আইন বিষয়ের গ্র্যাজুয়েটদের উপযুক্ত ১১টি ক্যারিয়ার

April 2, 2021 |
Views: 870

ডিটেকটিভ উপন্যাস পড়েই হোক বা Law and Order এর মতো কোনো সিরিজ দেখেই হোক – আপনার এই আর্টিকেলে ক্লিক করার কারণ খুব সম্ভবত আইনের ব্যাপারে আগ্রহ। আর আগ্রহ হওয়াটাও স্বাভাবিক, আইন বিষয়ের গ্র্যাজুয়েটদের সামনে থাকে চমৎকার কিছু ক্যারিয়ারের সুযোগ।

আইন সংক্রান্ত সবচেয়ে পরিচিত ক্যারিয়ারটি অবশ্যই অ্যাটর্নি। তবে আইন বিষয়ের গ্র্যাজুয়েট হিসেবে এছাড়াও বেশ কিছু ক্যারিয়ারের অপশন থাকবে আপনার সামনে। তেমনই ১১টি ক্যারিয়ারের তালিকা নিয়ে সাজানো এই আর্টিকেল।

১। আইনজীবী

আপনি যদি আইন বিষয়ের গ্র্যাজুয়েট হয়ে থাকেন, তাহলে এই ক্যারিয়ার নিয়ে আপনাকে বলার খুব বেশি কিছু নেই।

আইনের যে কোনো গ্র্যাজুয়েটের কাছে সবচেয়ে পরিচিত ক্যারিয়ার এটি। একজন আইনজীবী হিসেবে আপনি কর্পোরেট, ট্যাক্স ইত্যাদি যে কোনো বিষয়ে স্পেশালাইজেশন করতে পারেন অথবা সাধারণ প্র্যাকটিসও করতে পারেন – যা আপনাকে সব বিষয়েই অল্প অল্প কাজ করার সুযোগ দেবে।

২। প্যারালিগ্যাল

প্যারালিগ্যালরা আইন সংক্রান্ত কাজ করা হয় এমন যে কোনো অফিস, কর্পোরেশন বা সরকারি প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাঁদের মূল কাজ হলো কেইসের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ ও রিসার্চে আইনজীবীকে সাহায্য করা। যেহেতু এই কাজের জন্য আইন বিষয়ে প্রচুর ধারণা প্রয়োজন, তাই আইন নিয়ে পড়াশোনা থাকা এই পেশায় অনেক কার্যকরী।

মোট কথা, একজন প্যারালিগ্যাল হিসেবে আপনি আইন নিয়েই কাজ করবেন, কিন্তু আইনজীবীদের পেশায় থাকা অতিরিক্ত চাপগুলো আপনাকে নিতে হবে না।

৩। আইনী সেক্রেটারি

লিগ্যাল সেক্রেটারিদেরকে অনেকেই প্যারালিগ্যালদের সাথে গুলিয়ে ফেলে। কিন্তু তাঁদের দৈনন্দিন কাজ প্যারালিগ্যাল বা লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্টদের থেকে আলাদা।

সেক্রেটারিদের মূল কাজ হলো বিভিন্ন আইনী কাগজপত্র তৈরি ও ফাইল করা। এছাড়া অভিজ্ঞ ও প্রতিভাবান সেক্রেটারিদেরকে বিভিন্ন ম্যানেজমেন্ট ভিত্তিক দায়িত্ব পালন করতেও দেখা যায়।

৪। প্রভাষক

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা যে কোনো বিষয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি অন্যতম জনপ্রিয় পেশা। আইনও তা থেকে ভিন্ন নয়। LLB কোর্স আছে এমন যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আপনি প্রভাষক হিসেবে চাকরির চেষ্টা করতে পারেন। তবে এই চাকরির জন্য সাধারণত উচ্চতর শিক্ষা, অন্তত LLM ডিগ্রি থাকার প্রয়োজন হয়।

আইন বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের আইনের বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় শেখানোর পাশাপাশি পড়াশোনা ও রিসার্চের পেছনে সময় দিয়ে নিজের আইনী জ্ঞানকেও আরও গভীর করে তোলা সম্ভব। যারা সবসময় নতুন কিছু শিখতে ও শেখাতে পছন্দ করেন, শিক্ষকতা তাঁদের জন্য একদম উপযুক্ত একটি ক্যারিয়ার।

৫। ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট

দক্ষতা ও কার্যকারিতার সাথে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালানোয় ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্টদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। অর্থনীতির পরিবর্তন থেকে শুরু করে টিমের সদস্যদের ভুলত্রুটি পর্যন্ত যে কোনো সমস্যাই একটি কোম্পানির ম্যানেজমেন্টকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারে। ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্ট হিসেবে আপনার কাজ হবে এ ধরনের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজমেন্টে স্থিতিশীলতা ধরে রাখতে সাহায্য করা।

ভাবছেন, আপনার আইন বিষয়ক জ্ঞান তাহলে কোথায় কাজে লাগলো?

ম্যানেজমেন্ট কনসালটেন্টরা আইনী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাঠামো, নকশা, পদ্ধতি ও কৌশল তৈরিতে সাহায্য করে। কোনো আইনজীবী ও তাঁর অফিস দৈনন্দিন ভিত্তিতে যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয় সেগুলো বুঝতে ও সে অনুযায়ী অ্যাকাউন্টিং বা বুককিপিং-এর মতো বিভিন্ন ম্যানেজারিয়াল কাজ করতে আইন সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা থাকা আবশ্যক। এই পেশায় আপনি সরাসরি আইন নিয়ে কাজ না করলেও আইন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে পরোক্ষভাবে সাহায্য করতে পারবেন প্রতিনিয়তই।

৬। কমপ্লায়েন্স অফিসার

একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চালাতে বিভিন্ন ধরনের ও মাত্রার নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। কিছুদিন পর পরই আবার জারি হয় নতুন আইন। একটি কোম্পানির পক্ষে এতসব আইন ও নিয়মের দিকে খেয়াল রাখা প্রায়ই কঠিন হয়ে পড়ে। তখন তাদের দরকার হয় একজন কমপ্লায়েন্স অফিসার।

কমপ্লায়েন্স অফিসারের দায়িত্ব হচ্ছে একটি কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান এর জন্য প্রণীত সব আইন মেনে চলছে কিনা তা নিশ্চিত করা। এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ চাকরি, কেননা জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের জারি করা বিভিন্ন আইন সহ একটি কোম্পানির প্রায় হাজার হাজার নিয়মের দিকে খেয়াল রাখতে হয়। এবং এর যে কোনো একটি ঠিকমতো পালন করতে না পারা ব্যবসার জন্য বিশাল সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

৭। লাইব্রেরিয়ান

এই লাইব্রেরিয়ান কোনো সাধারণ লাইব্রেরিয়ান না। এই লাইব্রেরিয়ান হচ্ছেন আইন বিষয়ক গ্রন্থাগারের তত্ত্বাবধায়ক।

একটি আইনী গ্রন্থাগারে আইন বিষয়ক অসংখ্য বই তো থাকেই, পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন ডকুমেন্টও। এই লাইব্রেরিতে পুরনো কেইস সংক্রান্ত কাগজপত্র, বিচারকদের স্থাপিত নজির এবং জাতীয় আইন ও এর বিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কে সব তথ্য খুঁজে বের করা সম্ভব। শিক্ষার্থী, আইনজীবী, বিচারক – আইনের সাথে সম্পৃক্ত সবাই এই লাইব্রেরি ব্যবহার করেন।

একজন আইন বিষয়ক লাইব্রেরিয়ান হিসেবে আপনার দায়িত্ব হবে এই লাইব্রেরির দেখাশোনা করা। তথ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করা, কোথায় কোন বই বা ডকুমেন্ট আছে তার রেকর্ড রাখা এবং প্রয়োজনমত তা বের করতে সাহায্য করাও হবে আপনার কাজের অংশ। একজন লাইব্রেরিয়ান হিসেবে যে আপনি শুধু সরকারি লাইব্রেরিতেই কাজ করতে পারবেন তা কিন্তু না। বরং বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি কোনো আইন ফার্মেও লাইব্রেরিয়ান হিসেবে চাকরি নিয়ে তাঁদের বিভিন্ন কেইসের রিসার্চে সাহায্য করতে পারবেন।

৮। আইনী লেখক বা সম্পাদক

প্রথমত, আইনী লেখক হয় দুই ধরনের – সংবাদ লেখক এবং ব্রিফ লেখক। সংবাদ লেখকের কাজ হচ্ছে আইন সংক্রান্ত যে কোনো নতুন খবর নিয়ে রিপোর্ট লেখা। হত্যা মামলা, রাজনৈতিক স্ক্যান্ডাল বা কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের আইনী জটিলতা – এ সব কিছু নিয়েই তাঁরা রিপোর্ট তৈরি করে থাকেন। অপরদিকে, ব্রিফ লেখকের কাজ মূলত ক্লায়েন্টদের জন্য বিভিন্ন দলিল দস্তাবেজ লিখে দেওয়া।

দ্বিতীয়ত, লেখালেখির দক্ষতা ও আইনের জ্ঞান ব্যবহার করে আপনি এই দুই ধরনের লেখাই সম্পাদনা করতে পারেন। সম্পাদক হিসেবে আপনি কপি এডিটিং, তথ্যের নির্ভুলতা যাচাই ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের কাজ করার সুযোগ পাবেন।

৯। লবিস্ট

আমাদের দেশে লবিস্টদেরকে প্রায়ই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা হয়ে থাকে। রাজনীতিতে খারাপ যা কিছু আছে তার সবই যেন তাঁদের দোষ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে লবিস্টরা যা করেন তার খুব ছোট একটা অংশই শুধু আমরা দেখি।

প্রশ্ন হচ্ছে, লবিস্টরা তাহলে কী করেন? সোজা বাংলায়, তাঁদের কাজ হচ্ছে তদবির করা। তাঁরা আইন-প্রণেতা ও আইন নিয়ন্ত্রকদের সাথে কথা বলার মাধ্যমে নিজের ক্লায়েন্টের সুবিধার্থে পাবলিক পলিসিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেন। অনেকেই মনে করেন যে লবিস্টরা সবসময় উৎকোচ দেওয়ার মাধ্যমে তাঁদের কাজ সম্পন্ন করে থাকেন। কিন্তু আসলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁদের পরিকল্পনা থাকে এমন কাউকে খুঁজে বের করা যে ইতিমধ্যেই পলিসিতে পরিবর্তন আনতে আগ্রহী।

১০। নীতি বিশ্লেষক

আইনসভা সংস্থা, বড় কোনো কর্পোরেশন বা নন-প্রফিট অর্গানাইজেশনের একজন অবিচ্ছেদ্য অংশ হচ্ছেন নীতি বিশ্লেষক। পলিসি তৈরি, আইন-প্রণেতা ও ম্যানেজারদের পরামর্শ দেওয়া এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ব্রিফিং দেওয়া একজন নীতি বিশ্লেষকের কাজের অংশ। তাঁদের আরও একটি কাজ হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ এবং রিসার্চের মাধ্যমে জনমত বিশ্লেষণ ও প্রভাবিত করা।

১১। বৈদ্যুতিক ডকুমেন্ট সন্ধানকারী

বর্তমান যুগে ম্যাসেজ, ডকুমেন্ট, তথ্য, কন্ট্র্যাক্ট সবকিছুই কোনো না কোনো বৈদ্যুতিক মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়। তাই এইসব ডকুমেন্ট খুঁজে বের করাও হয়ে উঠেছে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। প্রয়োজন মেটাতে এখন আইন সংস্থাগুলো বৈদ্যুতিক ডকুমেন্ট সন্ধানকারী পদে নিয়মিত নিয়োগ দিচ্ছে।

এই প্রফেশনালদের কাজ কিন্তু শুধু ডকুমেন্ট খুঁজে বের করা নয়। বরং তাঁরা আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্যে এসব তথ্য শনাক্ত এবং সংরক্ষণও করে থাকেন। ফৌজদারি আদালতের মামলা থেকে শুরু করে সীমান্ত বিবাদ পর্যন্ত সবখানেই এখন ই-ডিসকভারি এজেন্টদের ভূমিকা অপরিহার্য।

এই একুশ শতকে এসেও আইন বিষয়ক ক্যারিয়ারগুলো অন্যতম ফলপ্রসূ ও উত্তেজনাময় পেশা। এই ক্যারিয়ারের প্রত্যেকটা দিন ডিটেকটিভ উপন্যাসের পাতা থেকে উঠে না আসলেও একটি পরিবারকে আইনী জটিলতা থেকে রক্ষা করা বা কারও জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আনন্দ আর উত্তেজনা অন্য অনেক ক্যারিয়ারকেই হার মানায়।

এই অনুভূতি উপভোগ করতে আপনাকে একজন অ্যাটর্নিই হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অনেক ভাবেই আপনি এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারেন, নিশ্চিত করতে পারেন ন্যায়বিচার।