজ হিসেবে কাজ করেন।
আকর্ষণীয় কন্টেন্টের ব্যবহার এবং ব্র্যান্ডের প্রডাক্ট ও সার্ভিস সম্পর্কে ক্রেতাদেরকে জানানোর মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের মার্কেটিং স্কিলকে কাজে লাগিয়ে থাকেন।
১৮. তহবিল সংগ্রহকারী/ফান্ডরেইসার (Fundraiser)
নন-প্রফিট সংস্থাগুলোতে সম্ভাব্য ডোনারদের আকর্ষণ অর্জনের চেষ্টা করাই এই প্রফেশনের কাজ। এর জন্য চাই প্রেজেন্টেশনে দক্ষতা ও মানবিক গুণাবলী। ফান্ডরেইসাররা সাধারণত মার্কেটিং-এর বিভিন্ন টেকনিক ব্যবহার করে প্রমোশনাল ইভেন্ট সংগঠন ও বিভিন্ন কোম্পানির স্পন্সরশিপ পাওয়ার চেষ্টা করে থাকেন।
১৯. চাকরি নিয়োগকারী (Recruiter)
এটি এমন একটি ক্যারিয়ার যার দিকে মার্কেটাররা সাধারণত আগ্রহী হন না। কিন্তু রিক্রুটারদেরও অনেক মার্কেটিং জ্ঞান থাকতে হয়।
একজন চাকরি নিয়োগদাতা হিসেবে আপনি সম্ভাব্য এমপ্লয়িদের ব্যাপারে রিসার্চ করবেন, তাঁদের সাথে যোগাযোগ করবেন এবং মার্কেটিং এর নানান পন্থা ব্যবহার করে তাদেরকে নিজের কোম্পানিতে নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন। স্বচ্ছ ও সহজভাবে যোগাযোগ রক্ষা করার দক্ষতা থাকলে এটা হতে পারে আপনার পারফেক্ট ক্যারিয়ার!
২০. ওয়েব ডিজাইনার
কপিরাইটারদের মতোই, ওয়েব ডিজাইনাররাও মার্কেটিং এবং সৃজনশীলতা ব্যবহার করে ব্র্যান্ডকে উপস্থাপন করেন। মার্কেট রিসার্চ, ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে জানা এবং ওয়েবসাইট ন্যাভিগেশন এই প্রফেশনালদের কাজের অংশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ প্রান্তে এসে সঠিক ক্যারিয়ারটি বেছে নেওয়া আসলে খুব একটা সহজ নয়। অনেক অনেক সম্ভাবনার ভিড়ে অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু একবার আপনার প্রকৃত প্রতিভার সন্ধান পেয়ে গেলে চাকরি খোঁজা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। আশা করি আমাদের এই ক্যারিয়ারের তালিকাটি সেই কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে আপনাকে অল্প হলেও সাহায্য করেছে।